Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

প্রথমবারের মতো ভোটে প্রিয়াঙ্কা, প্রার্থিতা নিয়ে যত আলোচনা

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৪, ০৩:৩৯ পিএম

প্রথমবারের মতো ভোটে প্রিয়াঙ্কা, প্রার্থিতা নিয়ে যত আলোচনা

ওয়েনাড ছেড়ে মা সোনিয়া গান্ধীর ছেড়ে দেওয়া আসন রায়বরেলী ধরে রাখছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ওয়েনাডে দাঁড়াচ্ছেন তার বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। সোমবার কংগ্রেসের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

যার অর্থ হলো শেষমেশ নির্বাচনে নেমে পড়লেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। মা সোনিয়া বা ভাই রাহুলের হয়ে নির্বাচনি প্রচারে কাজে বহু বছর ধরে যুক্ত থাকলেও বছর পাঁচেক আগে সক্রিয় রাজনীতিতে আসেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।

২০১৯ সালের জানুয়ারিতে কংগ্রেস তাকে সাধারণ সম্পাদকের পদ দিয়ে পূর্ব উত্তরপ্রদেশে দলের কাজকর্ম দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়। সেই তার সক্রিয় রাজনীতির শুরু। তবে কখনও ভোটে লড়েননি তিনি।

চলতি বছরের লোকসভা ভোটে রাহুল গান্ধী কেরালার ওয়েনাড় এবং উত্তরপ্রদেশের রায়বেরিলি মিলিয়ে দুটি আসন থেকেই নির্বাচনে লড়েছিলেন, জিতেওছিলেন।

নিয়ম মাফিক এর মধ্যে যে কোনো একটি আসন তাকে ছাড়তে হবে। কোন আসনটি তিনি নিজের কাছে রাখবেন এবং কোনটি থেকে সরে দাঁড়াবেন, সে নিয়ে বিস্তর জল্পনাও হয়েছিল।

শেষমেশ রায়বরেলির আসনটি নিজের কাছে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

সোমবার কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে জানিয়েছেন, লোকসভা নির্বাচনে রাহুলের ঝুলিতে থাকা অন্য আসন অর্থাৎ ওয়েনাড় থেকে উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলেছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।

এই সিদ্ধান্তের পর রাহুল গান্ধী সাংবাদিকদের জানান ওয়েনাড় আসনটি তিনি ছেড়ে দিচ্ছেন ঠিকই কিন্তু তার মানে সম্পর্কের ইতি নয়। সেখানে তার যাওয়া আসা লেগেই থাকবে। আর একইভাবে রায়বরেলির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছেন না প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।

বরং রাহুল গান্ধীর দাবি, ওয়েনাড় এবং রায়বেরিলি এবার দু-দুজন সাংসদ পেতে চলেছে।

সোমবার মল্লিকার্জুন খাড়গের বাসভবনে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর দল সিদ্ধান্ত নেয়, ওয়েনাড় থেকে উপনির্বাচনে লড়বেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।

মোদির মন্ত্রিসভায় নেই কোনো মুসলিম, যা বলছেন নাসিরুদ্দিন শাহ

প্রসঙ্গত, ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয়েছে গত ৪ জুন। ‘দ্য রিপ্রেজেন্টেশন অফ দ্য পিপল অ্যাক্ট’ অনুযায়ী, ভোটের ফল ঘোষণার ১৪ দিনের মধ্যে যে কোনো একটি আসন ছাড়তে হবে সেই প্রার্থীকে যিনি নির্বাচনে একাধিক আসনে জিতেছেন। সেই নিয়ম মেনে রাহুল গান্ধীকে তার ঝুলিতে থাকা দু’টি আসনের মধ্যে একটি ছাড়তে হতো।

এর আগে রাহুল গান্ধী জানিয়েছিলেন, রায়বেরিলি এবং ওয়েনাড়ের মধ্যে কোন আসনটি রাখবেন এবং কোনটি ছাড়বেন সে বিষয়ে নিজেই দ্বিধায় রয়েছেন তিনি।

সোমবার কেরালার ওয়েনাড় আসন থেকে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়ে ঘোষণা করেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। তিনি বলেন, কংগ্রেস দলের আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে রাহুল গান্ধী রায়বরেলি আসন থেকে সাংসদ হবেন। তিনি (রাহুল গান্ধী) ওয়েনাড় থেকেও ভোটে লড়েছিলেন, সেখানকার মানুষের ভালোবাসাও পেয়েছিলেন। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ওয়েনাড় থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

প্রিয়াঙ্কা গান্ধী জানিয়েছেন ওয়েনাড়ের বাসিন্দাদের রাহুল গান্ধীর অভাব অনুভব করতে দেবেন না তিনি।

তার কথায়, ওয়ানাড়ের প্রতিনিধিত্ব করতে পারলে আমি খুশি হব। রাহুল গান্ধীর অভাব বোধ করতে দেব না ওয়েনাড়ের জনতাকে। রাহুল গান্ধী বলেছেন, ওয়ানাড়ে তিনি আসবেন।

একইসঙ্গে সেখানকার মানুষের মন জয়ের বিষয়ে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। তার কথায়, আমিও সবাইকে খুশি রাখার জন্য কঠোর পরিশ্রম করব।

তবে রায়বেরিলিকে যে ভুলে যাবেন না, সে বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। সেখানকার সঙ্গে তার পুরনো সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন। সেই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে উঠে এসেছে আমেঠির প্রসঙ্গও।

তার কথায়, রায়বেরিলির সঙ্গে তো আমার অনেক পুরনো সম্পর্ক। ২০ বছর ধরে রায়বেরিলি আর আমেঠিতে কাজ করছি আমি। 

রাহুল গান্ধীর ঝুলিতে থাকা দু’টি লোকসভা আসনের মধ্যে একটিতে যে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে দাঁড় করানো হবে সে বিষয়ে অনুমান করেছিলেন অনেকেই।

এ বিষয়ে প্রবীণ সাংবাদিক হেমন্ত আত্রি বিবিসিকে বলেন, কংগ্রেসের এই সিদ্ধান্ত অপ্রত্যাশিত নয়। এবারের লোকসভা নির্বাচনের শুরু থেকেই এটা তাদের রণকৌশলের অংশ ছিল।

তিনি বলেন, প্রিয়াঙ্কা চাইলে আমেঠি থেকে তার নির্বাচনি রাজনীতি শুরু করতে পারতেন কিন্তু তা হয়নি কারণ কংগ্রেস পার্টি স্মৃতি ইরানিকে উপযুক্ত জবাব দিতে চেয়েছিল। আর সেই কারণেই আমেঠি আসনে কেএল শর্মাকে প্রার্থী হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল।

বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করে সাংবাদিক হেমন্ত অত্রি বলেন, কংগ্রেস যদি প্রিয়াঙ্কাকে (লোকসভা) ভোটে দাঁড় করাত, তাহলে দলে গুরুত্বপূর্ণ তারকা প্রচারকের অভাব দেখা দিত। আর অন্যদিকে, প্রিয়াঙ্কাকেও আমেঠির দিকে আরও বেশি নজর দিতে হত।

আরএসএস প্রধান মুখ খোলায় ‘অস্বস্তিতে’ বিজেপি!

রায়বেরিলির সঙ্গে নেহেরু-গান্ধী পরিবারের সম্পর্ক বহু পুরনো। রাহুল গান্ধীর দাদু ফিরোজ গান্ধী এই আসন থেকে ১৯৫২ সালের লোকসভা নির্বাচনে লড়েছিলেন।

১৯৬৭ সালে ইন্দিরা গান্ধী রায়বেরিলি আসন থেকে নির্বাচিত হয়েই সংসদে পৌঁছন। এরপর ১৯৭১ সালেও এই আসন থেকে লড়াই করেই ভোটে জিতেছিলেন তিনি। তবে ১৯৭৫ সালে আদালতের নির্দেশে তার নির্বাচন বাতিল হয়ে গিয়েছিল।

১৯৭৭ সালে জরুরি অবস্থার ২১ মাস পর আয়োজিত ভোটে হারের সম্মুখীন হতে হয়েছিল ইন্দিরা গান্ধীকে।

এরপর ১৯৮০ সালে উত্তরপ্রদেশের রায়বেরিলি এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মেদক (এখন তেলেঙ্গানার অন্তর্গত) আসন থেকে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। জিতেছিলেন দু’টি আসনেই।

সেই সময় রায়বেরিলি আসনটি ছেড়ে দেন তিনি। কংগ্রেসের অরুণ নেহেরু ওই আসন থেকে উপনির্বাচনের প্রার্থী হন এবং ভোটে জেতেন। ১৯৮৪ সালেও ওই আসন কংগ্রেসের দখলে ছিল। সে বছর রায়বেরিলি থেকে ভোটে জয় লাভ করেছিলেন অরুণ নেহেরু।

১৯৮৯ এবং ১৯৯১ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস নেত্রী শীলা কৌলের ঝুলিতে আসে রায়বেরিলির আসন। এরপর অবশ্য ছন্দ পতন হয়। ১৯৯৬ এবং ১৯৯৮ সালের ভোটে 'কংগ্রেসের গড়' নাম পরিচিত এই আসনে পদ্ম ফোটাতে পেরেছিলেন বিজেপির অশোক সিং।

১৯৯৯ সালে অবশ্য আবারও কংগ্রেসের ঝুলিতে ফিরে আসে রায়বেরিলির আসন। কংগ্রেস নেতা সতীশ শর্মা এই আসনে জয়ী হয়েছিলেন।

২০০৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ২০ বছর এই কেন্দ্র থেকে সাংসদ ছিলেন সোনিয়া গান্ধী। চলতি বছরে ভারতের সাধারণ নির্বাচনে রায়বেরিলি আসন থেকে রাহুল গান্ধীকে কংগ্রেস পার্টি প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করা হয় এবং তিনি প্রায় চার লাখ ভোটে জিতেছেন।

মোদির মন্ত্রিসভায় কে কোন দায়িত্ব পেলেন

তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা

 
Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম