চেচনিয়ায় অস্থিরতা সত্ত্বেও রমজান কাদিরভ কেন এত শক্তিশালী!
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৪, ০৩:২৮ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
চিচনিয়ায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রজাতন্ত্রের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানান রদবদল। বিভিন্ন স্থানে গণ অপহরণের ঘটনায় পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। তবে রমজান কাদিরভ প্রজাতন্ত্রে তার কর্তৃত্ববাদী শাসন অব্যাহত রেখেছেন, যা তার শক্তিমত্তাকে নির্দেশে করে।
চলতি বছর ৬ মে চেচেন বিরোধী ব্লগার তুমসো আব্দুরাখমানভ একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। ভিডিওতে দেখা গেছে, গ্রোজনিতে এক ব্যক্তি রমজান কাদিরভের ১৬ বছর বয়সী ছেলে আদম কাদিরভের প্রতীক সম্বলিত একটি গাড়িতে আগুন দিচ্ছে এবং রমজান কাদিরভের শাসনের প্রতিবাদ জানাচ্ছে। চেচেন কর্তৃপক্ষ প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিবাদকারী ওই অপরাধীকে খুঁজতে শুরু করে।
অগ্নিসংযোগের ঘটনায় স্টারে আতাগি ও শালি থেকে প্রায় নব্বই জনকে ইতোমধ্যে অপহরণ করা হয়েছে। অনেক ভুক্তভোগীকে ইতোমধ্যে ছেড়ে দেয়া হলেও অনেককেই অজ্ঞাত স্থানে হেফাজতে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। অপহৃতদের মধ্যে একজন আব্দুলাখ মাগোমাদভকে নির্যাতনের পর হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্য একজনের মৃত্যুও অপহরণের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে করছে রমজান কাদিরভের সমালোচকরা। কর্তৃপক্ষ সন্দেহভাজনদের আত্মীয়-স্বজনদেরও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। এ কৌশলের উদ্দেশ্য হলো ভবিষ্যতে কেউ যেন এমন প্রতিবাদের সাহস আর না দেখায়। রমজান কাদিরভ বিরোধী আন্দোলন ১-এডিএটির তথ্যানুসারে ২০২৪ সালের মে মাসে সবচেয়ে বেশি মানুষকে চেচনিয়ায় ক্ষমতাসীন বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে।
অনেক সমালোচক বলছেন চেচনিয়ার শাসক দল যে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে তা তাদের দুর্বলতারই বহিঃপ্রকাশ। কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতার কথা চিন্তা করা হয়। এ অবস্থায় শাসকরা বল প্রয়োগকে বৈধ বলে মনে করে। সুতরাং এমন ধারণা থেকেই কর্তৃপক্ষ যে কোন বিক্ষোভের উপর ক্র্যাকডাউন ও গুলি চালাচ্ছে, যা তাদের শাসন ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। সুতরাং ফায়ার র্স্টটারের পর কয়েক ডজন লোককে গণ অপহরণ কাদিরভের কাউন্টার ইনসার্জেন্সির ধারাবাহিক কৌশল হিসেবে দেখছেন তার সমালোচকরা।
২০২২ সালের ডিসেম্বরের ইরুস-মার্টানে ঘটনার সঙ্গে এটির মিল খুঁজে পেয়েছেন অনেকে। ওই সময়ও চেচেন জনগণের একটি বিরাট অংশ কাদিরভের ব্যক্তিগত মিলিশিয়া বাহিনী নিয়ে ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ করেছে প্রকাশ্যে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এর মাধ্যমে শাসক গোষ্ঠী এটিকে তাদের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করেছে। ফলশ্রুতিতে একটি ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে প্রতিবাদকারীদের ওপর দমন পীড়ন চালানো হয়। অনেককেই অপহরণ করা হয়, গুম করা হয়।
অন্যদিকে আদম কাদিরভের উপরে প্রতীকী হামলার ঘটনা পরোক্ষভাবে কাদিরভের শাসনকে চ্যালেঞ্জ করেছে। চেচনিয়র রাজনীতিতে আদমের আনুষ্ঠানিক কোন ভূমিকা না থাকলেও তার ছায়া এতটাই শক্তিশালী যে এটি প্রতিবাদকারীদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।
এর আগে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পদত্যাগ ও পুনঃনিয়োগের ঘটনায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। দেশটির কর্তৃত্ববাদী শক্তিকে পরাস্ত করে নতুন প্রজন্মের উত্থানের পথ পরিষ্কার করতেই এই পদক্ষেপ বলে মনে করছেন অনেকে। প্রজাতন্ত্রের পার্লামেন্টের স্পিকারের পদটি খালি রয়েছে, প্রবীণ কর্মকর্তা শইদ ঝামালদায়েভ অস্থায়ীভেবে এ দায়িত্ব পালন করছেন। প্রশাসনের রদবদল এখনো স্থিতিশীল হয়নি। সাবেক স্পিকার মাগোমেদ দাউদভ এবং মুসলিম খুচিয়েভের মধ্যে টানাপেড়েন আরও স্পষ্ট হয়েছে।
কুচিয়েভ এখন রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিনের অফিসে উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দিয়েছেন। তিনি কাদিরভের আরেকজন অনুগত, অভিজ্ঞ এজেন্টকে ফেডারেল মন্ত্রণালয়ে পদোন্নতি দেন। রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সামরিক-রাজনৈতিক অধিদপ্তরের উপ-প্রধান আপ্তি আলাদিনভ এবং জরুরি পরিষেবা মন্ত্রীর উপদেষ্টা ড্যানিল মার্টিনভ খুচিয়েভ এবং দাউদভের পুনঃনিয়োগ নতুন প্রজন্মের জন্য চেচনিয়ায় তাদের উত্থান অব্যাহত রাখার পথ পরিষ্কার করে। কাদিরভের জ্যেষ্ঠ পুত্র আখমত শারীরিক সংস্কৃতি ও ক্রীড়া মন্ত্রী হয়েছিলেন। তবে বর্তমানে যুব রাজনীতি মন্ত্রী হিসাবে তার জায়গায় রমজান কাদিরভের সবচেয়ে পুরানো বন্ধুর ছেলেকে স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। অবশেষে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পুত্র তেমিরলান খুচিয়েভ শিল্প ও জ্বালানিমন্ত্রী হয়েছেন।
কাদিরভ প্রশাসনে এমন রদবদলকে বিস্ময় হিসেবেই দেখছেন অনেকে। সাম্প্রতিক সময়ে পুতিনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের চলমান শুদ্ধি অভিযানের সঙ্গে এটি মিলে যাওয়ায় অনেকেই এটিকে বিস্ময় হিসেবে দেখছেন। প্রজাতন্ত্রে ক্ষমতার রদবলল নতুন কিছু নয়। তবে আকস্মিক এ পরিবর্তনে অবাক হয়েছে চেচনিয়ার বর্তমান শাসক গোষ্ঠীর সমালোচকরা।
সমালোচকদের মতে কোন কারণ ছাড়াই শাসনব্যবস্থায় এমন পরিবর্তন মোটেই স্বাভাবিক নয়। তবে আলাউদিনভের পদোন্নতি এবং ক্রেমলিনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে শুদ্ধি অভিযানের প্রেক্ষাপট ও এমন পরিবর্তনের ফলে কাদিরভের শাসন ক্ষমতা আরো সুসংহত হবে। তার শক্তির উৎসকে আরো জোরালো করবে।
প্রশাসনে ক্ষমতার রদবল একটি চলমান প্রক্রিয়া। ক্রেমলিন প্রশাসনে যে পরিবর্তন দেখা গেছে তাতে রমজান কাদিরভের পরিবর্তিত মন্ত্রীসভায় কোন প্রভাব ফেলবেনা বলেই মনে করছেন অনেকে। চলতি বছর ডিসেম্বরেই রমজান কাদিরভের দ্বিতীয় পুত্র আলি কাদিরভ প্রাপ্ত বয়স্ক হবেন। তখন কাদিরভ প্রশাসনে আরেকটি পরিবর্তন দেখা যাবে। তবে বাস্তবতা হলো নানা করনে অনেকে চেচনিয়াকে অস্তিতিশীল দেখতে চাইলেও কাদিরভ সরকার এখনো যথেষ্ট শক্তিশালীই আছে। আপাতদৃষ্টিতে যাই হোক না কেন, গণ অপহরণ বা কর্মীদের পদক্ষেপগুলি সত্যিকার অর্থে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে না। তবে, যদি প্রতিরোধের আরো ঘটনা আরো বেশি ঘটে তবে আরো বেশি লোককে শাসনের উপর চাপের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলতে অনুপ্রাণিত করতে পারে।
সূত্র: মস্কো টাইমস।