ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির প্রথম এবং দ্বিতীয় মেয়াদের সরকার ভোটের ফলাফলের পর যথাক্রমে ১০ ও সাত দিনের মধ্যে শপথ নিয়েছিল। এবার বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায়, দলটির শীর্ষ নেতৃত্বকে মন্ত্রী পদের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য মিত্রদের সঙ্গে বিশেষ করে চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপি এবং নিতীশ কুমারের জেডিইউয়ের সঙ্গে বেশ কিছু আলোচনা করতে হয়।
তারপরও এবার ভোটের ফল প্রকাশের মাত্র চার দিনের মাথায় রোববার ৭২ মন্ত্রীর পূর্ণ মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন মোদি। তবে এখনো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রয়ে গেছে, সেটি হচ্ছে- কে পাচ্ছেন লোকসভার স্পিকার পদ?
ভারতীয় গণমাধ্যমের একাধিক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এবারের নির্বাচনে কিং-মেকার হিসাবে আবির্ভুত নাইডু ও নিতীশ উভয়েই গুরুত্বপূর্ণ এই পদটির দিকে তাকিয়ে। তবে বিজেপি সূত্রে জানা গেছে, তারা তা হস্তান্তর করতে আগ্রহী নয়।
কিভাবে স্পিকার নির্বাচিত হয়
ভারতের সংবিধান অনুসারে, নতুন লোকসভার প্রথম বৈঠকের ঠিক আগে স্পিকারের পদটি শূন্য হয়ে যায়। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত একজন অস্থায়ী স্পিকার নতুন সংসদ সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান। পরবর্তীতে সাধারণ সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে লোকসভার স্পিকার নির্বাচিত হন।
লোকসভার স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার কোনো নির্দিষ্ট মাপকাঠি না থাকলেও, সংবিধান এবং সংসদীয় বিধিগুলো বুঝতে পারার একটা সুবিধা আছে। গত দুটি লোকসভায় যেখানে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল- ওই দুবার যথাক্রমে সুমিত্রা মহাজন এবং ওম বিড়লা স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
লোকসভার স্পিকারের পদটি আসলে বেশ জটিল। যিনি গোটা হাউস পরিচালনা করেন, সেই স্পিকারের পদটি নির্দলীয় বলে মনে করা হয়। তবে যিনি পদটি অর্জন করেন, তিনি একটি নির্দিষ্ট দলের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরই মর্যাদাপূর্ণ এই ভূমিকা অর্জন করতে পারেন।
কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা এন সঞ্জীব রেড্ডি চতুর্থ লোকসভার স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার পর দল থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। অন্যদের মধ্যে পিএ সাংমা, সোমনাথ চ্যাটার্জি এবং মীরা কুমার অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে দল থেকে পদত্যাগ করেননি। তবে তারা যে গোটা হাউসের অন্তর্গত এবং নির্দিষ্ট কোনো দলের নয় সেটি নিশ্চিত করে গেছেন।
২০০৮ সালে ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের সময় নির্দলীয় অবস্থানের জন্য সোমনাথ চ্যাটার্জিকে তার দল (সিপিএম) বহিষ্কার করে।
যে কারণে স্পিকারে নজর এনডিএ মিত্রদের
এনডিএ জোটের দুই নেতা এন চন্দ্রবাবু নাইডু এবং নিতীশ কুমার রাজনৈতিকভাবে খুবই অভিজ্ঞ এবং নিজেদের ‘ব্যাকআপ’ হিসেবেই তারা স্পিকার পদটি চান৷এই পদটি নিয়েই গত কয়েক বছরে ক্ষমতাসীন দলগুলোর মধ্যে বিদ্রোহের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। যা দলগুলোকে বিভক্ত করে দেয় এবং এমনকি সরকার পতনের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। এ ধরনের ক্ষেত্রে দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর হয় এবং এই আইনটি হাউসের স্পিকারকে একটি শক্তিশালী অবস্থান দেয়।
আইনে বলা হয়েছে, ‘দলত্যাগের কারণে সংসদ সদস্যদের অযোগ্যতা সংক্রান্ত মামলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে হাউসের চেয়ারম্যান বা স্পিকারের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা রয়েছে।’
তাছাড়া অতীতে বিজেপির বিরুদ্ধে জেডিইউ ভাঙার চেষ্টার অভিযোগ তুলেছেন নিতীশ কুমার। আর এ কারণেই কিং-মেকাররা বিদ্রোহ জেগে উঠতে দিতে চান না এবং এ ধরনের কোনো কৌশলের বিরুদ্ধে ঢালস্বরূপ তারা স্পিকারের পদটি চাচ্ছেন। সূত্র: এনডিটিভি।