একগুচ্ছ চাহিদা নিতীশ-নাইডুর, কী করবেন মোদি?
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২৪, ০৮:০৭ পিএম
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে এসেই বিজেপিকে সমর্থনের বিনিময়ে নরেন্দ্র মোদির কাছে একগুচ্ছ দাবি জানিয়ে রাখলেন এনডিএ জোটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই শরিক- নিতীশ কুমার ও চন্দ্রবাবু নাইডু। নিজ রাজ্যের জন্য বিশেষ প্যাকেজের পাশাপাশি নিতীশ তার দলের জন্য চারটি পূর্ণমন্ত্রী ও একটি প্রতিমন্ত্রী পদ চেয়েছেন। কম যাননি চন্দ্রবাবু নাইডুও- তিনটি পূর্ণমন্ত্রী ও দুটি প্রতিমন্ত্রীর পদ দাবি করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, স্পিকার পদও চাই চন্দ্রবাবুর।
বিজেপির সমস্যা আরো বাড়িয়ে বিহারের চিরাগ পাসোয়ানের এলজেপি, জিতনরাম মাঁঝির হাম, উত্তরপ্রদেশের আপনা দল, মহারাষ্ট্রের একনাথ শিন্ধের নেতৃত্বাধীন শিবসেনাও নিজ নিজ প্রাপ্য বুঝে নিতে প্রস্তুতি নিয়েছে। লক্ষ্য বিজেপিকে চাপে রেখে বেশি সংখ্যক মন্ত্রিত্ব আদায় করে নেওয়া।
ভোটের আগে নিতীশের সঙ্গে বিজেপির যে সমঝোতা হয়েছিল, তাতে এনডিএ ক্ষমতায় এলে তাকে তিনটি পূর্ণমন্ত্রীর পদ দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি বুঝে সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে হাঁসফাঁস করা বিজেপির কাছে এখন চারটি পূর্ণমন্ত্রীর পদ চেয়েছেন নিতীশ।
ভারতীয় গণমাধ্যমসূত্রে জানা যায়, মূলত পরিকাঠামো সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়গুলোর দিকেই নজর নিতীশের। যার মধ্যে রয়েছে রেল, গ্রামোন্নয়ন, পানি সম্পদের মতো মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, বিহারে বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের পাশাপাশি ২০২৩ সালে আর্থ-সামাজিক সমীক্ষার পরে রাজ্যের প্রায় ৯৫ লাখ পিছিয়ে থাকা পরিবারকে দু'লাখ করে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার ঘোষণা দেন মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার। আগামী বছর বিহারে নির্বাচন। তাই পাঁচ বছরের ওই প্রকল্পে কেন্দ্র যাতে চলতি অর্থবছরে নিজেদের অংশের টাকা বাড়ায়, সেই দাবিও জানিয়েছেন নিতীশ।
অন্যদিকে চন্দ্রবাবুর দাবি- তিনটি পূর্ণমন্ত্রী ও দুটি প্রতিমন্ত্রী পদ। নিতীশের মতোই পানি সম্পদ ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রণালয়ে নিজ দলের সংসদ সদস্যকে দেখতে চাইছেন চন্দ্রবাবু। তালিকায় রয়েছে সড়ক পরিবহণ মন্ত্রণালয়ও। এছাড়া অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে তেলঙ্গানা হওয়ায় রাজ্যের আর্থিক চাপ সামলাতে নাইডু বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের দাবি জানিয়ে আসছিলেন প্রায় এক দশক ধরে।
ভারতীয় গণমাধ্যমসূত্রে জানা যায়, এই মুহূর্তে অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের ঘাড়ে রয়েছে সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার দেনা। যা মেটাতে বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের দাবি জানিয়েছেন নাইডু।
এছাড়া ছোট দলগুলোর মধ্যে- বিহারে চিরাগ পাসোয়ানের এলজেপি পেয়েছে ৫টি আসন। তাদের দাবি, একটি পূর্ণ মন্ত্রী ও একটি প্রতিমন্ত্রী পদ। একই রাজ্যে একটি আসন পেয়েছে জিতনরাম মাঁঝির হাম। তাদেরও দাবি, একটি পূর্ণমন্ত্রীর পদ।
এদিকে মহারাষ্ট্রে সাতটি আসন পেয়েছে একনাথ শিন্ধের শিবসেনা। তারাও চায় একজন পূর্ণ মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী।
এছাড়াও মন্ত্রিত্ব পেতে মুখিয়ে আছেন উত্তরপ্রদেশের আরএলডি দলের জয়ন্ত চৌধুরি, আপনা দলের অনুপ্রিয়া প্যাটেল, জেডিএসের এইচডি কুমারস্বামীরাও।
অতীতে মোদি সরকারের যখন একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল, এই সব ছোট দলকে তখন গুরুত্ব দিতেই দেখা যায়নি বিজেপিকে। পরিস্থিতির কারণে এখন ছোট দলের দাবি মানা ছাড়া বিকল্প পথ নেই বলে মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
ওইসব দাবি না মানা হলে মোদি সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর ভয় রয়েছে। যদিও বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘নিতীশ বা নাইডুর একজনও যদি জোট থেকে বেরিয়ে যান, তাহলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর আশঙ্কা নেই। তবে দু'জনই যদি এনডিএ ত্যাগ করেন, তখন সমস্যা তৈরি হবে।"
তবে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, একনায়কের ধাঁচে প্রথমে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এবং পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১০ বছর দেশ চালানোর পর, এখন জোটের এমন মধুর সমস্যা কী সামলাতে পারবেন নরেন্দ্র মোদি? নাকি নিতীশ-নাইডুদের দাবির চাপের কাছে নতি স্বীকার করবেন?
এদিকে রোববারই তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। ইতোমধ্যে জোটের নেতারা তাকেই প্রধান নেতা হিসেবে সমর্থনও দিয়েছে। তবে তাদের দাবি-দাওয়াগুলো না মানলে যে মোদি নির্ঘাত বিপদে পড়বেন- তা বলার অপেক্ষা রাখছে না।
তাই নিতীশ-নাইডুদের মোদি ঠিক কিভাবে সামলান- সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।