বিখ্যাত ফরাসি শিল্পী বেন ৮৮ বছর বয়সে মারা গেছেন। স্ত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুর পরপরই তিনি তার নিজের জীবনও কেড়ে নিয়েছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সিএনএন। পরিবারের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতিতে বেন ও তার স্ত্রীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
বুধবার ওই বিবৃতিতে জানানো হয়, বেনের স্ত্রী অ্যানি ভাটিয়ার সেদিন ভোর ৩টার দিকে স্ট্রোক করে মারা যান। এ ঘটনায় মুষড়ে পড়েছিলেন বেন। স্ত্রীকে ছাড়া জীবনকে উপলব্ধি করতে অক্ষম ছিলেন তিনি। তাই দক্ষিণ ফ্রান্সে অবস্থিত নিজেদের বাসভবনে অ্যানির মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নিজের জীবনের ইতি টানার হৃদয় বিদারক সিদ্ধান্ত নেন ফরাসি শিল্পী।
বেনের পারিবারিক গ্যালারির জন্য নিবেদিত একটি ফেসবুক পেইজে ওই বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। বেন ও অ্যানির মধ্যে গভীর আত্মিক বন্ধনের কথা প্রকাশ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রতিভাবানেরা কখনোই একা থাকে না।
সিএনএন জানায়, বেন তথা বেঞ্জামিন ভাটিয়ার ১৯৩৫ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। অ্যানির সঙ্গে প্রায় ৬০ বছরের দাম্পত্য জীবন ছিল তার। আধুনিক শিল্পে স্বতন্ত্র শৈলীতে কালো পটভূমির ওপর তার শিশুসুলভ আনাড়ি লেখায় বিভিন্ন স্লোগান বিশ্বজুড়ে শিল্প সমঝদার ব্যক্তিদের বিমোহিত করেছিল। নিজের বিখ্যাত শৈল্পিক প্রচেষ্টার বাইরে পারফরমেটিভ শিল্পের জন্য স্বীকৃত ছিলেন তিনি।
ইতালি, সুইজারল্যান্ড, তুরস্ক ও মিসরে শৈশব কেটেছে বেনের। পরে ১৯৪৯ সালে ফ্রান্সের নিস শহরে বসবাস শুরু করেন। বাকি জীবন তিনি এ শহরেই কাটিয়েছেন। তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিত শিল্পী। ১৯৫০-এর দশকের শেষ দিকে তার সৃজনশীল যাত্রা শুরু হয়েছিল। নিস শহরে তিনি একটি স্টোর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই স্টোর শুধু শিল্প প্রদর্শনীর স্থান হিসেবেই নয়, শৈল্পিক সহযোগিতার নানা কার্যক্রম এবং বক্তৃতার কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত ছিল।
১৯৬০-এর দশকে ফ্লাক্সাস শিল্প আন্দোলনের আলোকবর্তিকা হিসেবে বিবেচনা করা হয় বেনকে। শিল্পের জন্য একটি কৌতুকপূর্ণ এবং পরীক্ষামূলক পদ্ধতি গ্রহণ করেছিলেন তিনি।
বেনের মৃত্যুর খবরটি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা শিল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যথিত করেছে। ফরাসি প্রেসিডেন্টের বাসভবন এলিসি প্রাসাদ থেকেও তার মৃত্যুতে শোক বার্তা প্রকাশিত হয়েছে। এই বার্তায় তাকে ফ্রান্সের অন্যতম জনপ্রিয় শিল্পী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
ফ্রান্সের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে নিউইয়র্কের মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্ট থেকে শুরু করে সিডনির নিউ সাউথ ওয়েলসের আর্ট গ্যালারিও বেনের হস্তাক্ষর শিল্প দ্বারা সজ্জিত হয়েছে।