ছবি: সংগৃহীত
শেষ মুহূর্তে বিজেপিকে বাজিমাত করে সরকার গঠন করতে চায় বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার একাংশ। অন্তত সরকার গঠনের সব সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে চায় তারা। বিশেষ করে তৃণমূল কংগ্রেস, শিব সেনার উদ্ধব ঠাকরের একাংশ এবং আম আদমি পার্টির একাংশ এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই লক্ষ্যে দলগুলোর নেতারা ইন্ডিয়া জোটের বাকি নেতাদের পরামর্শ দিয়েছেন চন্দ্রবাবু নাইড়ু ও নিতীশ কুমারসহ যাদের প্রয়োজন তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। তবে ইন্ডিয়া জোট বর্তমানে ধীর চলো নীতিতে আছে। জোটের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুসারে, ‘তারা ঝোপ বুঝে কোপ দিতে চায়।’ কিন্তু জোটের একাংশ সেটি মানতে নারাজ।
সূত্র জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচনের ফলাফলের দিনই উত্তর প্রদেশে সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া দল সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদবের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তাকে অন্ধ্রপ্রদেশের তেলেগু দেশাম পার্টির (টিডিপি) প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছেন।
কংগ্রেসের সঙ্গ ছাড়ল কেজরিওয়ালের দল
পাশাপাশি মমতা বিহারের জনতা দল ইউনাইটেডের প্রধান নিতীশ কুমারের সঙ্গেও আলাপ করতে বলেছেন অখিলেশ যাদবকে। এ দুই নেতার সঙ্গে অখিলেশ যাদবের প্রয়াত বাবা মুলায়ম সিং যাদবের আন্তরিক সম্পর্ক ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধের পর বৃহস্পতিবার তৃণমূলে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের আরেক নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন অখিলেশ যাদবের সঙ্গে দিল্লিতে সাক্ষাৎ করেছেন।
অপর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তৃণমূল কংগ্রেসের মতো একই ধরনের মনোভাব পোষণ করে দিল্লিতে ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টির একটি বড় অংশ। দলটি মনে করে, ক্ষমতার মসনদে পৌঁছার যত পথ আছে, তার সবগুলোর সম্ভাবনা যাচাই করে দেখা উচিত। বৃহস্পতিবার আম আদমি পার্টির নেতা রাঘব চাড্ডাও অভিষেকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। পরে এ দুই নেতা শিব সেনার (উদ্ধব ঠাকরে) নেতা সঞ্জয় রাউতের বাসায়ও যান।
বিষয়টি সেখানেই থেমে থাকেনি। সঞ্জয় রাউতের সঙ্গে সাক্ষাতের পর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও ডেরেক ও’ব্রায়েন মুম্বাইয়ের উদ্দেশে রওনা হন। সেখানে তারা শিব সেনার প্রধান উদ্ধব ঠাকরে ও তার ছেলে আদিত্য ঠাকরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর অখিলেশ যাদবও প্রায় একই সুরে কথা বলেছেন। তার মতে, গণতন্ত্রে প্রত্যাশার পারদ সব সময়ই চড়তে থাকা উচিত। তিনি বলেন, ‘জনগণকে খুশি করার জন্য নাকি সরকার গঠিত হচ্ছে; খুশি তো অন্য কেউও করতে পারে, না কি?’
তিনি আরও বলেন, ‘গণতন্ত্রে যখন ভোট গণনা শেষ হয়...তার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাশাও শেষ হওয়া উচিত নয়। আশা এবং প্রত্যাশা সব সময়ই জারি রাখা উচিত।’ যাদবের কথায় সরকার গঠনের তাড়না থাকলেও তার দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তবে অখিলেশ যাদব নিজেও মনে করেন না যে, নাইড়ু বা নিতীশ কেউ শিগগির পক্ষ পরিবর্তন করবেন।
তবে জোটের সবচেয়ে বড় শরিক ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবার সতর্কভাবে খেলতে চায়। কারণ, জোটগতভাবেও ইন্ডিয়া সরকার গঠনের মতো অবস্থানে নেই। বাম নেতারাও মনে করেন, এই মুহূর্তে তড়িঘড়ি করে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার গঠনের চেষ্টা করলে তার ফল উল্টো হতে পারে।
কংগ্রেসের চিন্তা হলো—নিতীশ ও নাইড়ু বিজেপির সঙ্গে গিয়েছেন, তা যাক; কিন্তু তাদের জন্য ইন্ডিয়া জোটের দরজা সব সময় খোলা রাখা উচিত। এ ধরনের মনোভাব প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদির বিজেপি ১০ বছর সরকার চালিয়েছে। তার পরও তিনি এবং তার দল প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। সেটাই মূলত শুরু, আমরা এখান থেকেই যাত্রা শুরু করব।’
তৃণমূলের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিজেপি থেকে নির্বাচিত তিন লোকসভা সদস্য মমতার সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখছেন। অন্যদিকে, দুই স্বতন্ত্র লোকসভা সদস্য, যারা কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন—রাজেশ রঞ্জন ওরফে পাপ্পু যাদব, যিনি বিহারের পূর্ণিয়া থেকে জয়ী হয়েছেন এবং বিশাল পাটিল, যিনি মহারাষ্ট্রের সাংলি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন তারা কংগ্রেসকে সমর্থন করতে প্রস্তুত।
তৃণমূলের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেছেন, ‘শুরুর বিষয়টি হলো, অনেক দিন পর একটি অবিজেপি সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে। এরপর অনেক কিছুই ঘটতে পারে।’
তিনি আরও জানান, পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, এখন বামপন্থীরা চাইলেও আর ইন্ডিয়া জোটের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারবে না।