বিশ্বের বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে মাসব্যাপী নির্বাচনি যজ্ঞ শেষ হয়েছে। আজ ফল ঘোষণার পালা। ফল নির্ধারণ হয় ভোট গণনার ভিত্তিতে।
গত কয়েক বছর ধরেই লোকসভা নির্বাচনে সব কেন্দ্রেই ভোটগ্রহণ করা হয়ে থাকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমের মাধ্যমে। এবারেও তার কোনো ব্যতিক্রম হয়নি।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ - এই তিনটি রাজ্যে সাতটি ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এই নির্বাচনে অনেক নতুন ধারা দেখা গেছে। উদাহরণস্বরূপ, এতে নারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ ধাপে পুরুষদের তুলনায় নারী ভোটারদের অংশগ্রহণের হার ছিল বেশি।
মোট ৯৭ কোটি নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছে ৬৪ কোটি ২০ লাখের মতো ভোটার। তাদের মধ্যে নারী ভোটারের সংখ্যা ৩১ কোটি ২০ লাখের মতো।
এবার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো, বাড়িতে বসে ভোট দেওয়ার সুবিধা চালু করা হয়েছে, যেখানে ৮৫ বছরের বেশি বয়সী এবং শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তাদের বাড়ি থেকেই ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।
কমিশনের মতে, এবার জম্মু ও কাশ্মীরে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ ভোট দিয়েছেন। জম্মু ও কাশ্মীরে ৫৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ ভোট পড়েছে, যা গত ৩৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
কমিশনের তথ্য বলছে, কাশ্মীর উপত্যকায় ৫১ শতাংশের বেশি ভোটারের অংশগ্রহণ রেকর্ড করা হয়েছে, যা ওই রাজ্যের তিনটি সংসদীয় নির্বাচনী এলাকায় গত নির্বাচনের তুলনায় ৩০ পয়েন্ট বেশি।
ভারতে ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে সুদীর্ঘ ভোটগ্রহণ পর্বের শেষে আজ একসঙ্গে সারা দেশের ভোট গণনা শুরু হয়েছে। মোট সাত দফায় এবার দেশে ভোট হয়েছে প্রায় দেড় মাস ধরে, আর নির্বাচনি তফশিল ঘোষণা হয়েছিল গত ১৬ মার্চ – অর্থাৎ আড়াই মাসেরও বেশি আগে। অবশেষে সেই নির্বাচনি প্রক্রিয়া এখন তার চূড়ান্ত পর্বে প্রবেশ করছে।
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল আটটা থেকে ভোটগণনার প্রক্রিয়া শুরু হবে, আর যেহেতু ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে ভোট নেওয়া হয়েছে, তাই বিকালের আগেই গোটা দেশের নির্বাচনি ফল বা ‘ট্রেন্ড’ মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার দল বিজেপি-র নেতৃত্বাধীন জোট ‘এনডিএ’ একটানা তৃতীয়বার দেশের ক্ষমতায় আসার জন্য লড়ছে।
বিজেপির সেই লক্ষ্য সফল হলে স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর পর নরেন্দ্র মোদিই হবেন প্রথম ব্যক্তি, যিনি পরপর তিনবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করবেন।
অন্যদিকে, বিরোধী শিবিরের মূল জোট ‘ইন্ডিয়া’র নেতারাও আশাবাদী যে তারা সরকার গড়ার জন্য যে গরিষ্ঠতা দরকার, তা অর্জন করতে পারবেন।
‘ইন্ডিয়া’ জোটের সব চেয়ে বড় দল কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ভোটপর্ব মেটার পর দাবি করেছেন তাদের জোট ২৯৫ বা তার কাছাকাছি আসন পাবে বলে তাদের ধারণা। লোকসভায় নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পাওয়ার জন্য দরকার অন্তত ২৭২টি আসন।