প্রেসিডেন্ট হয়েও মেঝের কার্পেটে ঘুমাতেন আহমাদিনেজাদ
শাহ আলম
প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৪, ০২:০৬ পিএম
মাহমুদ আহমাদিনেজাদ ২০০৫ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পরপর দুই মেয়াদে ইরানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে তিনি যে ধরনের জীবনযাপন করতেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে আসীন হওয়ার পরও সাধাসিদে জীবন ছিল তার।
আহমাদিনেজাদ ১৯৫৬ সালের ২৮ অক্টোবর তেহরানের পাশে গার্মসার নামে একটি শহরের প্রত্যন্ত গ্রামে ও খুব গরিব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন পেশায় একজন কামার আর মায়ের নাম খানম।
২০০৫ সালে ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে আহমাদিনেজাদ ক্ষমতায় আসেন। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত হন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরপরই তিনি তার অফিসে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনেন। প্রেসিডেন্ট ভবনের দরজা-জানালা খুলে দেওয়া হয় সাধারণের জন্য। প্রেসিডেন্ট অফিসে সপ্তাহে পাঁচ দিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সাধারণ ইরানিদের চিঠি গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়।
প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে তার জীবনযাপন যেমন ছিল পরেও ঠিক তেমনটিই ছিল। আভিজাত্য তাকে কখনও ছুঁতে পারেনি। তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলতে তেহরানের বস্তিতে অবস্থিত ছোট্ট একটি বাড়ি, যা ৪০ বছর আগে তিনি তার বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন। বেতন হিসেবে তিনি তেহরান ইউনিভার্সিটি থেকে মাত্র ২৫০ ইউএস ডলার পেতেন। তিনি রাষ্ট্রের প্রধান হয়েও রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য কোনো টাকা নিতেন না। তিনি ইউনিভার্সিটি থেকে পাওয়া বেতনের টাকা দিয়েই সংসার চালাতেন।
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর বিলাসবহুল এক বাড়ি তার জন্য অপেক্ষা করছিল। কিন্তু সেই বাড়িকে তুচ্ছজ্ঞান করে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বস্তির সেই দুই রুমের ছোট্ট বাড়িতেই বসবাস করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে সরকারের কর্মকর্তাগণের অনুরোধে তিনি প্রেসিডেন্ট ভবনে বসবাস করতেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েই প্রেসিডেন্ট ভবনের দামি কার্পেটগুলো তেহরানের মসজিদে দান করে দেন। এর পরিবর্তে সাধারণ মানের কার্পেট বিছানো হয় প্রেসিডেন্ট ভবনে। আর সেই প্রেসিডেন্ট ভবনের মেঝেতে সেই সাধারণ মানের কার্পেটের ওপরই ঘুমাতেন তিনি। এছাড়া প্রেসিডেন্ট ভবনের ভিআইপি অতিথিশালা বন্ধ করে দেওয়া হয়। একটি সাধারণ ঘরেই ভিআইপিদের সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা রাখা হয়।
৩ আগস্ট ২০১৩ ইরানের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বিদায় নেওয়ার আগেও ইতিহাস তৈরি করে যান আহমাদিনেজাদ। ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান আয়াতুল্লাহ সাদেক লারিজানির কাছে লেখা এক চিঠিতে আট বছরে অর্জিত সম্পদের হিসাব দিয়ে যান তিনি।
তথ্যসূত্র: বিবিসি ও ব্রিটানিকা।