পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে যৌন সম্পর্কের বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখতে গোপনে অর্থ দেওয়ার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট ফৌজদারি কোনো মামলায় দোষীসাব্যস্ত হলেন। অপরাধীর তকমা নিয়ে প্রধান কোনো দলের হয়ে হোয়াইট হাউসের দৌড়ে সামিল হবেন তিনি।
ড্যানিয়েলসের দাবি, তাদের মধ্যে যৌন সম্পর্ক হয়েছিল এবং ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ওই বিষয়ে চুপ থাকতে তাকে ১ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার দিয়েছিলেন ট্রাম্পের সে সময়ের আইনজীবী। অবশ্য ড্যানিয়েলসের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের খবর ২০১৮ সালে ছড়ানোর পর থেকেই ট্রাম্প সেটি অস্বীকার করে আসছেন। আর যৌন সম্পর্কের ব্যাপারে ড্যানিয়েলস আদালতে যে প্রমাণ হাজির করেছেন, সেটিই ট্রাম্পের আপিলের একটি কারণ হতে পারে।
এব্যাপারে ট্রাম্প বলেন, এই মামলার বিচারকের স্বার্থের সংঘাত রয়েছে। তিনি খুবই দুর্নীতিগ্রস্ত। আমার জায়গায় যদি আজ মাদার টেরিজা থাকতেন, তিনিও এই সব অভিযোগ ওড়াতে পারতেন না। আমার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ ভুয়ো। তবে এই গোটা জিনিসটাই আগে থেকে নির্ধারিত। এই গোটা দেশ উচ্ছন্নে গিয়েছে। সীমান্ত থেকে ভুয়ো নির্বাচন... আর এখন এই ভুয়ো মামলা।'
ট্রাম্প কি জেলে যাবেন?
ট্রাম্প জেলে যাবেন- এমন সম্ভাবনা ক্ষীণ হলেও একেবারে অসম্ভব নয়। তার বিরুদ্ধে আনা ৩৪টি অভিযোগের সবগুলোই নিউইয়র্কের ‘ই’ শ্রেণির, যা সর্বনিম্ন অপরাধ। প্রতিটি অভিযোগে সর্বোচ্চ চার বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
তবে বিচারক মার্চান তার সাজা কয়েকটি কারণে কমাতে পারেন। এর একটি হল ট্রাম্পের বয়স, আগে আদালতের আদেশে অপরাধী সাব্যস্ত না হওয়া এবং অহিংস অপরাধের মত বিষয়গুলো বিচারক বিবেচনায় নিতে পারেন।
এছাড়া নজিরবিহীন এমন মামলার বিচারে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে কারাগারের বাইরেই রাখতে চাইতে পারেন বিচারক।
অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক অন্য প্রেসিডেন্টদের মত ট্রাম্পও ‘সিক্রেট সার্ভিস’ থেকে আজীবন সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারি। এর মানে কারাগারেও তার গোয়েন্দা সুরক্ষার প্রয়োজন পড়বে। কারাগারের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থায় একজন সাবেক প্রেসিডেন্টকে রাখাটাও অত্যন্ত কঠিন হবে। কারণ এতে তার নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হবে। তাকে নিরাপদ রাখাটাও ব্যয়বহুল হবে।
কারাগার বিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘হোয়াইট কলার অ্যাডভাইস’ এর পরিচালক জাস্টিন পেপার্নি বলেন, হাজত ব্যবস্থায় দুটি বিষয়ের প্রতি নজর রাখা হয়; তা হল প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা এবং খরচ কমানো। ট্রাম্পের বেলায় সেটি ঘটলে অপ্রত্যাশিতই হবে। কোনো ওয়ার্ডেনই এর অনুমতি দিতে চাইবে না।
এরপরও প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হবেন?
যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী এবং সেখানে অন্তত ১৪ বছর বসবাস করা ৩৫ বছর বা তার বেশি বয়সি যে কেউ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। অপরাধী সাব্যস্ত হলে প্রার্থী হওয়া যাবে না, এমন কোনো বিধান সেদেশে নেই। ফলে ডোনাল্ড ট্রাম্প দোষীসাব্যস্ত হলেও তিনি নির্বাচনে লড়তে পারবেন। কিন্তু প্রার্থী অপরাধী সাব্যস্ত হলে নভেম্বরের নির্বাচনে তার প্রভাব পড়তে পারে।
এ বছরের শুরুর দিকে ব্লুমবার্গ ও মর্নিং কনসাল্টের এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের দোদুল্যমান রাজ্যগুলোর ৫৩% ভোটার জানিয়েছেন, ট্রাম্প দোষীসাব্যস্ত হলে তারা রিপাবলিকানকে ভোটদানে বিরত থাকবেন।
চলতি মাসে কুইনিপিয়াক ইউনিভার্সিটির আরেকটি জরিপে দেখা গেছে, তেমনটি হলে ট্রাম্পের ৬% ভোটার তাকে ভোটদানে বিরত থাকবেন।