আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তীব্র তোপের মুখে ইসরাইল
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৪, ১০:১৭ পিএম
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে আসছে ইসরাইল। সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজার সর্বত্রই চলছে সেনাদের বর্বরতা। বোমা হামলায় জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দিচ্ছে সব কিছু। ছাড়ছে না শরণার্থী শিবিরও।
রোববার রাতে (স্থানীয় সময়) গাজার রাফাহ শহরের একটি শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। হামলার পর শরণার্থী শিবিরের তাঁবুগুলোতে আগুন ধরে যায়। ফলে অনেকেই জীবন্ত পুড়ে মারা যান সেখানেই। শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি এ হামলার ঘটনায় দেশে দেশে বইছে নিন্দার ঝড়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তীব্র তোপের মুখে পড়েছে দেশটি। আলজাজিরা, ডয়চে ভেলে।
রোববার রাতে রাফাহর তাল আস-সুলতান শহরে অবস্থিত একটি তাঁবুতে হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। এতে অন্তত ৪৫ জন নিহত হন। যার অধিকাংশই নারী ও শিশু। এর আগে জাবালিয়া, নুসেইরাত এবং গাজা সিটির বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরেও হামলা চালায় ইসরাইল। এতে কমপক্ষে ১৬০ জন নিহত হন।
ইসরাইলের এই বিমান হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেছেন, নিরপরাধ বেসামরিক মানুষরা যেখানে আশ্রয় নিয়েছেন সেখানেও হামলা চালানো হয়েছে। ইসরাইলের এই কাজ খুবই নিন্দনীয় ও দুঃখজনক। গাজায় আর কোনো নিরাপদ জায়গা নেই। সেখানকার মানুষ যে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে তার সমাপ্তি ঘটা উচিত।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে এবার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিল আয়ারল্যান্ড
গাজার নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের হামলার নিশানা করার নিন্দা জানিয়েছে মিসরও। বলেছে, এটি ইসরাইলের একটি পদ্ধতিগত নীতির অংশ, যার লক্ষ্য গাজায় মৃত্যু ও ধ্বংসের পরিধি প্রসারিত করা।
কাতার একে আন্তর্জাতিক আইনের বিপজ্জনক লঙ্ঘন বলে নিন্দা করেছে। ইসরাইলের অব্যাহত এ হত্যাযজ্ঞের নিন্দা করেছে জর্ডান, তুরস্ক ও সৌদি আরবও।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ‘বর্বর ও খুনিদের’ জবাবদিহির আওতায় আনার অঙ্গীকার করেছেন। বলেছেন, এ জন্য সামর্থ্যরে মধ্যে সবকিছু করবেন।
ইসরাইলের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারাও। রাফাহ হামলার বিষয়ে ইসরাইলের ‘দায়মুক্তি চলতে পারে না’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা ও জরুরি ত্রাণবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি মার্টিন গ্রিফিথস।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বার্তায় গ্রিফিথস লিখেছেন, ‘গাজা থেকে আরেকটি ভয়ঙ্কর আপডেট পেলাম। রোববার রাতে রাফায় ইসরাইলের বিমান হামলায় বহু মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের অনেকে জীবন্ত পুড়ে মারা গেছেন। এ ধরনের দায়মুক্তি চলতে পারে না। বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করুন। তাদের নিরাপদ জায়গা খোঁজার সুযোগ দিন।’ গাজার নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন গ্রিফিথস।
ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি স্পেন-নরওয়ের
আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) রাফায় হামলা বন্ধের রায় দিলেও তা কোনোভাবেই মানছে না ইসরাইল। উলটো আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর ব্যাপক সমালোচনা সত্ত্বেও রাফায় হামলা ও যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন ইসরাইলে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
সোমবার সংসদে কথা বলার সময় নেতানিয়াহু বলেছেন, রোববারের বিমান হামলাটি ‘দুঃখজনক ভুল’ ছিল। তবে এর জন্য আমি যুদ্ধ থামিয়ে দিচ্ছি না। আমাদের সব লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে। ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া যুদ্ধে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এখনো চলছেই সেই হত্যাযজ্ঞ।
এদিকে রাফায় বিমান হামলা নিয়ে মঙ্গলবর জরুরি বৈঠক ডেকেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। স্লোভেনিয়ার সমর্থনে এই বৈঠক ডেকেছে আলজেরিয়া। কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, এই বৈঠক রুদ্ধদ্বার হওয়ার কথা রয়েছে।