Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

পর্নো তারকাকে ঘুস: দোষী সাব্যস্ত হলেও প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হবেন ট্রাম্প?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৪, ০৫:০২ পিএম

পর্নো তারকাকে ঘুস: দোষী সাব্যস্ত হলেও প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হবেন ট্রাম্প?

পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে যৌন সম্পর্কের বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখতে গোপনে অর্থ দেওয়ার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিচার শেষের পথে। মামলার ৩৪টি অভিযোগ নিয়ে ১২ জন জুরি, খানিকটা ‘উত্তেজিত’ একজন বিচারক এবং একদল সাক্ষী পাঁচ সপ্তাহ ধরে যুক্তিতর্ক চালিয়েছেন। আলোচিত এ মামলার সমাপনী যুক্তিতর্ক শুরু হবে মঙ্গলবার। পরে জুরিরা আলোচনা শুরু করবেন। এরপর বিচারকরা তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন।

মামলার ৩৪টি অভিযোগের মধ্যে ট্রাম্প যদি একটি অভিযোগেও দোষীসাব্যস্ত হন, তবে তিনিই হবেন ফৌজদারি কোনো মামলায় দোষীসাব্যস্ত হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কোনো সাবেক প্রেসিডেন্ট। সেইসঙ্গে অপরাধী তকমা নিয়ে প্রধান কোনো দলের হয়ে হোয়াইট হাউসের দৌড়ে সামিল হবেন। 

তবে যদি ট্রাম্পকে দোষীসাব্যস্ত করেই রায় আসে, তাহলে তিনি কী কারাগারে যাবেন? সেক্ষেত্রে আগামী ৫ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দল থেকে কে প্রার্থী হবেন? এমন কিছু বিষয়ে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে বিবিসি।

দোষী সাব্যস্ত হলে কী হবে?

মামলার বিচারের পুরো সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প জামিনে মুক্ত রয়েছেন। রায়ে দোষীসাব্যস্ত হলেও সম্ভবত তাকে গ্রেফতার করা হবে না। যতক্ষণ না বিচারপতি জুয়ান মার্চান সাজা শুনানির সময় নির্ধারণ করবেন। ট্রাম্পের সাজা পরোয়ানার ক্ষেত্রে বিচারকদের কয়েকটি বিবেচনার বিষয় আছে। এর একটি হল তার বয়স (৭৭)। সেইসঙ্গে এর আগে আদালতের রায়ে অভিযুক্ত না হওয়া এবং আদালতের সম্ভাব্য আদেশ লঙ্ঘনের মত বিষয়গুলো বিবেচনায় নেবেন বিচারক। শাস্তির মধ্যে হতে পারে জরিমানা, নিজেকে সংশোধনের সময় বেঁধে দেওয়া অথবা কিছু সময় জেলেও হতে পারে।

অপরদিকে দোষীসাব্যস্ত হলেও প্রায় নিশ্চিতভাবেই আপিল করতে পারেন ট্রাম্প। এর ফলে আবার লেগে যেতে পারে কয়েক মাস বা তারও বেশি সময়। এর মানে রায় ঘোষণার পরই ট্রাম্পের হাতে হাতকড়া পড়বে, এমন সম্ভাবনা খুবই কম। আর আপিলের সময়টাতেও তিনি জামিনে মুক্ত থাকবেন বলেই আশা করা যাচ্ছে।

আপিলের ভিত্তি কী হবে?

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে তার যৌন সম্পর্ক এবং সে বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখতে তাকে ঘুস প্রদান।

ড্যানিয়েলসের দাবি, তাদের মধ্যে যৌন সম্পর্ক হয়েছিল এবং ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ওই বিষয়ে চুপ থাকতে তাকে ১ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার দিয়েছিলেন ট্রাম্পের সে সময়ের আইনজীবী। অবশ্য ড্যানিয়েলসের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের খবর ২০১৮ সালে ছড়ানোর পর থেকেই ট্রাম্প সেটি অস্বীকার করে আসছেন। আর যৌন সম্পর্কের ব্যাপারে ড্যানিয়েলস আদালতে যে প্রমাণ হাজির করেছেন, সেটিই ট্রাম্পের আপিলের একটি কারণ হতে পারে।

নিউইয়র্ক ল স্কুলের অধ্যাপক আনা কমিনস্কি বলেন, ড্যানিয়েলস যে মাত্রায় বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন, তা আসলে যৌন সম্পর্কের ব্যাপারে বলার জন্য জরুরি কিছু নয়। তবে বিস্তারিত বর্ণনা দিলে সেটি তাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে। একজন আইনজীবী হিসেবে খুঁটিনাটি সবই আপনি তুলে ধরতে চাইবেন, যাতে জুরি বিশ্বাস করে।

তিনি বলেন, তবে এর অন্যদিকও আছে। এসব গল্পগুলো ঘটনার সঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক, একপাক্ষিক কিংবা পক্ষপাতমূলক বলেও মনে হতে পারে।

যৌন সম্পর্কের ব্যাপারে ড্যানিয়েলস যখন সাক্ষ্য দিচ্ছিলেন, তখন ট্রাম্পের আইনজীবীরা দুইবার আপত্তি জানান। কিন্তু বিচারক আইনজীবীদের থামিয়ে দেন। সেইসঙ্গে বিচারক ড্যানিয়েলসকে বলেছেন, এত বিস্তারিত বর্ণনা না দিলেও হতো।

এর বাইরে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির আইনি কৌশলেও ট্রাম্প তার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন।

ব্যবসায়িক নথি জালিয়াতি নিউইয়র্কে ছোটখাটো অপরাধ হতে পারে। কিন্তু ট্রাম্পের বেলায় তা গুরুতর অভিযোগ হয়ে উঠেছে। কারণ নথি জালিয়াতির মাধ্যমে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার চেষ্টার অভিযোগও রয়েছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে।

ট্রাম্প কি জেলে যাবেন?

ট্রাম্প জেলে যাবেন- এমন সম্ভাবনা ক্ষীণ হলেও একেবারে অসম্ভব নয়। তার বিরুদ্ধে আনা ৩৪টি অভিযোগের সবগুলোই নিউইয়র্কের ‘ই’ শ্রেণির, যা সর্বনিম্ন অপরাধ। প্রতিটি অভিযোগে সর্বোচ্চ চার বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

তবে বিচারক মার্চান তার সাজা কয়েকটি কারণে কমাতে পারেন। এর একটি হল ট্রাম্পের বয়স, আগে আদালতের আদেশে অপরাধী সাব্যস্ত না হওয়া এবং অহিংস অপরাধের মত বিষয়গুলো বিচারক বিবেচনায় নিতে পারেন।

এছাড়া নজিরবিহীন এমন মামলার বিচারে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে কারাগারের বাইরেই রাখতে চাইতে পারেন বিচারক।

অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক অন্য প্রেসিডেন্টদের মত ট্রাম্পও ‘সিক্রেট সার্ভিস’ থেকে আজীবন সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারি। এর মানে কারাগারেও তার গোয়েন্দা সুরক্ষার প্রয়োজন পড়বে। কারাগারের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থায় একজন সাবেক প্রেসিডেন্টকে রাখাটাও অত্যন্ত কঠিন হবে। কারণ এতে তার নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হবে। তাকে নিরাপদ রাখাটাও ব্যয়বহুল হবে।

কারাগার বিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘হোয়াইট কলার অ্যাডভাইস’ এর পরিচালক জাস্টিন পেপার্নি বলেন, হাজত ব্যবস্থায় দুটি বিষয়ের প্রতি নজর রাখা হয়; তা হল প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা এবং খরচ কমানো। ট্রাম্পের বেলায় সেটি ঘটলে অপ্রত্যাশিতই হবে। কোনো ওয়ার্ডেনই এর অনুমতি দিতে চাইবে না।

এরপরও প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হবেন?

যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী এবং সেখানে অন্তত ১৪ বছর বসবাস করা ৩৫ বছর বা তার বেশি বয়সি যে কেউ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। অপরাধী সাব্যস্ত হলে প্রার্থী হওয়া যাবে না, এমন কোনো বিধান সেদেশে নেই। ফলে ডোনাল্ড ট্রাম্প দোষীসাব্যস্ত হলেও তিনি নির্বাচনে লড়তে পারবেন। কিন্তু প্রার্থী অপরাধী সাব্যস্ত হলে নভেম্বরের নির্বাচনে তার প্রভাব পড়তে পারে।

এ বছরের শুরুর দিকে ব্লুমবার্গ ও মর্নিং কনসাল্টের এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের দোদুল্যমান রাজ্যগুলোর ৫৩% ভোটার জানিয়েছেন, ট্রাম্প দোষীসাব্যস্ত হলে তারা রিপাবলিকানকে ভোটদানে বিরত থাকবেন।

চলতি মাসে কুইনিপিয়াক ইউনিভার্সিটির আরেকটি জরিপে দেখা গেছে, তেমনটি হলে ট্রাম্পের ৬% ভোটার তাকে ভোটদানে বিরত থাকবেন।

তথ্যসূত্র: বিবিসি।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম