Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

দু:সহ স্মৃতি পেছনে ফেলে ইতিহাস গড়তে চলেছেন আফগান তরুণী

Icon

তানজিল আমির

প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৪, ০৯:০৮ পিএম

দু:সহ স্মৃতি পেছনে ফেলে ইতিহাস গড়তে চলেছেন আফগান তরুণী

এবারের প্যারিস অলিম্পিকে প্রথমবারের মতো স্ট্রিট ব্রেক ড্যান্স অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।  এ ইভেন্টে অংশ নেবেন আফগান তরুণী মুনিজা তালাশ। 

আফগানিস্তানের পরিস্থিতি কারো কাছেই গোপন নয়, এসবের মাঝেও এবার অলিম্পিকে নিজের অন্যতম স্বপ্ন পূরণ করতে চলেছেন এ আফগান তরুণী। তবে তার প্যারিস যাত্রা এত সহজ ছিল না। 

আফগানিস্তানের মতো রক্ষণশীল একটি সমাজের হয়েও তিনি নিজের স্বপ্ন পূরণে কোনো ছাড় দেননি; বরং পরিচয় দিয়েছেন দারুণ সাহসের।

মুনিজা তালাশ ২০২১ সালে একমাত্র নারী হিসেবে আফগানিস্তানের একটি ব্রেক ড্যান্স কমিউনিটিতে যোগ দেন৷ ব্রেক ড্যান্স অলিম্পিক গেমসেও যুক্ত হয়েছে৷ সেখানে আফগানিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করবেন তিনি৷ মাথা থেকে পা পর্যন্ত কালো রঙের পোশাকে ঢেকে তাকে প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে, যা বিশ্বের আর কোনো ব্রেক ড্যান্সারের ক্ষেত্রে দেখা যায় না৷ 

রক্ষণশীল আফগানদের অনেকেই নাচে নারীর অংশগ্রহণের তীব্র বিরোধিতা করেন৷ মুনিজা তালাশ জানান, নাচার জন্য তাকে হত্যার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে কিন্তু তারপরও নিজের স্বপ্ন পূরণে তিনি নাচ চালিয়ে গেছেন।  

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের একটি ক্লাবে নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালিয়েছিল, যে ক্লাবে মুনিজা প্রশিক্ষণ নিতে যেতেন।

মুনিজা বলেন, ওই সময় আমি বুঝতে পারিনি কী হচ্ছে, কিন্তু কিছুক্ষণ পর নিরাপত্তা বাহিনী একজনকে আটক করে তার মুখ ঢেকে সেখান থেকে নিয়ে যায়।  পরে জানা যায়, সে একজন চরমপন্থি, যে আমাদের ক্লাবে হামলা করতে এসেছিল। তারা আমাদের বলেছিল যে এবার আমরা ভাগ্যবান যে বেঁচে গেছি, কারণ তারাই আমাদের ক্লাবে বোমা ফেলতে চেয়েছিল। 

এই আফগান তরুণী বলেন, আমাদের বলা হয়েছিল, আমরা যদি জীবনকে ভালোবাসি এবং আমাদের নিরাপত্তা চাই, তাহলে আমাদের এই ক্লাবটি বন্ধ করে দেওয়া উচিত।

 

শুধু ওই ঘটনাটিই প্রথম নয়, এর আগেও ক্লাব কর্মীরা বিপদে পড়েছিলেন। এক বছর আগে ২০২০ সালে, এর সামনের রাস্তায় পার্ক করা একটি গাড়ি বিস্ফোরিত হয়েছিল, যার ফলে ক্লাবটির অনেক ক্ষতি হয়েছিল।

২১ বছরের এই ব্রেক ড্যান্সার বলেন, ‘আমি সত্যিই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ’

২০২০ সালে কাবুলে ড্যান্স ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন মুনিজা তালাশ।  এক বছরের মধ্যে সেই ক্লাবের সদস্য সংখ্যা ছিল ৩০, তাদের মধ্যে ছয়জন নারী৷

মুনিজা তার নামের শেষে তালাশ যুক্ত করেছেন নিজ থেকেই, ফার্সি ভাষার এ শব্দটির অর্থ ‘প্রচেষ্টা’ বা ‘কঠোর পরিশ্রম’। নাম পরিবর্তনটি কেবল প্রতীকী ছিল না, তিনি আশা করেছিলেন যে তার নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তটি তার আবেগ, খেলা দিয়ে তার পরিবার হুমকির সম্মুখীন হলে তাকে রক্ষা করবে।

আফগানিস্তানে উত্তেজনা বাড়লে নিরাপত্তার কারণে মুনিজার ক্লাব বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর নাচ ও গান কার্যকরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু তালেবানের কোনো কৌশলই মুনিজার উদ্দেশ্য ভাঙতে পারেনি।

মুনিজা জানতেন, তালেবান ফিরে আসার পর তিনি নিজ দেশের হয়ে অলিম্পিকে অংশ নিতে পারবেন না। তারা নারীদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করেছিল এবং সরকার সেখানে নারী খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণের জন্য পাঠাবে না।

কিন্তু মুনিজা প্যারিস যাওয়ার ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। তিনি আবিষ্কার করেছিলেন যে তিনি শরণার্থী অলিম্পিক দলের হয়ে প্রতিযোগিতা করতে পারবেন, যেটি এমন ক্রীড়াবিদদের জন্য যাদের নিজ দেশ সংঘাত বা গৃহযুদ্ধের মুখোমুখি হচ্ছে, তাদের ফিরে আসা খুব বিপজ্জনক করে তুলেছে।

মে মাসে, তিনি গেমসে শরণার্থী দলের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য নির্বাচিত ক্রীড়াবিদদের মধ্যে একজন ছিলেন এবং আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি তার জন্য কোচিংয়ের ব্যবস্থা করতে সহায়তা করেছিল।

মুনিজা তালাশ বলেন, জীবনে কোনোকিছুই অর্জন করা সহজ নয়৷ ব্রেক ড্যান্স খুবই কঠিন৷ তবে ইচ্ছা আর সাহস থাকলে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হতে পারে৷


 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম