Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

ধর্মীয় নেতা থেকে যেভাবে ইরানের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন রাইসি

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৪, ০৩:৪৩ পিএম

ধর্মীয় নেতা থেকে যেভাবে ইরানের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন রাইসি

ইব্রাহিম রাইসির জন্ম ইরানের মাশহাদে ১৯৬০ সালে। রাইসির বাবা ছিলেন একজন ধর্মীয় নেতা। পাঁচ বছর বয়সে রাইসির বাবা মারা যান। এর পর ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের চার বছর আগে ১৫ বছর বয়সি রাইসি তার নিজের শহর মাশহাদ ছেড়ে কুমে যান।

১৯৮১ সালে রাইসি তেহরানের নিকটবর্তী ইরানের শহর কারাজের বিচার বিভাগে যোগ দেন। ১০ বছরেরও কম সময়ে তিনি বিচার বিভাগে উল্লেখযোগ্য পদোন্নতি পান। এরপর কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে একটি ট্রাইবুন্যালের সদস্য হন যাকে বিরোধীরা ‘ঘাতক কমিটি’ হিসেবে অভিহিত করে।

১৯৮৮ সালে এই কমিটি দুই থেকে চার হাজারের মতো রাজনৈতিক বন্দিকে ফাঁসির আদেশ দেয়। এদের মধ্যে মার্কসবাদী, বামপন্থি রাজনীতিবিদ এবং পিপলস মুজাহিদিন অরগানাইজেশন অব ইরানের (এমইকে) বহু সদস্য ছিলেন। এ সংগঠনকে ইরান ও ইরাক উভয়েই সন্ত্রাসবাদী হিসেবে দেখে। 

এর পর ১৯৮৯ সালে রাইসি তেহরানের প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পান। তখন আয়াতুল্লাহ আকবর হাশেমি রাফসানজানি রাইসিকে ‘মধ্যপন্থি’ ব্যক্তি হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। ১৯৯৪ সালে রাইসি জেনারেল ইনস্পেকশন অফিসের প্রধান হন।

৬০ বছর বয়সী ইব্রাহিম রাইসি তার কর্মজীবনের বেশিরভাগ সময় সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে কাজ করেছেন। তাকে ২০১৯ সালে বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর দুবছর আগে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি হাসান রুহানির কাছে বড় ব্যবধানে পরাজিত হন।

১৯৮০ এর দশকে রাজনৈতিক বন্দিদের যেভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে তাতে রাইসির ভূমিকা নিয়ে বহু ইরানি এবং মানবাধিকার কর্মী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ইরান কখনো এই গণ মৃত্যুদণ্ডের কথা স্বীকার করেনি। রাইসির ভূমিকা নিয়ে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে সে বিষয়ে তিনি কখনো কিছু বলেননি।

ইরানি প্রেসিডেন্টের কপ্টার বিধ্বস্ত, যে দাবি করলেন ইসরাইলি কর্মকর্তা

২০১৪ সালে ইরানের মহা কৌঁসুলি (প্রসিকিউটর জেনারেল) পদের দায়িত্ব পান রাইসি। এর দুই বছর পর আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ইরানের অন্যতম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্পদশালী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আসতান-ই কুদস্-ই রাজাভি দেখাশোনার সব দায়িত্ব তুলে দেন রাইসির হাতে। এর পর রাইসি ইরানে বিশেষজ্ঞমণ্ডলীর সহসভাপতি হন। এই বিশেষজ্ঞমণ্ডলী দেশটির পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচন করে।
 
রাইসি ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সেই সময় তার সিদ্ধান্ত পর্যবেক্ষকদের বিস্মিত করেছিল।

ওই নির্বাচনে আরেকজন ধর্মীয় নেতা হাসান রুহানি প্রথম দফার ভোটাভুটিতে ৫৭ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পান। রাইসি ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে আসেন। তবে ওই পরাজয় তার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারেনি এবং ২০১৯ সালে আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি তাকে দেশটির বিচার বিভাগের ক্ষমতাশালী পদে বসান। এর পরই তিনি অ্যাসেম্বলি অফ এক্সপার্টস বা বিশেষজ্ঞমণ্ডলীর ডেপুটি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে রাইসি কিছু সংস্কার করেছেন, যার ফলে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা কমেছে।  এ ছাড়া অবৈধ মাদকসংক্রান্ত অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়েছে কম। তবে ভিন্নমতাবলম্বীদের দমনের জন্য বিচার বিভাগ নিরাপত্তা বিভাগের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করা অব্যাহত রেখেছেন। এর পর ২০২১ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন এবং ৬২ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।

রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি কেমন ছিল?

কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার সাত বছর পর ২০২৩ সালের মার্চে রাইসি সরকার ইরানের তিক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী আঞ্চলিক সুন্নি শক্তি সৌদি আরবের সঙ্গে আকস্মিক সমঝোতা করতে রাজি হয়ে যায়।

কিন্তু ওই বছরের অক্টোবরে হামাস দক্ষিণ ইসরাইলে নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলা চালালে আঞ্চলিক উত্তেজনা বেড়ে যায় এবং এর জবাবে ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে।

একই সময়ে, লেবাননের হেজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুথি এবং ইরাক ও সিরিয়ার বিভিন্ন মিলিশিয়া-সহ মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সক্রিয় মিত্র সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং প্রক্সি গোষ্ঠীগুলো ইরানের নেটওয়ার্ক ফিলিস্তিনিদের সাথে সংহতি প্রদর্শনের জন্য ইসরাইলের বিরুদ্ধে তাদের আক্রমণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে তুলেছে।

এই উত্তেজনা বৃদ্ধি একটি অঞ্চলিক যুদ্ধের সূত্রপাত করতে পারে এমন আশঙ্কা এপ্রিলে আরও জোরদার হয় যখন ইরান প্রথমবার সরাসরি সামরিক হামলা চালায় ইসরাইলে।

সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে প্রাণঘাতী হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ইসরাইলে তিনশোরও বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন রাইসি। সমস্ত ক্ষেপণাস্ত্রই ভূপতিত করতে সক্ষম হয়েছিল ইসরাইল, পশ্চিমা মিত্র ও আরব মিত্ররা। ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের একটি বিমানঘাঁটিতে অবশ্য সে সময় সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইসরাইল এর জবাবে ইরানের একটি বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। সেই আক্রমণ অবশ্য তার সরকারকে বিচলিত করতে পারেনি বলেই দাবি জানান রাইসি।

রোববার ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি বাঁধ উদ্বোধনের সময় ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইরানের সমর্থনের ওপর জোর দিয়ে রাইসি বলেন, ‘ফিলিস্তিন মুসলিম বিশ্বের প্রথম ইস্যু’।


 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম