যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ, বাইডেনের কী ক্ষতি?
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৪, ১০:১৪ পিএম
বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্র। গাজায় ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে বেশ কিছু দিন ধরেই বিক্ষোভ চলছে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। চলছে ধারপাকড়। ঘটছে নির্বিচার আটকের ঘটনাও।
এদিকে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যকার শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতার জন্য মধ্যপ্রাচ্যে জড়ো হয়েছেন কূটনীতিকরা। অন্যদিকে ইসরাইলকে অস্ত্র সহায়তা দেওয়া নিয়ে নতুন করে নিজ দল ডেমোক্রেটিক পার্টির চাপের মুখেও রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
দেশে-বিদেশে, এমনকি নিজ দলে এমন পরিস্থিতি বাইডেনকে নতুন এক অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকটে ফেলে দিয়েছে। যার প্রভাব পড়তে পারে আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও। সব মিলিয়ে চরম বিপদেই রয়েছেন বাইডেন। টাইমস অব ইসরাইল, রয়টার্স।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইল হামলা শুরু করলে, বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। তখনি ইসরাইলের পাশে দাঁড়ায় যুক্তরাষ্ট্র। ইসরাইলকে কয়েক দফায় অস্ত্র সহায়তা দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট সদস্যরা এ বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন না।
দেশটির অস্থিরতার মধ্যেই প্রতিনিধি পরিষদের ৮৮ ডেমোক্র্যাট সদস্য ইসরাইলের কাছে অস্ত্র বিক্রি স্থগিতের কথা বিবেচনা করতে জোর আহ্বান জানিয়ে বাউডেনের কাছে চিঠি লিখেছেন।
বাইডেনকে পাঠানো চিঠিতে লিখেছেন, এই ধরনের সহযোগিতা গাজায় অব্যাহতভাবে ইসরাইলের মানবিক সহায়তাকে সীমিত করছে। ফেব্রুয়ারিতে গাজার মানবাধিকার রক্ষায় একটি স্মারকলিপিতে সই করে ইসরাইল। স্মারকলিপি অনুযায়ী, ইসরাইল গাজায় ত্রাণ সহায়তায় বাধা দিতে পারবে না।
কিন্তু ইসরাইল ত্রাণ সরবরাহে বাধা দিয়ে সেই আইন লঙ্ঘন করেছে। তাই ইসরাইলের কাছে অস্ত্র সহায়তা স্থগিত করতে বাইডেনের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন ডেমোক্র্যাট সদস্যরা। এতে নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন করে চাপে পড়লেন বাইডেন।
ইসরাইল নিয়ে বিপাকেই পড়েছেন বাইডেন। সামালোচনার মুখে পড়েছেন বারবার।
এবার দেশটির শিক্ষার্থীদের ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভে সমর্থন দিয়ে ভারমন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স বললেন, ইসরাইল হতে পারে বাইডেনের ভিয়েতনাম। এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি বাইডেনকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। যিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়ে শিক্ষার্থী-বিক্ষোভের জেরে ১৯৬৮ সালে পুনর্নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
ইসরাইল নিয়ে নিজের অবস্থানের জন্য যুব সম্প্রদায় ও ডেমোক্র্যাটদের বড় অংশের সমর্থন খুইয়ে বাইডেন হেরে যেতে পারেন নভেম্বরের নির্বাচনে। এমন হুঁশিয়ারিও করেছেন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স।
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ ক্রমেই আরও জোরদার হচ্ছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে পথে নেমেছেন মার্কিন শিক্ষার্থীরা। শাস্তির মুখে পড়েও পিছু হটছেন না তারা।
এদিকে শাস্তির মুখে পড়া ওই সব শিক্ষার্থীর পড়াশোনার ব্যবস্থা দেবে বলে বার্তা দিয়েছে ইয়েমেনভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হুথি। শিক্ষার্থী-বিক্ষোভ এবং ভিনদেশের যুদ্ধে প্রচুর খরচের প্রশ্নে নির্বাচনের আগে সব মিলিয়ে বেশ বিপাকেই পড়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেন।
হুথি পরিচালিত সানা ইউনিভার্সিটির এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন যারা, তাদের আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাচ্ছি। ফিলিস্তিনের পাশে এই লড়াইয়ে যত রকমভাবে থাকা সম্ভব, আমরা রয়েছি।’
নির্দিষ্ট ইমেইল-ঠিকানা দিয়ে সানা ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য আহ্বান জানান তিনি। ৭ অক্টোবর ইসরাইল-হামাস সংঘাত শুরু হওয়ার পরই সরাসরি ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের পাশে দাঁড়ায় পশ্চিম এশিয়ার বেশ কয়েকটি সশস্ত্র সংগঠন। তার মধ্যে ইয়েমেনের হুথি অন্যতম। তারা লোহিত সাগরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক নৌপথে হামলা শুরু করে। গত কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে দুহাজার চার শতাধিক বিক্ষোভকারী গ্রেফতার হয়েছেন।