তীব্র দাবদাহে পুড়ছে গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তাপমাত্রা আরও বেড়েই চলেছে। এশিয়াজুড়ে চরম তাপ ভারত থেকে ফিলিপাইন অবধি জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলেছে।
হিট স্ট্রোকে মৃত্যুও বাড়ছে। দেশে দেশে স্বাস্থ্য সতর্কতা জারির পাশাপাশি স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চরম তাপমাত্রার ভয়াবহ কবলে পড়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ভিয়েতনামও।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে ভিয়েতনামজুড়ে ১০০টিরও বেশি এলাকায় তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙেছে। ৪৪ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ঝলসে যাচ্ছে দেশটি।
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করেছেন, মানব-প্ররোচিত জলবায়ু পরিবর্তন আরও ঘন ঘন, দীর্ঘ এবং তীব্র তাপপ্রবাহ তৈরি করবে। ন্যাশনাল সেন্টার ফর হাইড্রো-মেটিওরোলজিক্যাল ফোরকাস্টিং দ্বারা শুক্রবার প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ভিয়েতনাম এপ্রিল মাসে উচ্চ তাপমাত্রার তিনটি তরঙ্গ দেখেছে।
এই সপ্তাহের শুরুতে দুটি শহরে পারদ ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১১১.২ ফারেনহাইট) এ শীর্ষে ছিল। এটি ভিয়েতনামে রেকর্ড করা সর্বোচ্চ তাপমাত্রার থেকে সামান্য কম- যেটি গত বছরের ৭ মে ৪৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। সব মিলিয়ে, ১০২টি আবহাওয়া কেন্দ্র এপ্রিল মাসে রেকর্ড গরম দেখেছে, কারণ উত্তর ও মধ্য ভিয়েতনাম তাপপ্রবাহের ধাক্কা খেয়েছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় গড় তাপমাত্রা ২ থেকে ৪ সেন্টিগ্রেড বেশি। মঙ্গলবার সাতটি স্টেশনে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
ভিয়েতনামের চরম আবহাওয়ার সবচেয়ে নাটকীয় চিহ্নটি দক্ষিণের ডং নাই প্রদেশে এসেছিল, যেখানে একটি জলাধারে কয়েক হাজার মাছ মারা গেছে তীব্র গরমে। চিত্রগুলোতে দেখা গেছে, স্থানীয়রা ৩০০ হেক্টর সং মে জলাধারের মধ্য দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছেন এবং নৌকা চালাচ্ছেন, মৃত মাছের কারণে নিচে পানি প্রায় দেখাই যাচ্ছে না।
তাপপ্রবাহ এবং দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে সৃষ্ট পানির ঘাটতি গণ-মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয়। ভিয়েতনামের আবহাওয়া সংস্থা মে মাসে আরও গরম আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে।
তাপমাত্রা আগের বছরের তুলনায় ১.৫ থেকে ২.৫ ডিগ্রি বেশি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও এপ্রিল এবং মে সাধারণত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বছরের উষ্ণতম সময়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এল নিনোর প্রভাব এই বছরের তাপকে বিশেষভাবে তীব্র করে তুলছে।
মিয়ানমারেও এপ্রিলের তাপের রেকর্ড ভেঙেছে। বছরের শুরু থেকে থাইল্যান্ডে হিট স্ট্রোকে কমপক্ষে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং কম্বোডিয়ান গোলাবারুদ ডাম্পে মারাত্মক বিস্ফোরণের জন্য উচ্চ তাপমাত্রাকে আংশিকভাবে দায়ী করা হয়েছিল। ভারতের মেগাসিটি কলকাতা ১৯৫৪ সালের পর থেকে শহরের সবচেয়ে উষ্ণতম দিন দেখেছে। যেদিন তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এমনকি পার্বত্য নেপালেও ভয়াবহভাবে আঘাত হেনেছে তাপমাত্রা।