Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

ক্ষুধার জ্বালায় ঘাস খাচ্ছে সুদানের মানুষ

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৪, ০৯:২০ পিএম

ক্ষুধার জ্বালায় ঘাস খাচ্ছে সুদানের মানুষ

ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে জর্জরিত সুদানে খাদ্য সংকট বেড়েই চলেছে। খাবার নেই। পানি নেই। কিছুটা মজুত খাবার থাকলেও সে খাবার কেনার টাকাও নেই। চরম সংকটে নাজেহাল দেশটিতে কমে গেছে ত্রাণ সরবরাহও। সব মিলিয়ে চরম সীমায় পৌঁছে গেছে দুর্ভিক্ষ। ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে ঘাস খাচ্ছেন সুদানের বাসিন্দারা। এমনকি বাদামের খোসা খেয়েও জীবন ধারণ করছেন তারা। 

এদিকে দেশটিতে তীব্র অনাহারে বহু মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের খাদ্যবিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি)। শনিবার ডব্লিউএফপির বরাত দিয়ে সুদানের এ চরম দুর্দশার খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদ সংস্থা এপি।

ডব্লিউএফপি বলেছে, পশ্চিম সুদানের দারফুরে মানুষের অনাহার ঠেকানোর সময় ফুরিয়ে আসছে। ক্রমবর্ধমান সহিংসতা গোটা জাতিকে শেষ করে দিচ্ছে। শুক্রবার যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে সতর্ক করে দিয়ে জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা বলেছে, দারফুর এবং সুদানের অন্যান্য যুদ্ধকবলিত এলাকায় খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে। 

এসব এলাকায় মানবিক সাহায্যের অনুমতি না দিলে ক্ষুধায় বহু মানুষের মৃত্যু হতে পারে। ডব্লিউএফপির পূর্ব আফ্রিকার পরিচালক মাইকেল ডানফোর্ড শুক্রবার বলেছেন, ‘খাদ্যাভাবে মানুষ ঘাস ও বাদামের খোসা খেতে বাধ্য হচ্ছেন। শিগগিরই তাদের কাছে সহায়তা না পৌঁছালে দারফুর ও সংঘাত বিধ্বস্ত সুদানের অন্যান্য এলাকায় ব্যাপক অনাহার এবং মৃত্যুঝুঁকি দেখতে হতে পারে।’

গত বছরের ১৫ এপ্রিল সুদানের সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত শুরু হয়। পরে এই সংঘাত দেশটিতে গৃহযুদ্ধের রূপ নেয়। ইতোমধ্যেই প্রাণ বাঁচাতে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে অনেক মানুষ। যুদ্ধের কারণে দেশটির কৃষি উৎপাদন ৭৮ শতাংশ কমে গেছে। 

বৃহস্পতিবার ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেডক্রসের (আইসিআরসি) দুজন কর্মী দক্ষিণ দারফুরে অস্ত্রধারীদের গুলিতে নিহত হন। আহত হন আরও তিনজন কর্মী। অঞ্চলটিতে সর্বশেষ বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে আরএসএফ-এর উত্তর দারফুরের রাজধানী এল ফাশের ঘেরাও করার সময়। পরিস্থিতি বর্ণনা করে সুদানে জাতিসংঘের ডেপুটি হিউম্যানিটেরিয়ান কো-অর্ডিনেটর টবি হেওয়ার্ড বলেছেন, ‘শহর ও আশপাশের এলাকাগুলোতে নির্বিচার হত্যাকাণ্ড চালানো হচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে পুরো গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং ক্রমাগত বিমান থেকে বোমা হামলা চালানো হয়েছে।’ হেওয়ার্ড আরও বলেছেন, ‘এল ফাশেরই একমাত্র শহর যেটি এখনো আরএসএফ দখল করতে পারেনি, সেখানে অন্যান্য এলাকা থেকে আসা হাজারো উদ্বাস্তু আশ্রয় নিয়েছে।’ এল ফাশেরে অন্যান্য এলাকা থেকে সহিংসতায় উদ্বাস্তু হওয়া ৫ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ।

তবে ‘ইউএন অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাফেয়ার্স’ (ওসিএইচএ) বলেছে, এল ফাশেরকে তুলনামূলক নিরাপদ মনে করা বাসিন্দারা এখন বিপদে পড়েছেন। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সেখানকার ৩৬ হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়েছেন। ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বৃহস্পতিবার বলেছেন, ‘দুই সপ্তাহ আগে বেড়ে যাওয়া সংঘাতে এল ফাশের ও এর আশপাশে ৪৩ জন নিহত হয়েছেন।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘পশ্চিম এল ফাশেরে এক ডজনেরও বেশি গ্রামে হামলা চালানো হয়েছে।’ 

যৌন সহিংসতা, শিশু হত্যা, বাড়িঘরে আগুন এবং অবকাঠামো ধ্বংসসহ ভয়ংকর সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। সংঘাতের এমন পরিস্থিতি আর আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে দারফুরে খাদ্য সহায়তা বিতরণের কাজ থেমে গেছে। ওই অঞ্চলের ১৭ লাখ মানুষ তীব্র ক্ষুধায় ভুগছে বলে জানিয়েছে ডব্লিউএফপি। ওসিএইচএ-এর হিসাবে, যুদ্ধের কারণে সুদানে ৪৬ লাখ শিশুসহ ৮৭ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছে। দেশটির ২ কোটি ৪৮ লাখ মানুষের জন্য জরুরি সহায়তা প্রয়োজন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম