
প্রিন্ট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:১৬ পিএম
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঝুঁকিতে যুক্তরাষ্ট্র

যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫০ পিএম

আরও পড়ুন
যুদ্ধ, খরা, উৎপাদন ঘাটতি, সেই সঙ্গে তীব্র দাবদাহ- সব মিলিয়ে গত বছর থেকেই টালমাটাল বিশ্ব। পরিস্থিতি সামনে আরও খারাপের দিকেই যাবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। এরই মধ্যে এল নিনোর প্রভাবে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রার রেকর্ডও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা।
একদিকে যেমন বর্তমানের চলমান সংকট আরও বাড়বে, তেমনি তীব্র দাবদাহের সাথে শুরু হবে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট (ব্ল্যাকআউট)। যার ঝুঁকিতে রয়েছে বিশ্বের শক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রও। জলবায়ু-সম্পর্কিত চরম আবহাওয়ার কারণে ইতোমধ্যেই বিদ্যুৎ বিভ্রাট বেড়েছে দেশটিতে। আগের ১০ বছরের তুলনায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট ৭৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন তথ্যই উঠে এসেছে দেশটির অলাভজনক গবেষণা সংস্থা ক্লাইমেট সেন্ট্রালের নতুন এক প্রতিবেদনে। বৃহস্পতিবার গার্ডিয়ানের খবরে এ তথ্য জানা গেছে।
জলবায়ু সম্পর্কিত সমস্যার কারণে বহু বছর থেকেই নানান সমস্যার মুখোমুখি হয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সমস্যা সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে দেশটিতে। প্রবল বাতাস, বৃষ্টি, শীতের ঝড় এবং গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের মতো বিষয়গুলোকে এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশ্লেষকরা। বলেছেন, গত ২০ বছরে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য উচ্চ বাতাস, বৃষ্টি, শীতের ঝড় এবং হারিকেনসহ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় ৮০ শতাংশ দায়ী। প্রতিবেদনের লেখক এবং ক্লাইমেট সেন্ট্রালের সিনিয়র ডেটা বিশ্লেষক জেন ব্র্যাডি বলেছেন, আমরা দেখছি যে উষ্ণতা বৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব মারাত্মকভাবে আবহাওয়ার ওপর পড়ছে। মিশিগান, ক্যালিফোর্নিয়া, উত্তর ক্যারোলিনা এবং টেক্সাস অঙ্গরাজ্যগুলোতে আবহাওয়া সংক্রান্ত বিভ্রাট সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
ক্যালিফোর্নিয়া ইন্ডিপেনডেন্ট সিস্টেম অপারেটর জানিয়েছে, চরম আবহাওয়ার কারণে আগামী কয়েক বছর গ্রীষ্মে ব্ল্যাকআউটের ঝুঁকিতে থাকতে পারে এই রাজ্য। ২০২১ সালে যখন শীতকালীন ঝড় উরি টেক্সাসে আঘাত হানে, তখন লক্ষাধিক মানুষ বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় ছিল। শীতকালীন ঝড়ে ওই বছর কমপক্ষে ২৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। বর্তমানে টেক্সাসের তাপমাত্রা অধিক হারে বাড়ছে। এই অঙ্গরাজ্যটি তার নিজস্ব পাওয়ার গ্রিড পরিচালনা করে। জলবায়ুর প্রভাবে এর অবকাঠামো ব্যর্থ হলে অন্য রাজ্য থেকে শক্তি উৎস সংগ্রহ করা টেক্সাসের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। এজন্য গত বছর তীব্র দাবদাহের সময় এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের স্বেচ্ছায় বিদ্যুৎ শক্তির ব্যবহার কমাতে বলা হয়েছিল।
বিদ্যুৎ বিভ্রাটে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও আছে বলে জানিয়েছেন ব্র্যাডি। তিনি বলেছেন, বয়স্ক ব্যক্তি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং স্বাস্থ্যগত অবস্থার অধিকারী ব্যক্তিরা যারা বৈদ্যুতিক চিকিৎসা মেশিনের ওপর নির্ভরশীল তারা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময় বিশেষ ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
গবেষণায় দেখা রগছে, ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের শিকার হওয়ায় নিম্ন আয়ের সম্প্রদায় এবং গ্রামীণ বাসিন্দারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সারিকা খুশালানি-সোলাঙ্কি বলেছেন, সহজলভ্য অথবা ব্যাকআপ বিদ্যুতের কম অ্যাক্সেসের কারণে তারা একটি বৃহত্তর বাধার সম্মুখীন হয়। এই বিভ্রাটের বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য মাইক্রোগ্রিডের কথাও তুলে ধরেছেন তিনি। মাইক্রোগ্রিড মূলত ছোট এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ শক্তি ব্যবস্থা যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্যালিফোর্নিয়া, ওহিও, হাওয়াই এবং নিউ ইয়র্কের মতো রাজ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। খুশালানি-সোলাঙ্কি বলেছেন, এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতির জন্য মাইক্রোগ্রিড একটি সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে। বিদ্যুতের পরিবর্তে বায়ু এবং সৌর শক্তির ব্যবহারের বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি।
এদিকে জলবায়ু সংকটের চরম ক্ষতির মুখে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাজ্যও। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন প্রকৃতি ধ্বংস করার ফলেই এমন পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়েছে দেশটি। তারা আরও বলেছেন, বছরের পর বছর পরিবেশগত বিপর্যয় জলবায়ু পরিবর্তনের চেয়েও মারাত্মক। যার ফলে ভয়াবহ আর্থিক সংকটেও পড়েছে দেশটি।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এ বিষয়ে সতর্ক না হলে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং পরিবেশগত অবক্ষয়ের প্রভাবগুলো একা অনুভূত হবে না বরং জলবায়ু ঝুঁকির সঙ্গে যুক্ত হবে। উভয়ের শক্তিশালী প্রভাবে আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে যুক্তরাজ্য। তবে জলবায়ু মোকাবেলা করতে গত বছর সরকারী সংস্থা ন্যাচারাল ইংল্যান্ড তার নেচার রিটার্নস প্রোগ্রাম চালু করেছে। সরকারি ও বেসরকারি সেক্টরজুড়ে প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে কীভাবে দেশের জমি সর্বোত্তমভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে, কিভাবে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা যেতে পারে সে বিষয়গুলোতে জোর দেওয়া হয়।