প্রচণ্ড গরমে ‘ফুটন্ত কড়াই’য়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২৯ পিএম
হুহু করে বাড়ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। প্রতিবছর পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে দাবদাহ। প্রচণ্ড গরমে নাভিশ্বাস অবস্থা মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীকুলের। এল-নিনোর প্রভাবে মারাত্মক হয়ে উঠেছে বৈশ্বিক জলবায়ুর অবস্থা। তবে বিশ্ব মানচিত্রে এশিয়ার অবস্থা আরও ভয়াবহ। প্রচণ্ড গরমে ‘ফুটন্ত কড়াই’য়ে টগবগ করছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম এবং ফিলিপাইনসহ কিছু কিছু দেশে তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে পৌঁছেছে। এএফপি।
গত বছর থেকেই এল-নিনোর ভয়াবহ রূপ দেখছে বিশ্ব। বছরের উষ্ণতম মাস এপ্রিলে রেকর্ড তাপমাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এতে দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে মানুষের জীবন। প্রচণ্ড গরমে বাড়ছে হিট স্ট্রোকসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দেশে গরমকে ঘিরে নানা সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে স্কুল-কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।
এরইমধ্যে কড়া সতর্কবার্তা জারি করেছে থাইল্যান্ড। তাপমাত্রা সূচক অনুসারে কমপক্ষে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ‘বিপজ্জনক স্তরের তাপ’ দ্বারা প্রভাবিত হবে দেশটি, এমনটাই বলছে থাই আবহাওয়া বিভাগ। অতিরিক্ত গরম নিয়ে নিয়ে ১৫টি প্রদেশে বিশেষভাবে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। জানা যায়, তাপপ্রবাহের তীব্রতার কারণে দেশটির উত্তরাঞ্চলে কৃষিজমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এমনকি বায়ুদূষণে মাত্রাও বেড়ে গিয়েছে। চলমান গৃহযুদ্ধে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের অবস্থাও নাজেহাল। তার ওপর আবহাওয়ার এমন রুদ্রমূর্তিতে বেকায়দায় পড়েছে যুদ্ধরত সেনারা। এপ্রিলের মাঝামাঝি মিয়ানমারের রাজধানীতে নেপিদেওতে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে যায়। মিয়ানমারের বেসামরিক নাগরিকদের জন্য এই তাপ একটি দ্বিগুণ আঘাত। যুদ্ধের তীব্রতা সমগ্র শহরের বাসিন্দাদের তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে বাইরে অস্থায়ী শিবিরে বসতি স্থাপন করতে বাধ্য করেছে। দেশটির ৫৫ মিলিয়ন বাসিন্দাদের মধ্যে কমপক্ষে ২.৬ মিলিয়ন মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তচ্যুত হয়েছেন। অস্থায়ী শিবিরে বাস করা বেসামরিকরা তীব্র তাপে আরও ভোগান্তিতে পড়ছেন।
অন্যদিকে ফিলিপাইনের অন্তত ৩০টি শহর ও পৌরসভায় তাপ সূচক ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি ‘বিপদ’ স্তরে পৌঁছবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশটিতে ইতোমধ্যেই কিছু এলাকার স্কুলগুলোতে সশরীরে ক্লাস স্থগিত করতে বাধ্য করেছে। এমনকি স্থানীয়দের বিনা প্রয়োজনে বাইরে না যাওয়ার জন্যও সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ম্যানিলার দক্ষিণে ক্যাভিট প্রদেশের একটি সমুদ্র তীরবর্তী রিসোর্টে কর্মরত এরলিন তুমারন (৬০) বলেন, ‘এত গরম যে আপনি শ্বাস নিতে পারবেন না।’ তিনি বলেন, মঙ্গলবার তার এলাকায় তাপ সূচক ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১১৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট) পৌঁছেছে। রাজ্য আবহাওয়া পূর্বাভাসদাতা বুধবার অন্তত ৩০টি শহর ও পৌরসভায় তাপ সূচক ৪২ ডিগ্রি বা তার বেশি পৌঁছবে বলে ধারণা করছে। এ বিষয়ে রাজ্যের আবহাওয়া পূর্বাভাসের প্রধান জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আনা সোলিস বলেছেন, আগামী দিনগুলোতে তাপ তীব্র হওয়ার ৫০ শতাংশ সম্ভাবনা ছিল।
সোলিস এএফপিকে বলেছেন, ‘আমাদের বাইরে কাটানো সময় সীমিত করতে হবে, প্রচুর পানি পান করতে হবে, বাইরে যাওয়ার সময় ছাতা এবং টুপি আনতে হবে।’ এমনকি দেশটির প্রায় অর্ধেক প্রদেশে তীব্র খরা দেখা দিয়েছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এশিয়া মহাদেশ। বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির তুলনায় এশিয়ায় গড় তাপমাত্রা দ্রুত বাড়ছে বলে ডব্লিউএমওর প্রতিবেদনে বলা হয়। মঙ্গলবার বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) দ্য স্টেট অব দ্য ক্লাইমেট ইন এশিয়া ২০২৩ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এতে উঠে এসেছে, বিশ্বব্যাপী গড় উষ্ণতার চেয়ে দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে এশিয়ার দেশগুলোর আবহাওয়া। ১৯৬১ থেকে ১৯৯০ সালের গড় তাপমাত্রার চেয়ে শুধু ২০২৩ সালেই এই মহাদেশে উষ্ণতা বেড়েছে প্রায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জাতিসংঘের সংস্থার এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময়ও এশিয়ার দেশগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন আবহাওয়া দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ, ভারতসহ কোনো কোনো দেশ দাবদাহে বিপর্যস্ত। আবার চীন-পাকিস্তানসহ কোনোটিতে চরম বৃষ্টির সঙ্গে বন্যা দেখা দিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, গত বছর এশিয়ায় পানি সম্পর্কিত আবহাওয়াগত ঝুঁকির সঙ্গে ৭৯টি বিপর্যয়ের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই বন্যা ও ঝড়। এতে মৃত্যু হয়েছে দুই হাজারের বেশি মানুষের। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ৯০ লাখ মানুষ। বন্যা ছিল মৃত্যুর প্রধান কারণ।