দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে মাঝরাতে রাস্তায় চলছে এ-২১ বাস। রাস্তার কোণে বাঁক নিচ্ছে এবং ট্র্যাফিক লাইটের নির্দেশে বাসটি থেমে যাচ্ছে। সব কিছু ঠিকই রয়েছে, তবে এ বাসে নেই কোনো চালক। এটি চলছে বাস নিয়ন্ত্রণকারী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে। শনিবার এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায়ই এখন শহরের রাস্তায় দেখা মিলছে (অটোনোমাস ভেহিকেলস) এভি খ্যাত স্ব-চালিত নাইট বাস।
স্মার্ট ইয়র মোবিলিটি (এসইউএম) এর অপারেশন প্রধান পার্ক কাং-উক বলেন, একদিন সিউলের সব বাসই চালকবিহীন হয়ে যাবে। কারণ হিসাবে তিনি ব্যাখ্যায় বলেন, বর্তমানে এমন লোক খুবই কম আছেন, যারা রাতে বাস চালাতে চান। মূলত, এই শূন্যতা পূরণ করতে সাহায্য করার জন্য এটি একটি নিখুঁত উপায়।
এসইউএম গত চার বছর ধরে শহরের নতুন স্ব-চালিত নাইট বাস তৈরির জন্য সময় ব্যয় করেছে। একে কর্তৃপক্ষ বিশ্বের প্রথম বলে দাবি করছে।
পার্ক কাং-উক জানান, নিরিবিলি রাতের রাস্তাগুলো প্রযুক্তি পরীক্ষা করার জন্য আদর্শ স্থান। তবে, এখনো এর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
বাসে ওঠার আগে বেশ কিছু নিরাপত্তার কথা মাথায় রাখতে হয়। যেমন, যাত্রীদের নির্ধারিত আসনে বসতে হবে এবং সবসময় সিটবেল্ট বেঁধে রাখতে হবে। চালকের আসনেও এখন এমন কেউ থাকেন, যিনি কোন সমস্যা হলে বাসের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেন। তবে, স্টিয়ারিং ছেড়ে প্যাডেল থেকে পা তুলে বসেন ড্রাইভার। যাতে সবাই দেখতে পারেন বাসটি নিজে নিজেই চলছে। চালকের নির্দেশ ছাড়া।
পার্ক কাং-উক জোর দিয়ে বলেন, শিগগিরই এ চালকেরও আর প্রয়োজন হবে না। তবে বাস চলার সময় কয়েকবার চালককে চাকায় ব্রেক দিতে হয়েছে। কারণ বাস নিয়ন্ত্রণকারী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিটি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য এখনো পুরোপুরি তৈরি হয়নি।
যদিও এ বাসে ভ্রমণ করে অধিকাংশ যাত্রী মোটামুটি স্বস্তি বোধ করেছেন বলে জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরার পথে এক ছাত্র বলেন, ‘আমি এতে ওঠার জন্য বেশ উচ্ছ্বসিত ছিলাম। আসল কথা হচ্ছে, রাতের এ বাসের ব্যবস্থা চালকদের ওপর চাপ কমাবে।’
কাজ শেষে বাড়ি ফেরা এক নারী বলেন, আমার ধারণাই ছিল না এটা চালকবিহীন বাস! সত্যিই দারুণ! আশা করছি, সামনে আরও চালকবিহীন বাসে ভ্রমণের সুযোগ পাব।
তবে নেদারল্যান্ডসের এক শিক্ষার্থীকে কিছুটা ইতস্তত বলে মনে হলো। তিনি বলেন, ‘আমার বাসে উঠতে কিছুটা নার্ভাস লাগছিল। চালকের আসনে একজনকে বসে থাকতে দেখে আমার অশ্বস্তি কমেছে। কিন্তু পরে বুঝেছি, চালক শুধু দেখানোর জন্য বসে আছেন।’
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সোসাইটি অব অটোমোটিভ ইঞ্জিনিয়ার্স লেভেল ১ থেকে ৫ পর্যন্ত এ এভিকে শ্রেণিবিন্যাস করেছে। লেভেল-১ হচ্ছে একেবারেই সবচেয়ে বেসিক, ক্রুজ কন্ট্রোলের মতো বৈশিষ্ট্যসহ যানবাহনের সঙ্গে সম্পর্কিত। অন্যদিকে, লেভেল-৫ হলো একটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় যান যা যেকোনো পরিস্থিতিতে একাই কাজ করতে পারে। তবে লেভেল-৫ বর্তমানে বিদ্যমান নেই।
তবে, আশার কথা, সিউলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে নতুন রাতের বাস এভি লেভেল-৩ শ্রেণির যান। এর মানে হচ্ছে এ যানে নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে মানুষের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হতে পারে।
এই মুহূর্তে অপারেটিংয়ে সবচেয়ে উন্নত এভি রয়েছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রে। যাত্রীরা বেইজিং, ক্যালিফোর্নিয়া এবং অ্যারিজোনার কিছু অংশে লেভেল-৪ ট্যাক্সি সেবা নিতে পারেন। এই গাড়ির কোনো চালক নেই। তবে এর চলার জন্য নির্দিষ্ট রাস্তা এবং রুট থাকতে হবে।
স্ব-চালিত প্রযুক্তি আসলে কতটা এগিয়ে যাবে তা বিতর্কের বিষয়। তবে, এ বিষয়ে পরিপূর্ণ আলোচনা-সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্তে আসার আগেই সত্যিকার অর্থে এভির সম্ভাবনা নিয়ে কিছু বিশেষজ্ঞ সংশয় প্রকাশ করেছেন।