Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য গোয়েন্দাদের হাতে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০১ পিএম

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য গোয়েন্দাদের হাতে

ছবি: সংগৃহীত

ইরানের কনস্যুলেটে ইসরাইলের হামলা এবং ইরানের পাল্টা আক্রমণ, এর পর ইসরাইলের বদলা নেওয়ার হুমকি— এ ঘটনাপ্রবাহে উত্তপ্ত হয়ে আছে মধ্যপ্রাচ্য। ওই অঞ্চলের দেশগুলো বেশিরভাগ ইরানের পক্ষ নিলেও পশ্চিমা দেশগুলো অনেকেই আবার ইসরাইলের পক্ষে। 

এমন অবস্থায় পর্দার আড়ালে ইরানের শক্তি হিসেবে দাঁড়িয়েছে আরও দুই বৈশ্বিক পরাশক্তি— রাশিয়া ও চীন। 

ইরানের পক্ষে এই দুই দেশের সমর্থনের বড় প্রমাণ হলো, ইসরাইলের ওপর হামলায় মিসাইল গাইডেন্স সিস্টেম হিসেবে ইরান যেমন চীনের বেইদু স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেম ব্যবহার করেছে, এর পাশাপাশি ব্যবহার করেছে রাশিয়ার গ্লনাস সিস্টেম। এ ছাড়া আগে জানা গিয়েছিল রাশিয়ার সঙ্গে ইউএভি (মনুষ্যবিহীন বিমান) তৈরির গবেষণা চালাচ্ছে ইরান। এ ধরনের কিছু ইউএভি ব্যবহার হয়েছে ইসরাইলে হামলার সময়ে। 

আরও পড়ুন: মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার জন্য একমাত্র দায়ী নেতানিয়াহু: এরদোগান

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, গেল মার্চ মাসে রাশিয়ার অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এনপিপি স্টার্টের আমন্ত্রণে মস্কো সফর করেছিল ইরানের একটি প্রতিনিধিদল। তখন অস্ত্র তৈরির কারখানা থেকে দরকারি সরঞ্জাম কেনাই ছিল গুরুত্বপূর্ণ এ সফরের উদ্দেশ্য। সফরের শেষ দিন রাশিয়ার ইয়েকাতেরিনবার্গের অস্ত্র কারখানায় যায় ইরানের প্রতিনিধিদল। এসব অস্ত্রের জন্যই দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় ছিল তেহরান। এর মধ্যে রাশিয়ার উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ছিল অন্যতম, যা শত্রু যুদ্ধবিমানকে শনাক্ত ও ধ্বংস করতে সক্ষম।

ওই অস্ত্র কারখানায় মোবাইল লঞ্চার, বিমানবিধ্বংসী অস্ত্র ছাড়াও উন্নত এস–৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তৈরি করে রাশিয়া। রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম মার্কিন ও ইসরাইলি যুদ্ধবিমান শনাক্ত ও তা ধ্বংস করার উপযোগী রুশ এই আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। এমনটাই মূল্যায়ন করেছেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে হ্যাকার গ্রুপের ফাঁস করা রুশ নথি ও ইরানের কিছু ই–মেইল অনুযায়ী, ইরানি কর্মকর্তাদের মার্চ মাসের রাশিয়া সফরের উদ্দেশ্য ছিল বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি রাশিয়ার পক্ষ থেকে ইরানকে কতটা উৎপাদন সক্ষম করে তোলা সম্ভব, তা খতিয়ে দেখা।

আরও পড়ুন: ইসরাইল-ইরান উত্তেজনা, যে সতর্কবার্তা দিল চীন

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সফরের পর রাশিয়ার কাছ থেকে ইরান সরাসরি কোনো অস্ত্র কিনেছে কিনা, তা অবশ্য জানা যায়নি। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, এ সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের কৌশলগত অংশীদারত্ব গভীর হয়েছে। ইসরাইলে গত শনিবার ইরানের হামলার পর সম্ভাব্য পাল্টা হামলার আগে রাশিয়া-ইরান জোট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

রাশিয়া গোয়েন্দা সক্ষমতার কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠাতে ইরানকে কারিগরি সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে রাশিয়ার সবচেয়ে উন্নত এসইউ-৩৫ যুদ্ধবিমান ইরানকে দেওয়া হয়েছে কিনা, তার এখনো কোনো প্রমাণ নেই বলেও প্রতিবেদনে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক এই সংবাদ মাধ্যমটি।

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মস্কোকে সহায়তা করার জন্য ইরান ২০২২ সালে হাজারো ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করতে সম্মত হয়ে রাশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের নতুন অধ্যায় খুলেছে। তাদের মধ্যে সম্পর্কের এই গভীরতা মস্কো ও তেহরানের মধ্যে চুক্তি শক্ত করতে সহায়তা করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ও মধ্যপ্রাচ্যের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করে বলেছেন, রাশিয়া তার মিত্রকে উন্নত যুদ্ধবিমান ও আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দিয়ে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এতে ইসরাইল বা যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য যে কোনো বিমান হামলায় প্রতিরক্ষা মজবুত করতে পারবে তেহরান।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মস্কোর পক্ষ থেকে কতগুলো আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে বা কতগুলো ইরানে বসানো হয়েছে, তা জানা যায়নি। তবে রাশিয়ার প্রযুক্তি ইরানকে আরও শক্তিশালী ইসরাইলি প্রতিপক্ষ তৈরি করতে পারে। এ অস্ত্র চুক্তি দুই দেশের জন্যই এখন সুফল বয়ে আনছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়া এখন তাদের গোপন চুক্তিকে উন্নত যুদ্ধবিমান সরবরাহের পর্যায়ে উন্নীত করছে। এ ছাড়া গোয়েন্দা সক্ষমতার কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠাতে ইরানকে কারিগরি সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।

আরও পড়ুন:  ইরানকে নিষেধাজ্ঞা দেবে যুক্তরাষ্ট্র

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের চাওয়া পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর সুরক্ষায় রাশিয়ার বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। তেহরান রাশিয়া এস-৩০০ কেনার চুক্তি করেছিল ২০০৭ সালে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোর চাপে তা দিতে পারেনি রাশিয়া। ২০১৬ সাল থেকে সে বাধা দূর হয়ে গেলে ইরান ২০১৯ সাল থেকে এস-৩০০ ব্যবহার শুরু করে। এর পর এস-৪০০ নিতে উৎসাহী হয় ইরান। রাশিয়া এগুলো তেহরানকে দিয়েছে কিনা, তা স্পষ্ট নয়। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা মনে করেন, সরাসরি এস-৪০০ না দিলেও এর নকশা বা প্রযুক্তি ইরানের কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে।

যদি ইরান এ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পেয়ে থাকে, তবে ইরানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো আরও সুরক্ষিত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হাডসন ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ ফেলো কান কাসাপগলো বলেন, রাশিয়ার এসব অস্ত্রে ইরানের আকাশ আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। এদিকে সম্প্রতি মস্কো ও তেহরান যৌথভাবে নতুন ধরনের চালকবিহীন ড্রোন (ইউএভি) তৈরি শুরু করেছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও ফাঁস হওয়া নথিতে এসব তথ্য সামনে এসেছে। যদিও এসব নথির সত্যতা নিশ্চিত হতে পারেনি ওয়াশিংটন পোস্ট।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম