মস্তিষ্কে নিউরালিংক চিপ
কম্পিউটার চলছে চিন্তার মাধ্যমে: ইলন মাস্ক
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২৪ পিএম
নিউরালিংক প্রতিষ্ঠাতা ও মার্কিন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক জানিয়েছেন, যার মস্তিষ্কে নিউরালিংক চিপ বসানো হয়েছে, তিনি মস্তিষ্কের মাধ্যমে কম্পিউটার পরিচালনা করতে পারছেন। সম্প্রতি এক এক্স পোস্টে মাস্ক এ তথ্য জানিয়েছেন। খবর রয়টার্স, এনডিটিভির।
নিউরালিংক আগে জানিয়েছিল, তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে মস্তিষ্কে বসানো চিপের সাহায্যে মানুষ যাতে তাদের কম্পিউটারের কার্সর ও মাউস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এর আগে প্রথমবারের মতো মানব মস্তিষ্কে নিউরালিংকের চিপ বসানো হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন ইলন মাস্ক।
এক্স পোস্টে মাস্ক জানান, ‘প্রাথমিক ফলাফলে নিউরন স্পাইক শনাক্তকরণ ব্যবস্থায় আশাব্যঞ্জক সাড়া মিলেছে।’
স্পাইক হলো নিউরনের কার্যকলাপ, যাকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ ‘কোষের বৈদ্যুতিক এবং রাসায়নিক সংকেত ব্যবহার করে মস্তিষ্কে এবং শরীরে তথ্য প্রেরণ ব্যবস্থা’ হিসাবে উল্লেখ করেছে।
২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) নিউরালিংককে প্রথমবারের মতো মানুষের মস্তিষ্কে চিপ বসিয়ে পরীক্ষা চালানোর অনুমতি দেয়। এ চিড পক্ষাঘাতগ্রস্ত এবং বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের সাহায্য করার জন্য এই স্টার্টআপের লক্ষ্য অর্জনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
নিউরালিংক বলেছিল, তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে মস্তিষ্কে বসানো চিপের সাহায্যে মানুষ যাতে তাদের কম্পিউটারের কার্সর ও মাউস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। অর্থাৎ, মনে মনে ভেবেই কম্পিউটারে কাজ করা যাবে।
ইলন মাস্ক জানিয়েছেন, এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে সাফল্য পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, ‘অগ্রগতি ভালো এবং রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছে বলে মনে হচ্ছে। আমাদের জানা মতে তার উপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব নেই। রোগী কেবল চিন্তা করেই মাউস নিয়ন্ত্রণে সক্ষম।’ মাস্ক বলেছেন, নিউরালিংক এখন থেকে মেরুরজ্জুতে আঘাতের কারণে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়েছেন এমন ব্যক্তিদের সহায়তার লক্ষ্যে কাজ শুরু করবে।
মাস্কের এক্স পোস্টে দেওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, নোমল্যান্ড আরবাগ নামের মস্তিষ্কে চিপি স্থাপনকারী ওই ব্যক্তি কম্পিউটার ব্যবহারের মাধ্যমে দাবা এবং ‘সিভিলাইজেশন ফোর’ গেম খেলতে পারছেন। ২৯ বছরের আরবাগ বলেন, আমি তো গেম খেলার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। এ ঘটনা (মস্তিষ্কে চিপ স্থাপন) আমার জীবনটাকেই বদলে দিয়েছে। এর অস্ত্রোপচারও জটিল কিছু নয়।
আরবাগ জানান, আট বছর আগে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়েছিলেন। তিনি আরও জানান, জানুয়ারিতে নিউরালিংকের চিপ স্থাপনের একদিন পর তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর অস্ত্রোপচার খুব সহজেই করা হয়েছে। তবে তিনি বলেন, চিপ প্রযুক্তি আরও পরিমার্জিত করতে আরাও কাজ করতে হবে।
মাস্ক এক্স পোস্টে ইঙ্গিত দিয়েছেন নিউরালিংকের চিপ মানুষের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যেতে পারে। তিনি লিখেছেন ‘টেলিপ্যাথির’ পর তার পরবর্তী লক্ষ্য হবে ‘অন্ধজনের দৃষ্টি’।
যার মস্তিষ্কে চিপটি বসানো হয়েছে, তিনি মাউসে কতগুলো ক্লিক করতে পারেন, তা এখন পর্যবেক্ষণ করে দেখছে নিউরালিংকের কর্মকর্তারা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা নিউরালিংকের নিরাপত্তা প্রোটোকল আরও যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণের দাবি তুলেছেন। ডিসেম্বরে রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, ঝুঁকিপূর্ণ পদার্থ আনা নেওয়ার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহণ বিভাগের নিয়ম লঙ্ঘন করার জন্য এ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে।
নিউরালিংকের প্রযুক্তি সম্পর্কে মাস্ক বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করেছেন কিনা, তা খতিয়ে দেখতে যুক্তরাষ্ট্রের চার আইন-প্রণেতা তখন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে তদন্ত করে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন।