হাইতিতে চলমান গ্যাং সহিংসতা নিরসনে শান্তি আলোচনায় অংশ নিতে চান গ্যাং লিডার জিমি বারবিকিউ চেরিজিয়ের। হাইতির সবচেয়ে শক্তিশালী গ্যাং লিডারদের অন্যতম এই নেতা বলেছেন, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে একটি নতুন সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আলোচনায় অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হলে অস্ত্র ফেলে দেওয়ার কথা বিবেচনা করবেন তিনি। স্কাই নিউজের বরাতে শুক্রবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এই খবর জানিয়েছে।
হাইতির গ্যাংগুলোর একটি জোট ভিভ আনসানম বা লিভ টুগেদার। পোর্ট-অ-প্রিন্সের প্রায় ৮০ শতাংই এই জোটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জোটটির একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব বারবিকিউ চেরিজিয়ার। তিনি ‘বারবিকিউ’ নামে বেশ পরিচিত। বারবিকিউ সতর্ক করেছিলেন, সাম্প্র্রতিক সপ্তাহগুলোতে হাইতিতে যে সহিংসতা বিরাজ করছে তা আগামী দিনে আরও বাড়বে। তিনি বিশ্বাস করেন, যে কোনো ভবিষ্যতে আলোচনার টেবিলে তার দলগুলোর জন্য একটি আসন বরাদ্দ থাকা উচিত।
স্কাই নিউজকে তিনি বলেছেন, এই সহিংসতার ‘সমাধানের জন্য আমরা প্রস্তুত।’ তবে এর জন্য এই গ্যাং লিডার একটি শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি একটি বিশদ পরিকল্পনা নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসে এবং আমাদের কী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত তা যদি চাপিয়ে না দেয়, তবে আমি মনে করি অস্ত্রগুলো দেওয়া যেতে পারে।’
হাইতিতে গণতান্ত্রিক শাসন ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা তৈরির লক্ষ্যে অন্যান্য ক্যারিবীয় দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে একটি প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কেননা, দরিদ্র এই ক্যারিবীয় দেশটিতে ১২ মার্চ থেকে কোনো প্রধানমন্ত্রী নেই। কেনিয়া থেকে ফিরে আসার পর সশস্ত্র গ্যাংদের হাতে অবরুদ্ধ হওয়ার পর পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রীর এরিয়েল হেনরি। এর পর থেকেই এই পদটি শূন্য রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পদ শূন্য থাকার সুযোগ নিয়ে গ্যাংরা দেশটির বিভিন্ন অংশে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছে।
বারবিকিউ বলেছিলেন, হাইতিতে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার জন্য তিনি ‘গর্বিত নন’। তবে তার দলগুলো, যারা ‘দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে’ লড়াই করে তারা ভবিষ্যৎ সরকারের অংশ না হলে সঙ্কট চলতে পারে। এ সময় বারবিকিউ বলেন, নিরাপত্তা জোরদারের নামে কেনিয়ার যে কোনো বাহিনী দেশে প্রবেশ করলে তাকে ‘আগ্রাসী’ এবং ‘হানাদার’ হিসাবে গণ্য করা হবে।
হাইতিতে আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করার জন্য একটি সামরিক শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানোর জন্য কেনিয়াতে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন হেনরি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই গ্যাং লিডার। চলতি সপ্তাহের শুরুতে একটি বিবৃতিতে হাইতির পরিস্থিতিকে ‘বিপর্যয়কর’ হিসাবে বর্ণনা করেছে জাতিসংঘ। এতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে এক হাজার ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং ৮০০ জন আহত হয়েছেন।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে গ্যাংগুলোর বিপজ্জনক অভ্যাস সম্পর্কেও বিশদ বিবরণ দেওয়া হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে শাস্তি এবং নিয়ন্ত্রণের উপায় হিসাবে চরম সহিংসতা এবং যৌন নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। এইড গ্রুপগুলো রাজধানীতে খাদ্য এবং পানির অসুবিধার কথা জানিয়েছে। সেই সঙ্গে সতর্ক করেছে, লাখ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।