Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

মস্কো হামলাকে ঘিরে যেসব প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২৪, ১০:৪২ এএম

মস্কো হামলাকে ঘিরে যেসব প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, মস্কোর ক্রোকাস সিটি হলে হামলাকারী ‘সন্ত্রাসীদের’ জন্য ইউক্রেনে কারা অপেক্ষা করছিল, সেই প্রশ্নটি অনিবার্যভাবে সামনে চলে আসছে এবং এর উত্তর জানা জরুরি।

হামলা শেষে ‘সন্ত্রাসীরা’ কেন ইউক্রেনেই যাওয়ার চেষ্টা করল, সেটি নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তিনি।

মস্কো হামলার বিষয়ে অনুষ্ঠিত রুশ সরকারের একটি বৈঠকে পুতিন এসব কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস।

তিনি বলেন, এটা স্পষ্ট যে, যারা কিয়েভের শাসকদের সমর্থন করছে, তারা সন্ত্রাসের সহযোগী হতে চায় না এবং সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকও হতে চায় না। কিন্তু তারপরও অনেক প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। 

অবশ্য রুশ প্রেসিডেন্টের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে কিয়েভ।

তারা বলছে, হামলা ঠেকানোর ব্যর্থতাকে আড়াল করতেই পুতিন ইউক্রেনের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছেন।

অন্যদিকে, মস্কো হামলার ঘটনায় এখনও অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর অমীমাংসিত রয়ে গেছে।

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধের পক্ষে জনসমর্থন জোগাড় করার কৌশল হিসেবে রাশিয়া নিজেই ঘটনাটি ঘটিয়েছে কি-না, সে বিষয়েও বিশ্লেষকদের অনেকে সন্দেহ পোষণ করছেন।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, মস্কোয় হামলাকারী সন্দেহে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তারা সবাই মধ্য এশিয়ার দেশ তাজিকিস্তানের নাগরিক। এই দেশটি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নেরই অংশ ছিলো।

গত রোববার সন্দেহভাজন হামলাকারীদের আদালতে নেওয়া হয়।

মস্কো আদালতের আনুষ্ঠানিক টেলিগ্রাম চ্যানেলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে।

নামগুলো হচ্ছে: দালেরদজন মিরজোয়েভ, সাইদাক্রামি মুরোদালি রাচাবালিজোদা, শামসিদিন ফারিদুনি এবং মুহাম্মাদসোবির ফায়জভ।

মিরজোয়েভ তার সব দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু আদালতে নেওয়ার সময় অভিযুক্তদের সবার চেহারায় নির্যাতনের চিহ্ন দেখা গেছে।

ফলে তারা যদি দোষ স্বীকারও করে থাকে, আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী সেটি খুব একটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। কারণ নির্যাতনের ভয়ে অনেক সময় মানুষ অন্যায় না করেও দোষ স্বীকার করতে পারে।

রুশ কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে মার্চের শুরুতে অভিযুক্তদের একজনকে মস্কোর ক্রোকাস সিটি হলে নজরদারি করতে দেখা গেছে।

তখন মস্কোতে বড় কোনও জনসমাগমস্থলে হামলা হতে পারে বলে রাশিয়াকে সতর্ক করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের এই সতর্ক বার্তাকে তখন ‘মিথ্যা প্রচারণা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিল ক্রেমলিন।

রুশ কর্মকর্তারা এখন বলছেন যে, হামলাকারীদের মধ্যে অন্তত দু’জন মস্কোতে হামলা চালানোর উদ্দেশ্যে কিছুদিন আগে রাশিয়ায় আসে।

ইসলামিক স্টেট খোরাসান বা 'আইএসকে' তাদেরকে পাঠিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

আরও পড়ুন: মস্কোতে হামলার পেছনে কারা জড়িত, জানালেন পুতিন

বিবিসি'র নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিনিধি ফ্রাঙ্ক গার্ডনার বলছেন, মস্কো হামলার ঘটনায় এখনও অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

যেমন: কোনো ধরনের তাড়াহুড়ো না করে হামলাকারীরা ক্রোকাস হলের চারপাশে প্রায় এক ঘন্টা কেন ইচ্ছামত ঘোরাফেরা করলো?

বিশেষ করে রাশিয়ার মতো একটি দেশে, যেখানে পুলিশ এবং ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিসের মতো বিশেষ বাহিনী রয়েছে, সেখানে তারা কীভাবে এটি করতে পারল?

হামলার আগে বন্দুকধারীদের আচরণ দেখে মনে হচ্ছিল যেন তারা জানে যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদেরকে কোনও বাধা দেবে না।

তাছাড়া তাদের কাছে যে কেবল সাধারণ বন্দুকই ছিল বিষয়টি তেমন নয়, বরং আধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রও ছিলো।

কীভাবে তারা এটি জোগাড় করলো এবং নিরাপত্তা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে তারা সেগুলো ঘটনাস্থলে নিতে সক্ষম হল?

হামলার পর তাদেরকে দ্রুত গ্রেফতারের বিষয়টিও অনেকের কাছে বেশ অবাক করার মতো ঘটনা বলে মনে হয়েছে।

ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর সদস্যরা এ ধরনের হামলা করার সময় সাধারণত শরীরে আত্মঘাতী বোমার ভেস্ট বা বেল্ট পরে যায় এবং আত্মহত্যা করে।

কারণ তারা মনে করে ধরা পড়ার চেয়ে, আত্মহত্যা করাই শ্রেয়।

কিন্তু মস্কোতে হামলাকারীদের ক্ষেত্রে সেটি দেখা যায়নি।

মস্কো হামলার ব্যাপারে বলা হচ্ছে যে, এটি গত দুই দশকের মধ্যে রাশিয়ায় সবচেয়ে বড় হামলা।

রুশ কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় বসে হামলাকারীদের এই নির্মম হত্যাকাণ্ড চালালো। অথচ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সেটি ঠেকাতে ব্যর্থ হলো।

আবার দেখা যাচ্ছে, ঘটনার পর সেই একই রুশ কর্তৃপক্ষ হামলাকারীদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করতে খুব বেশি সময় নেয়নি।

সব মিলিয়ে ঘটনাটি ক্রেমলিনের তথাকথিত ‘অভ্যন্তরীণ কাজ’ বা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধের পক্ষে জনসমর্থন জোগাড় করার একটি ‘সাজানো অভিযান’ কি না, সে বিষয়ে বিশ্লেষকদের অনেকেই সন্দেহ পোষণ করছেন।

তবে তাদের এই সন্দেহের পক্ষে শক্ত কোনো তথ্যপ্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।

তা ছাড়া মার্কিন গোয়েন্দারাও নিশ্চিত করেছে যে, ইসলামিক স্টেটই মস্কোয় হামলা চালিয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম