লোহিত সাগর সংকট, হুমকির মুখে বিশ্ব অর্থনীতি
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৪, ০৯:৩০ পিএম
গত কয়েক মাসে গাজা যুদ্ধ এবং লোহিত সাগরে হুথি হামলার মতো বেশ কিছু আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক জলবায়ুকে একেবারে বদলে দিয়েছে। গাজা যুদ্ধকে কেন্দ্রকে করে যুক্তরাষ্ট্র ও হুথিদের হামলা-পালটাহামলায় বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে বাণিজ্য পথ। এই পরিস্থিতিতে ইতোমধ্যেই বিশ্বের বড় বড় জাহাজ কোম্পানিগুলো বব-এল-মান্দেব পথে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। পালটাতে হয়েছে গতিপথ। ফলে বেড়েছে ব্যয়ও। প্রতিনিয়ত অনিয়মে লোহিত সাগরের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটছে। সব মিলিয়ে ভয়াবহ সংকটে লোহিত সাগর। যার প্রভাব পড়বে বিশ্ব বাণিজ্যে। ফলে হুমকির মুখে পড়বে বিশ্ব অর্থনীতিও।
২০২০ সালে আব্রাহাম চুক্তির পরে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ঐতিহাসিক সংঘাত শেষ করবেন। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে সৌদি-ইরান সমঝোতার পর মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকরা আশা করেছিলেন, এই অঞ্চলটি একটি আশাবাদী ফলাফলের সঙ্গে শান্তি অর্জনের যাত্রা শুরু করেছে। কিন্তু হঠাৎই এই আশা নিরাশায় পরিণত হলো। ইসরাইল-হামাস সংঘাত বন্ধ করে দিল শান্তির দুয়ার। গাজায় ইসরাইলের নৃশংস হত্যাকাণ্ড কাঁপিয়ে তুলল পুরো বিশ্বকে। যার জেরে দক্ষিণ লেবানন এবং লোহিত সাগরে আবারও শুরু হয় সংঘাত। লোহিত সাগর অ্যাডেন উপসাগরের বব এল-মান্দেবকে সুয়েজ খালের সঙ্গে সংযুক্ত করে।
এ পথ দিয়েই বাণিজ্যের প্রায় ১৩ শতাংশ এবং কন্টেইনার ট্র্যাফিকের প্রায় ৩০ শতাংশ পরিবাহিত হয়। কিন্তু সম্প্রতি বিদ্রোহীদের আক্রমণে এ পথ বিজ্জনক হয়ে উঠেছে। শীর্ষ দশটি শিপিং কোম্পানির মধ্যে সাতটি তাদের পরিবহণ কার্যক্রমের জন্য লোহিত সাগরের রুট স্থগিত করেছে। যার মধ্যে রয়েছে চীনা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ‘কসকো’। এটি বিশ্ব বাণিজ্যের ১১ শতাংশ অবদানকারী চতুর্থ বৃহত্তম শিপিং কোম্পানি। একইভাবে অনেক মার্কিন এবং ইউরোপীয় কোম্পানি বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাতের কথা উল্লেখ করে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।
দুর্ভাগ্যবশত এই পরিস্থিতি বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতিতে প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে, ইউরোপীয়দের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাক ফেলবে। কারণ এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ বাণিজ্য হয় লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে। যেখানে প্রায় ১২ শতাংশ তেল এবং ৮ শতাংশ তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সুয়েজ খাল দিয়ে যায়। হুথিদের ওপর মার্কিন নেতৃত্বাধীন হামলার পর থেকে অপরিশোধিত পণ্যের দাম ৪ শতাংশ বেড়েছে। একটি কন্টেইনার জাহাজের পরিবহণ হার ১ হাজার ৫০০ ডলার থেকে ৪ হাজার ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউরোপের অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের পণ্যগুলোর দামও বাড়াতে পারে।
গাজা যুদ্ধ এছাড়াও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মস্কোর পরবর্তী নিষেধাজ্ঞার কারণে ইউরোপে ইতোমধ্যেই সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু টেকসই সংলাপ, গঠনমূলক সম্পৃক্ততা এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই অঞ্চলটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। এ পদক্ষেপ শুধু মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেই নয়, সমগ্র বিশ্ব সম্প্রদায়ে সহায়তা করবে।