ইসরাইলের অমানবীয় অত্যাচারে দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠেছে গাজা পরিস্থিতি। এতদিন চুপ থেকে গাজার ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছে বিশ্ব। অবশেষে অবরুদ্ধ অঞ্চলটির সমর্থনে এগিয়ে এলো ইউরোপের চার দেশ।
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্মীকৃতি দিয়ে সম্মত হয়েছে মাল্টা, আয়ারল্যান্ড, স্পেন এবং স্লোভানিয়া। কিন্তু ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর এমন সমর্থনকে মেনে নিতে পারছে না ইসরাইল। এবার ইউরোপের এই চার দেশকে হুঁশিয়ারি দিলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইল কার্টজ। তার মতে, যে দেশগুলো ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্র হিসেবে স্মীকৃতি দেবে তারা সন্ত্রাসবাদের পক্ষে। সোমবার নিজের এক্স অ্যাকাউন্টে ক্ষিপ্ত হয়ে এ বার্তা লিখেন তিনি। রয়টার্স।
ইইউ’র শীর্ষ সম্মেলনে গত শুক্রবার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্মীকৃতি দেওয়ার কথা জানায় চার দেশ। তাদের মতে, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলেই ‘শান্তি ও নিরাপত্তা অর্জন’ সম্ভব হবে। সম্মেলনে যৌথ বিবৃতিতে চার দেশ জানায়, ‘আমরা একসঙ্গে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেছি। পরিস্থিতি যখন ঠিক হবে তখন এ বিষয়ে আমরা ইতিবাচক অবদান রাখব।’ তাদের সেই বার্তার প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবেই কার্টজ লিখেছেন, ‘৭ অক্টোবরের গণহত্যার পর একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতি হামাস এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর কাছে এই বার্তাই পাঠায় যে, ইসরাইলিদের উপর হত্যাকারী সন্ত্রাসী হামলা ফিলিস্তিনিদের প্রতি রাজনৈতিক মাধ্যমে প্রতিশোধ নেওয়া হবে।’ অন্যদিকে গাজায় তাৎক্ষণিত যুদ্ধবিরতি নিয়ে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে।
রাশিয়া এবং চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত একটি পূর্ববর্তী পাঠ্য ভেটো করার পরে এ প্রস্তাবটি সামনে আসে। রাফাহ এবং গাজা উপত্যকার অন্যান্য অংশে ইসরাইলি বিমান হামলায় কয়েকডজন লোক নিহত হওয়ার পরে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ভেটোর আলোচনা হয়। নতুন পাঠ্যটিতে বলা হয়, পবিত্র রমজান মাসের জন্য ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি করে এবং একটি স্থায়ী টেকসই যুদ্ধবিরতির দিকে নিয়ে যায়।’
এর আগে রোববার উত্তর গাজায় ত্রাণের সাহায্য পৌঁছাতে বাধা দেয় ইসরাইল বাহিনী। এমন পরিস্থিতি গাজার শিশুদের আরও মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে বলে সতর্ক করেছে সাহায্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন। সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর জেভিয়ের জুবার্ট বলেন, ‘শিশুরা ইতোমধ্যেই অনাহারে এবং রোগে মারা যাচ্ছে বিশ্বের সর্বোচ্চ গতিতে, যা রেকর্ড। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে দৃঢ় এবং অবিলম্বে কূটনীতির মাধ্যমে এমন প্রস্তাবকে পালটে দিতে হবে। সেটি হবে আইনি বাধ্যবাধকতার মাধ্যমে।’
এদিকে আল শিফা থেকে পালিয়ে আসা ফিলিস্তিনিদের দাবি, ইসরাইলি ট্যাংক এবং সাঁজোয়া বুলডোজার কমপক্ষে চারটি মৃতদেহ এবং অ্যাম্বুলেন্সের ওপর দিয়ে চালানো হয়েছে। ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, তীব্র গোলাগুলির কারণে তাদের মেডিকেল টিমের সদস্যরা সেখানে আটকা পড়েছেন। অন্যদিকে গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত আল-আমাল এবং নাসের হাসপাতাল ঘিরে রেখেছে ইসরাইলি বাহিনী। হাসপাতালগুলোর আশপাশে আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়েছে তারা।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিসে তীব্র গোলাগুলি এবং বোমা হামলার মধ্যেই আল-আমাল এবং নাসের হাসপাতালের তাদের এক কর্মী নিহত এবং একজন বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট। সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, আল-আমাল হাসপাতাল সম্পূর্ণ খালি করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ইসরাইল। কিন্তু সেখানে হাসপাতাল কর্মী ও রোগীদের পাশাপাশি বাস্তুচ্যুত লোকজনও আশ্রয় নিয়েছে। এমনকি লোকজনকে সেখান থেকে সরে যেতে বাধ্য করতে ইসরাইল স্মোক বোমা ছুড়ছে।
এদিকে হামাস পরিচালিত মিডিয়া অফিস বলছে, আল শিফা হাসপাতালে গত সাত দিন ধরে চলা অভিযানে পাঁচ ফিলিস্তিনি চিকিৎসককে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী। ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৩২,৩৩৩ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৭৪,৬৯৪ জন আহত হয়েছে।