জেলে থেকে কি দিল্লির সরকার চালাতে পারবেন কেজরিওয়াল?
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৪, ১০:১০ পিএম
গ্রেফতারের পর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টোরেটের হেফাজতে রাখার আদেশ দিয়েছে ভারতের একটি আদালত।
শুক্রবার এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টোরেট বা ইডির তরফ থেকে তাকে দিল্লির আদালতে পেশ করা হয়।
আদালতে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের কেজরিওয়াল বলেন, আমার জীবন দেশের জন্য সমর্পিত - সে আমি জেলের বাইরে থাকি বা ভেতরে।
এর আগে ১০০ কোটি টাকার আবগারি দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে যে প্রমাণ রয়েছে তা আদালতে পেশ করে দশ দিনের জন্য তাকে হেফাজতে চায় ইডি। আবগারি দুর্নীতি মামলায় তাকেই মূল অভিযুক্ত বলেও আদালতে দাবি করেছে ইডি।
অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আইনজীবী তার বিরুদ্ধে তোলা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন।
অন্যদিকে তার গ্রেফতারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কেজরিওয়ালের আইনজীবী। যদিও পরে সে মামলা তুলে নিয়ে নিম্ন আদালতে আর্জি জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
দিল্লি সরকারের নতুন আবগারি নীতিতে অনিয়মের অভিযোগে বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) রাতে গ্রেফতার করা হয় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে।
এর আগে দিল্লির সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন, দিল্লির সাবেক উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া এবং রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জযয় সিংয়ের মতো আম আদমি পার্টির বিশিষ্ট নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। এখন সব চাইতে বড় প্রশ্ন হলো, আম আদমি পার্টির সব শীর্ষ নেতারা যখন জেলে, তখন দিল্লির সরকার কীভাবে চলবে? এবং কীভাবেই বা চলবে আম আদমি পার্টি বিশেষত যখন ভারতে লোকসভা ভোট আসন্ন?
শীর্ষ নেতারা সব জেলে, দিল্লির সরকার কীভাবে চলবে?
অরবিন্দ কেরিওয়ালের অনুপস্থিতিতে দিল্লিতে সরকার এবং দলকে সামলাতে পারবেন এমন যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজে বের করাই এখন দলটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
রাজ্য সরকার এবং আম আদমি পার্টিতে কেজরিওয়ালের ঘনিষ্ট মন্ত্রী ও অনুসারীরা ইতোমধ্যে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, কেজরিওয়াল মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেবেন না।
দিল্লির মন্ত্রী অতিশী, যিনি এই একটি নামেই পরিচিত, তিনি বলেছেন, প্রয়োজনে জেলে থেকে দায়িত্ব সামলাবেন তিনি (কেজরিওয়াল)।
তিনি বলেন, প্রয়োজনে জেল থেকেই সরকার পরিচালনা করবেন। আইন তাকে জেল থেকে সরকার চালাতে বাধা দিতে পারে না, কারণ তার সাজা হয়নি।
এদিকে, কেজরিওয়ালকে এর আগে ইডির তরফ থেকে একাধিকবার সমন পাঠানো হয়েছিল। তিনি বরাবর সে সমনকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে অভিযোগ করেছেন এবং তাতে হাজির হতে অস্বীকার করে আসছিলেন। তিনি বরাবরই বলে এসেছেন, তার দলকে ‘কোণঠাঁসা’ করতে চায় বিজেপি সরকার।
বৃহস্পতিবার অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেফতারের পর তার দলও একই দাবি করেছে।
এদিকে, ভারতে লোকসভা ভোট আসন্ন। দিল্লি, পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং গুজরাটে নির্বাচনি প্রচার শুরু করার কথা ছিল কেজরিওয়ালের।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর গ্রেফতারের পর দলের প্রচারে কে নেতৃত্ব দেবে- তা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে।
এখন সম্ভাব্য নামের তালিকায় যে কয়টি নাম উঠে এসেছে সেগুলো হলো, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের স্ত্রী সুনীতা কেজরিওয়াল, দিল্লির মন্ত্রী অতিশি এবং সৌরভ ভরদ্বাজ।
জেল থেকে কি মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা যায়?
আইন এবং কারা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে আইনি কোনো বাধা নেই। আইনজ্ঞ এবং প্রিজন এক্সপার্ট স্মিতা চক্রবর্তী বলেছেন, সাজাপ্রাপ্ত নন, এমন ব্যক্তি জেলে থাকাকালীন কেউ চাইলে সরকার চালাতে পারেন, এতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু তিনি জেল থেকে বাইরে আসতে পারবেন না।
এদিকে শুক্রবার দিল্লি হাইকোর্টে একটি পিআইএল করা হয়েছে তাকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরানোর আর্জি জানিয়ে। তবে ভারতীয় সংবিধানে এমন কোনো উল্লেখ নেই যে ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার হওয়া কোনো মুখ্যমন্ত্রীকে সরে যেতে হবে। তাকে ইস্তফা দেওয়ার জন্য বাধ্যও করার কথা আইনে উল্লেখ করা নেই। দায়িত্বে থাকা মুখ্যমন্ত্রীকে সরানো যেতে পারে একমাত্র যদি বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ভিত্তিতে তার সাজা হয়। কাজেই আইনের দিক থেকে তার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই।
প্রবীণ আইনজীবী ক্লিন গোনজালভেস বলেন, ভারতীয় আইন অনুযায়ী সরকার চালানোর ক্ষেত্রে কিন্তু কোনো বাধা নেই। কারণ অভিযোগের ভিত্তিতে সাজা হয়নি। জেলে থাকাকালীন তার অবাধ চলাচলের বিষয়ে বাধা থাকতে পারে, কাজের ক্ষেত্রে তো নয়।
তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, জেলে থাকাকালীন নিয়ম মেনে তার অবসর সময়ে কাজের জন্য ব্যবহার করতে পারেন, কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখাও করতে পারেন। নিয়ম মেনে এই সমস্ত কিছু করতে কিন্তু বাধা নেই তার। কিন্তু এ অবস্থায় সরকার চালানোটা কতটা বাস্তব? মি গোনজালভেস বলেন, এটা যে অবাস্তব এমনটা তো নয়। এখন প্রশ্ন হলো কতটা সম্ভব হবে সেটা ওর উপর নির্ভর করছে।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিককালে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন দুর্নীতির অভিযোগে ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে ইস্তফা দিয়েছিলেন। পরে তার জায়গায় আসেন চম্পাই সোরেন।
পশু খাদ্য কেলেঙ্কারির অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ার আগে বিহারের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী লালু যাদব তার স্ত্রী রাবড়ি দেবীকে তার পদে বসিয়ে গিয়েছিলেন। তবে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিষয়টা আলাদা।
সূত্র: বিবিসি বাংলা।