কেজরিওয়ালের গ্রেফতারের প্রতিবাদে উত্তাল দিল্লি
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪, ১০:১৬ পিএম
মুখ্যমন্ত্রী এবং আম আদমি পার্টির (এএপি) প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেফতারের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দিল্লির। শুক্রবার পুলিশের সঙ্গে আপ নেতাকর্মীদের তুমুল ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটেছে। পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করেছে। কেজরিওয়ালের গ্রেফতারের প্রতিবাদে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাওসহ চার দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে এএপি। এদিকে আবগারি দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার ভারতের রাজধানী দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
এদিকে আবগারি দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার কেজরিওয়ালকে দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে হাজির করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। শুক্রবার বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক কাবেরী বাওয়েজার এজলাসে মামলার শুনানির সময় মুখ্যমন্ত্রীকে তারা ১০ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে। শুনানি শেষে বিচারক ২৮ মার্চ পর্যন্ত তাকে হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়।
খবর আনন্দবাজার পত্রিকা, এনডিটিভি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, হিন্দুস্থান টাইমস, জি নিউজের।
এএপির কর্মসূচি থেকে বিশৃঙ্খলা ছড়ানোর শঙ্কা থেকে দিল্লির নিরাপত্তা আগে থেকেই জোরদার করা হয়েছে। বিজেপির সদর দপ্তরের সামনে তিন স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মধ্য দিল্লির গাড়িকে যানজট এড়াতে বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়।
দিল্লির মেট্রোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পুলিশের পরামর্শে আইটিও মেট্রো স্টেশন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর গ্রেফতার ইস্যুতে শুক্রবার সকাল থেকে এএপির বিক্ষোভে উত্তাল ছিল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে সকাল ১০টায় বিজেপির সদর দপ্তরের বাইরে বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছিল এএপি।
দিল্লির দীনদয়াল উপাধ্যায় (ডিডিইউ) মার্গে বিজেপি এবং এএপির সদর দপ্তর অবস্থিত। পরিস্থিতি বিবেচনায় দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গে ১৪৪ ধারা জারি করেন দিল্লি পুলিশের ডিসিপি সেন্ট্রাল এম হর্ষবর্ধন। পুলিশের সঙ্গে এএপি নেতাকর্মীদের তুমুল ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটেছে। পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করেছে।
দিল্লির মন্ত্রী ও এএপি নেত্রী অতিশীর সঙ্গে বাগবিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তি হয়েছে পুলিশের। শুক্রবার আইটিও-র কাছে বিক্ষোভের সময় আটক করা হয় দিল্লির মন্ত্রী আপ নেত্রী অতিশী মারলেনাকে। এরপর আটক করা হয় পাঞ্জাবের মন্ত্রী হরজ্যো বাইনস, দিল্লির আরেক মন্ত্রী ইমরান হোসেনকে।
এএপি নেতানেত্রীরা বলছেন, তারা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশ করলেও পুলিশ অন্যায়ভাবে তাদের আটক করছে। দিল্লিতে এএপির আহ্বায়ক কেজরিওয়াল মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য গোপাল রাই এই গ্রেফতারকে ‘গণতন্ত্রের হত্যা’ এবং ‘স্বৈরাচারের ঘোষণা’ বলে কটাক্ষ করেছেন।
তিনি বলেন, যারা যারা বিজেপির স্বৈরাচারী নীতির বিরুদ্ধে, তারা সবাই এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিন।
এদিকে সন্ধ্যায় এক ঘোষণায় গোপাল রাই বলেছেন, পার্টির সদস্য, বিরোধী ভারত ব্লকের নেতাদের সঙ্গে আগামীকাল শনিবার সকাল ১০টায় দিলির শহিদ পার্কে, আইটিওতে মুখ্যমন্ত্রীর গ্রেফতারের প্রতিবাদে সমাবেশ করবে।
তিনি বলেন, আগামীকাল, ভগৎ সিং, রাজগুরুর শহিদি দিবস। তারা দেশের জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। এ দিন স্মরণ করে ২৩ মার্চ, আমরা শহিদ পার্ক, আইটিওতে প্রতিবাদ সমাবেশ করব।
এ সমাবেশের বিক্ষোভে উপস্থিত থাকবেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানও। ২৪ মার্চ শহরজুড়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হবে। তিনি আরও বলেন, ২৫ মার্চ দলের নেতারা হোলি উৎসব পালন না করে ‘দ্বারে দ্বারে গিয়ে জনগণের সঙ্গে দেখা করে বিজেপির কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বলবেন।’
তিনি আরও বলেন, আগামী ২৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাও করা হবে। তার বাড়ির বাইরে বিক্ষোভ করা হবে। সর্বভারতীয় পর্যায়ে ‘মেগা প্রতিবাদ’ সমাবেশও অনুষ্ঠিত হবে।
শুক্রবার আদালতে ইডির পক্ষে অংশ নেন কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু। ইডি আদালতে দাবি করে যে, ‘আবগারি দুর্নীতির কিংপিন’ হলেন কেজরিওয়াল। অর্থ আত্মসাৎ প্রতিরোধ আইনের নির্দিষ্ট ধারা মেনেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এএপি প্রধানের জামিনের বিরোধিতা করে ইডি আরও জানায়, অপরাধে সরাসরি যুক্ত ছিলেন কেজরিওয়াল। কিছু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘুস নেওয়ার জন্যই ওই আবগারি নীতি আপ প্রণয়ন করেছিল। ইডির আরও দাবি, আবগারি ‘দুর্নীতি’র টাকা গোয়ার নির্বাচনে কাজে লাগিয়েছিল এএপি।
দিল্লির আবগারি মামলায় কেজরিওয়ালকে মোট নয়বার সমন পাঠিয়েছিল ইডি। কিন্তু আটবারই তিনি হাজিরা এড়িয়ে গেছেন। আবগারি মামলাতেই সুরক্ষা চেয়ে দিলির নিম্ন আদালতে গিয়েছিলেন কেজরিওয়াল। সেখানে তার আবেদন মঞ্জুরও করা হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি সেই সুরক্ষার মেয়াদ শেষ হয়।
বৃহস্পতিবার নবম হাজিরার দিন কেজরিওয়াল ইডি দপ্তরে না গিয়ে সরাসরি হাইকোর্টে যান। সেখানে নতুন করে রক্ষাকবচের দাবি জানান তিনি। কিন্তু দিল্লির হাইকোর্ট কেজরিওয়ালের আবেদন খারিজ করে দেয়।
আদালতে পেশ করা আবেদনে কেজরিওয়াল বলেছিলেন, ইডি নিশ্চয়তা দিক যে, তাদের তলবে সাড়া দিলে আমার বিরুদ্ধে কোনো কঠোর পদক্ষেপ করা হবে না।
হাইকোর্ট তাকে সুরক্ষা না দেওয়ার পরই তৎপর হয় ইডি। বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কেজরিওয়ালের বাসভবনে যান ইডি কর্মকর্তারা। ইডি সূত্রে জানা গেছে, কেজরিওয়ালের ফোনও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ঘণ্টা দুয়েকের তলাশি এবং জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
পদে থাকাকালীন এই প্রথম ভারতের কোনো মুখ্যমন্ত্রী গ্রেফতার হলেন। কেজরিওয়ালের গ্রেফতারের পর রাজধানীতে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
এএপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে তিনি ইস্তফা দেবেন না। প্রয়োজনে জেলে বসেই তিনি সরকার চালাবেন। অন্যদিকে শুক্রবার এএপি দাবি করেছে কেজরিওয়ালের পরিবারকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। দিলির মন্ত্রী গোপাল রাইয়ের দাবি, কেজরিওয়ালের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
কীভাবে কাটল প্রথম রাত
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার একটি সূত্র জানিয়েছে, ছোট্ট কুঠুরি। তার মেঝেতে পাতা ছিল দুটি গদি। গ্রেফতারের পর দিলিতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-র সদর দপ্তরে সেই ছোট্ট কুঠুরিতেই রাত কেটেছে মুখ্যমন্ত্রীর। সেখানে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, কী কী ওষুধ তিনি খান? অন্য কোনো প্রয়োজন রয়েছে কি না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়। ছোট কুঠুরিতে সিসি ক্যামেরা বসানো রয়েছে। সেই ক্যামেরার ফুটেজে রাত-দিন নজর রাখার জন্য দুজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ইডি জানিয়েছে, নিরাপত্তার কারণে বাইরের খাবার দেওয়ার অনুমতি দিই না। সদর দপ্তরের ভেতরের ক্যান্টিন থেকে তাকে খাবার দেওয়া হয়েছে।
গ্রেফতারের নিন্দায় মমতা
শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে কেজরিওয়ালকে গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক্সপোস্টে মমতা লিখেছেন, ‘জনগণ নির্বাচিত দিলির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা করছি। আমি সুনীতা কেজরিওয়ালের (অরবিন্দ কেজরিওয়ালের স্ত্রী) সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করেছি এবং পাশে থাকার বার্তা দিয়েছি। বিরোধী দলের মুখ্যমন্ত্রীদের বেছে বেছে গ্রেফতার করা হচ্ছে। কিন্তু বিজেপির সঙ্গে জোটে থাকলে ইডি, সিবিআইয়ের তদন্তে অভিযুক্ত ব্যক্তিরাও ছাড় পাচ্ছেন, দুর্নীতি চালিয়ে যেতে পারছেন। এটা মেনে নেওয়া যায় না। এটা গণতন্ত্রের ওপর নির্মম আঘাত।’