নির্বাচনের ঠিক আগে কী কারণে গ্রেফতার হলেন কেজরিওয়াল

যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪, ১০:৫০ এএম

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে ভারতে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তাকে গ্রেফতার করে।
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে নয়াদিল্লির রাজনীতিতে এমন ঘটনা ঘটল। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে প্রথম ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কেজরিওয়াল গ্রেফতার হলেন।
দেশটির কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) মদ নীতি কেলেঙ্কারির অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করেছে।
ইডির ১২ সদস্যের একটি দল গতকাল সন্ধ্যার পর তল্লাশি পরোয়ানা নিয়ে দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের বাসভবনে যায়। তারা কেজরিওয়াল ও তার স্ত্রীর মোবাইল জব্দ করেন। কেজরিওয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদও করেন ইডি কর্মকর্তারা।
এ সময় মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের বাইরে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। আশপাশে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। প্রায় দুই ঘণ্টা পর কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করে দিল্লিতে ইডির কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
যখন বাড়ির ভেতর কেজরিয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল তখন বাইরে দিল্লি পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সের সদস্য এবং সিআরপিএফের কয়েকটি দলকে মোতায়েন করা হয়। ওই সময় বাইরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তখন কেজরিওয়ালের বাড়ির বাইরে যে কয়েকজন নেতাকর্মী জড়ো হয়েছিলেন তাদেরও গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়।
দিল্লিতে মদের দোকানের লাইসেন্স দেওয়ার নীতি বদল করে কেজরিওয়াল এবং কয়েকজন মন্ত্রী ও নেতা মদ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন, এই অভিযোগেরই তদন্ত করছে ইডি।
এই মামলাতেই কেজরিওয়ালের দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা ও দিল্লির সাবেক উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীষ শিশোদিয়া এক বছরের বেশি সময় ধরে জেলে আছেন।
দলের সংসদ সদস্য সঞ্জয় সিং ওই একই মামলায় গত বছর অক্টোবর মাসে গ্রেফতার হয়েছেন। দিল্লির আবগারি নীতি সংক্রান্ত ওই মামলায় কেজরিওয়ালকে জেরা করার জন্য নয়বার সমন পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত এজেন্সি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইডি অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে মদ নীতি কেলেঙ্কারি মামলার ‘ষড়যন্ত্রকারী’ বলে অভিহিত করেছে।
ইডি বলেছে, মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও আম আদমি পার্টির নেতা মণীশ সিসোদিয়া এবং সঞ্জয় সিং মদ নীতি তৈরিতে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছিলেন ভারত রাষ্ট্র সমিতির (বিআরএস) নেতা কে. কবিতা।
কথিত ষড়যন্ত্র অনুযায়ী, দিল্লিতে এমন এক মদ নীতি তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়; যা দক্ষিণ ভারতের একটি মদের লবিকে সুবিধা দেবে। ইডির তথ্য অনুযায়ী, এর বিনিময়ে সেই ‘দক্ষিণ লবি’ আম আদমি পার্টিকে ১০০ কোটি রুপি দেবে।
পরে মামলার কয়েকজন অভিযুক্ত ও সাক্ষীর বক্তব্যে কেজরিওয়ালের নাম উঠে আসে। কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে ইডির চাওয়া রিমান্ড নোট ও চার্জশিটে এই বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকার জাতীয় রাজধানীতে একটি নতুন আবগারি নীতি চালু করে ২০২১ সালের নভেম্বরে।
ওই নীতি অনুযায়ী, সরকার মদ বিক্রয় থেকে সরে আসে এবং বেসরকারি লাইসেন্সধারীদের মদের দোকান চালানোর অনুমতি দেয়।
সরকার জানিয়েছিল কালোবাজারি রুখতে, সরকারের রাজস্ব বাড়াতে এবং সামগ্রিকভাবে গ্রাহকদের সুবিধা দিতেই ওই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ওই নীতি অনুযায়ী, মধ্যরাত পর্যন্ত মদের দোকান খোলা রাখা যাবে এবং দোকানে অনেক রকম ডিসকাউন্ট দেওয়া যেত।
নতুন নীতিতে মদের বিক্রি হঠাৎই আকাশ ছুঁয়েছিল আর দিল্লি সরকারের রাজস্ব বেড়েছিল ২৭ শতাংশ।
তবে বিজেপি ওই নতুন আবগারি নীতির বিরোধিতা করে অভিযোগ করে যে আবাসিক এলাকায় মদের দোকান খোলার অনুমতি দিয়েছে আপ সরকার এবং রাজধানীতে ‘মদের সংস্কৃতি’ প্রচার করছে।
দিল্লির মুখ্য সচিব নরেশ কুমার ২০২২ সালের জুলাই মাসে নতুন আবগারি নীতিতে একটি গুরুতর অনিয়মের বিষয় চিহ্নিত করেন। তার রিপোর্টে মদের লাইসেন্সধারীদের ‘অন্যায্য সুবিধা’ দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়।
কোভিড মহামারি চলাকালীন মদের লাইসেন্স ফি বাবদ ১৪৪ কোটি টাকা ছাড়ের কথাও তুলে ধরেন ওই কর্মকর্তা।
মুখ্য সচিবের রিপোর্টের ভিত্তিতে এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করেন দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভি কে সাক্সেনা।
এরপরেই আপ নেতৃত্বাধীন সরকারের উপর বিজেপি তীব্র রাজনৈতিক আক্রমণ করতে থাকে। দিল্লির ক্ষমতাসীন দলের তরফে ওই অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে বিতর্ক ওঠার পরেই নতুন আবগারি নীতি প্রত্যাহার করে নেয় দিল্লি সরকার।
তার ফলে নতুন চালু হওয়া ৪০০টিরও বেশি দোকান বন্ধ হয়ে যায়। নতুন নীতি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত মদ বিক্রি আবার সরকারি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
এদিকে কেজরিওয়াল জেল থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর সব দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানিয়েছেন দিল্লির মন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির নেত্রী অতিশি। তিনি বলেছেন, অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লির বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী আছেন এবং তিনি থাকবেন।