Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

লোহার বার বৈদ্যুতিক শক কুকুর লেলিয়ে নির্যাতন চালাচ্ছে ইসরাইল

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৪, ০৮:২৮ পিএম

লোহার বার বৈদ্যুতিক শক কুকুর লেলিয়ে নির্যাতন চালাচ্ছে ইসরাইল

গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে জোর করে তুলে নিয়ে গেছে ইসরাইলি বাহিনী। বন্দি করে রেখেছে তাদের ভয়ংকর কারাগারে। যেখানে ফিলিস্তিনিদের ওপর ভয়াবহ শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি মানসিক নিপীড়নও চালানো হয়। বন্দিদের হাতকড়া পরিয়ে, চোখ বেঁধে ধাতব খাঁচায় আটকে রাখা হয়। দেওয়া হয় না কোনো খাবার-পানি। সেখানেই আবার লোহার বার, বৈদ্যুতিক শকসহ বন্দিদের ওপর কুকুর লেলিয়ে অত্যাচার চালায় বর্বর ইসরাইলি বাহিনী। 

সম্প্রতি ইসরাইলের কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দিদের কণ্ঠে এমনি ভয়াবহ নির্যাতনের কথা জানা গেছে। মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনিরা মিডল ইস্ট আইকে জানিয়েছেন, কীভাবে তাদের কুকুর ও বিদ্যুৎ দিয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল। প্রহসনমূলক মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। কীভাবে অপমানজনক ও অবমাননাকর পরিস্থিতিতে রাখা হয়েছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক মুক্তিপ্রাপ্ত একজন ফিলিস্তিনি তার তিক্ত অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। বলেছেন,  ইসরাইলি বাহিনী গাজার একটি স্কুল থেকে তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। তারপর তাকে হাতকড়া পরিয়ে চোখ বেঁধে দেওয়া হয়। এরপর টানা ৪২ দিন তাকে ধাতব খাঁচায় আটকে রাখা হয়। সেখানেই তাকে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়েছিল। এতেই থেমে থাকেনি ইসরাইলের হিংস্র সেনারা। কুকুর দিয়ে আঁচড় ও কামড়ও দেওয়া হয়েছিল তাকে। অন্যান্য অনেক পুরুষও বলেছেন তাদের সঙ্গে একই আচরণ করা হয়েছিল। 

এমনকি তাদের কোনো প্রকারের খাবার অথবা পানি পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। মোয়াজ মুহাম্মদ খামিস মিকদাদ যাকে ডিসেম্বরে গাজা শহরে বন্দি করা হয়েছিল এবং ৩০ দিনেরও বেশি সময় ধরে আটক রাখা হয়েছিল। 

তিনি বলেছেন, ইসরাইলি বাহিনী কাউকেই রেহাই দেয়নি। ১৪ বছর বয়সি ছোট ছেলে থেকে শুরু করে ৮০ বছর বয়সি সব পুরুষকে নির্যাতন করা হয়েছে। মুক্তিপ্রাপ্ত অন্য এক ব্যক্তি মিডল ইস্ট আই-কে বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার চোখ বেঁধে তাকে উলঙ্গ করা হয়েছিল। তাকে বারবার মারধর করা হয়েছিল এবং তার শরীরে বারবার সিগারেটের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছিল। তিনি হিমায়িত অবস্থায় কয়েকদিন ধরে বন্দি থাকার কথাও বর্ণনা করেছিলেন। যেখানে তাকে ঘুমাতে দেওয়া হয়নি। এমনকি পানির অনুরোধ করার পরে তার হাতে সেনাদের প্রস্রাবভর্তি বোতল তুলে দেওয়া হয়। বন্দিদের কাছে হামাসের সুড়ঙ্গ সম্পর্কে জানতে চাইলে ‘আমি জানি না’ উত্তর এলেই এমন নির্যাতন চালায় ইসরাইলি সেনারা। এমনই বেশ কয়েকজন সাবেক বন্দির সঙ্গেও কথা বলেছেন। যারা একই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। শুক্রবার নির্যাতনের বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টার অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডস বলেছেন, তিনি ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপর ইসরাইলের নির্যাতন ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তদন্ত করছেন।

মঙ্গলবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, গাজা উপত্যকার হাসপাতালে অভিযান চালানোর পর চিকিৎসকদের মারধর ও অপমান করেছে ইসরাইলি সেনারা। চিকিৎসকরা বিবিসিকে বলেছেন, গত মাসে হাসপাতালে অভিযানের পর সেনারা তাদের চোখ বেঁধে আটকে রেখে বারবার মারধর করেছে। নাসের হাসপাতালের ডাক্তার আহমেদ আবু সভা তাকে এক সপ্তাহ আটকে রাখার বর্ণনা দিয়েছেন। বলেছেন, তার ওপর একটি কুকুর লেলিয়ে দেওয়া হয়। এরপর এক ইসরাইলি সেনা তার একটি হাত ভেঙে দেয়। অন্য আরও দুই ডাক্তারের সাক্ষাৎকার নিয়েছে বিবিসি। সভার দেওয়া বর্ণনা অন্য দুই ডাক্তারের দেওয়া বর্ণনার মিলে যায় বলে জানিয়েছে এ সংবাদমাধ্যম। তারা আরও বলেছেন, তাদের অপমান ও মারধর করার সঙ্গে গায়ে ঠান্ডা পানিও ঢেলে দেয় সেনারা। এছাড়াও তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অস্বস্তিকর অবস্থায় হাঁটু গেড়ে থাকতেও বাধ্য করা হয়। ওই দুই ডাক্তার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন। চিকিৎসকদের এই অভিযোগের বিবরণ ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনীকে (আইডিএফ) পাঠিয়েছে বিবিসি। তবে সরাসরি এর কোনো জবাব দেয়নি আইডিএফ।

এদিকে আরও হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে বন্দি করার উদ্দেশ্যে ইসরাইলে কারাগার তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। রোববার প্রতিরক্ষা, জাতীয় নিরাপত্তা এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের সময় এ নির্দেশনা দেন। ফিলিস্তিনে বন্দি ও সাবেক বন্দিবিষয়ক কমিশনের প্রধান কাদ্দৌরা ফারেস নেতানিয়াহুর এ সিদ্ধানের নিন্দা করেছেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম