পাকিস্তানে তত্ত্বাবধায়ক বাতিল করবে জোট সরকার
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৪, ১০:৫৯ পিএম
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তানের জোট সরকার। এ বিষয়ে একমত হয়েছে দেশটির নতুন সরকারের দুই শিরোমণি পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। তাদের মতে, নতুন নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। বিদায়ি সরকারের প্রধানমন্ত্রীই তখন পদে বহাল থাকবেন। উপরন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার পর মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়া হবে।
শনিবার স্থানীয় দৈনিক দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার পাশাপাশি নির্বাচনি প্রক্রিয়া সংস্কারের বিষয়েও ঐকমত্যে পৌঁছেছে দুই দল। এমনকি নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে ‘সাধারণ এবং সহজ’ করার জন্য আইনের খসড়াকে সমর্থন করেছে তারা। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পিএমএল-এন এবং পিপিপি উভয়ই প্রস্তাবিত সংস্কারের বিষয়ে অন্য দলগুলোকে আস্থায় নেবে।
পিএমএলএনের নেতৃত্বাধীন জোট তিনটি বড় সাংবিধানিক সংশোধনীর লক্ষ্যেও রয়েছে। এরমধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে- ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো (এনএবি) বিলুপ্ত করা, আর্টিকেল ৬২ এবং ৬৩-কে তাদের আসল অবস্থানে পুনরুদ্ধার করা এবং স্থানীয় সরকারকে ক্ষমতায়ন করা। প্রাথমিকভাবে প্রথম দুটি সংশোধনীর দিকে জোর দেওয়া হচ্ছিল। এরপর পিএমএল-এন এবং মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তান (এমকিউএম-পি) মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই চুক্তিটি ছিল স্থানীয় সরকারদের ক্ষমতায়ন নিয়ে। এরপরই তৃতীয়টি সংশোধনীটির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
মূলত এই কারণেই এমকিউএম-পি ট্রেজারি বেঞ্চে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এমকিউএম-পি প্রস্তাবিত সংশোধনী ১৪০-এ অনুচ্ছেদের অধীনে ফেডারেশন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এর আগে পিএমএলএনের মূল লক্ষ্যই ছিল পাকিস্তানের নির্বাচন দমন কমিশনকে বিলুপ্ত করা। এমনকি জানুয়ারিতে নির্বাচনি ইশতেহারে পিএমএল-এন নেতা নওয়াজ শরিফ জানিয়েছে তার দল ক্ষমতায় এলে পাকিস্তান দুর্নীতি দমন কমিশনকে (এনএবি) সরিয়ে ফেলা হবে। পিএমএল-এন-এর ৫১-পৃষ্ঠার ইশতেহারে বলা হয়েছে, ‘এনএবি বাতিল করুন’। ‘তারা বিদ্যমান দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী করবে’।
এছাড়াও পাকিস্তানের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬২(১)(ভ) এর অধীনে, একজন ব্যক্তি জাতীয় বা প্রাদেশিক আইন সভার সদস্য হিসাবে যোগ্য হতে পারবেন না যদি তিনি ‘সাদিক এবং আমিন’ অর্র্থাৎ (সত্যবাদী এবং বিশ্বস্ত) না হন। এ ধরনের শব্দচয়নের বিষয়েও সংশোধনের কথা রয়েছে।
অবশেষে রোববার সমঝোতা অনুযায়ী, পাকিস্তানের ১৪তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিলেন আসিফ আলি জারদারি (৬৮)। পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি ফয়েজ ইসা তাকে শপথবাক্য পাঠ করান। ইসলামাবাদের প্রেসিডেন্ট ভবন আইওয়ান-ই-সদরে এ আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। ড. আরিফ আলভির পরিবর্তে স্থলাভিষিক্ত হবেন তিনি। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, তিন বাহিনীর প্রধান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কূটনীতিকরা। শনিবার ক্ষমতাসীন জোটের যৌথ প্রার্থী পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) কো-চেয়ারম্যান জারদারি পিটিআই-সমর্থিত সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলের (এসআইসি) প্রার্থী মাহমুদ খান আচাকজাইকে পরাজিত করেন।
এরপর দ্বিতীয়বারের মতো দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। পার্লামেন্টে এবং চারটি প্রাদেশিক অ্যাসেম্বলিতে ৪১১ টি ইলেক্টোরাল ভোট পেয়েছিলেন জারদারি। এদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী, আচাকজাই ১৮১ ভোট পেয়েছিলেন। আসিফ আল জারদারি এর আগে ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের ১১তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পরবর্তীতে আগস্ট ২০১৮ থেকে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন।