Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রীর ঝড় থামতেই প্রেসিডেন্ট নিয়ে টানাটানি

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৩৫ পিএম

পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রীর ঝড় থামতেই প্রেসিডেন্ট নিয়ে টানাটানি

নির্বাচন শেষ। সরকার গঠনপ্রক্রিয়াও শেষ। এরপরও থামছে না নির্বাচন ঘিরে জমে ওঠা পাকিস্তানের ‘মসনদ দখল নাটক’। 

৮ ফেব্রুয়ারি দেশটির জাতীয় নির্বাচনের দুদিন পর থেকে দুই সপ্তাহ ধরে চলে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার নিয়ে দরকষাকষি। শেষমেশ পাকিস্তান মুসলীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) মধ্যে ‘জোট সরকার’-এর একটি দফারফা হলেও সোমবার থেকে নতুন করে জমে উঠেছে প্রেসিডেন্ট নিয়ে টানাটানি। 

পাকিস্তান তেহরিক ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা দেশটির প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির বিরুদ্ধে এবার ফুঁসে উঠেছেন দেশটির হবু সরকারের জোট শরিকরা। ঘটনার শুরু জাতীয় পরিষদের অধিবেশনকে ঘিরে। মতবিরোধের সেই টানাপোড়েন থেকেই মঙ্গলবার দেশটির প্রেসিডেন্টকে মামলার ভয় দেখালেন পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো। খবর জিও নিউজ, ডনের। 

কয়েকদিন ধরেই তুমুল বাগ্বিতণ্ডা দেখা দিয়েছে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এবং জাতীয় পরিষদের সচিবালয়ের মধ্যে। কারণ, প্রেসিডেন্টের বিরোধিতা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় ১০টায় পার্লামেন্টে নতুন অধিবেশনের আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় পরিষদ সচিবালয়। 

দেশটির সংসদবিষয়ক তত্ত্বাবধায়ক মন্ত্রণালয় সোমবার প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির কাছে এ বিষয়ে একটি সারসংক্ষেপও পাঠিয়েছিল। তবে তাতে স্বাক্ষর করেননি প্রেসিডেন্ট। বরং নিজের ক্ষমতাবলে ১৫ দিনের জন্য অধিবেশন স্থগিত করে দেন। তা সত্ত্বেও পাকিস্তানের পার্লামেন্ট জাতীয় পরিষদের সচিবালয় নতুন মেয়াদের উদ্বোধনী অধিবেশন আহ্বান করেছে। 

আর এ নিয়ে নতুন করে জল ঘোলা হয়ে উঠেছে পাকিস্তানের রাজনীতিতে। সমালোচনার তোপ ছুড়ছেন পিটিআই নেতারা। তাদের দাবি, পার্লামেন্টের অধিবেশন ডাকার এখতিয়ার জাতীয় পরিষদ সচিবালয়ের নেই। সচিবালয়ের পক্ষে যুক্তি দেখাচ্ছে পিএমএল-এন, পিপিপি নেতারাও। 

মঙ্গলবার ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক কথোপকথনের সময় পিটিআই নেতা বাবর আওয়ান বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন প্রেসিডেন্ট। অধিবেশন আহ্বানন করার কোনো এখতিয়ার স্পিকারের নেই।’ 

তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, অধিবেশন ডাকা সংবিধান-পরিপন্থি হওয়ার সমতুল্য। এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘যদি কোনো সরকার (এভাবে) গঠন করা হয়, তা হবে সংবিধানের পরিপন্থি। 

কাসিম সুরির রায় সম্পর্কে মামলার রায় বর্তমান; একজন স্পিকার শুধু একটি অধিবেশন স্থগিত করতে পারেন।’

জাতীয় পরিষদের স্পিকারের নেতৃত্বে সোমবার এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পরিষদের সচিবালয়ের কর্মকর্তারা ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা। 

সংবিধানের ৯১(২) ধারার অধীনে অধিবেশন আহ্বানের সিদ্ধান্ত নেন স্পিকার। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা স্পিকারকে বলেন, প্রেসিডেন্ট আলভি দাবি প্রত্যাখ্যান করলেও জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বানে সাংবিধানিক কোনো বাধা নেই। তারা বলেন, নির্বাচনের ২১ দিনের মধ্যে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বানে আইনগতভাবে বাধ্য প্রেসিডেন্ট। সোমবার এ ঘোষণার পর থেকেই আবার গরম হয়ে উঠেছে দেশটির রাজনীতি। 
মঙ্গলবার সেই আগুনে ঘি ঢাললেন বিলাওয়াল। বললেন, প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির বিরুদ্ধে দুটি মামলা হবে। একটি মামলা হবে অনাস্থার সময় সংসদ ভেঙে দেওয়ার জন্য এবং অন্যটি সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় পরিষদের অধিবেশন না ডাকার জন্য। 

ইসলামাবাদে সুপ্রিমকোর্টের বাইরে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় দেশের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে এদিন এভাবেই নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। 

বলেন, আলভি সাহেব সংবিধান ভঙ্গ করেছেন। সেখান থেকেই তো সমস্যা শুরু। আরিফ আলভি সংবিধান ভঙ্গ করে তার দায়িত্ব পালন করছেন না। প্রেসিডেন্ট যদি সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন না করেন তবে স্পিকার তা পূরণ করবেন। কারণ, সংবিধানে লেখা আছে, যে কোনো মূল্যে ২৯ ফেব্রুয়ারি অধিবেশন ডাকতে হবে। এ সময় অভিশংসনের পরিবর্তে নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আরেকজন প্রেসিডেন্টকে এনে আরিফ আলভিকে সরিয়ে দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন বিলাওয়াল।

পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচনের ২১ দিনের মধ্যে পার্লামেন্টের অধিবেশন আহ্বানে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু এই অধিবেশন প্রত্যাখ্যান করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। কারণ, নির্বাচিত রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যেই সংরক্ষিত আসনগুলোর আসন বণ্টন করেছে। কিন্তু ইমরান খানের দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোট গঠন করলেও তাদের সংরক্ষিত আসন দেওয়া হয়নি। এমন অসম্পূর্ণ অধিবেশনের কারণেই বিষয়টিতে মত নেই প্রেসিডেন্টের। 

উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভিকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। ফলে ইমরান খানের প্রতি তার আনুগত্য আছে। এসব কারণে তিনি অধিবেশন আহ্বানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।


 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম