পাকিস্তানে প্রেসিডেন্টের বিরোধিতা সত্ত্বেও পার্লামেন্ট অধিবেশন আহ্বান
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:৪২ পিএম
পাকিস্তানের পার্লামেন্ট, ছবি: ডন
পাকিস্তানে নবনির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ জোট এবং জাতীয় পরিষদের সচিবালয়ের সঙ্গে তুমুল বিরোধিতা সৃষ্টি হয়েছে প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভির। সেখানে সংবিধানের অধীনে নির্বাচনের ২১ দিনের মধ্যে নতুন পার্লামেন্টের অধিবেশন আহ্বানে বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে অধিবেশন আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এর কারণ নির্বাচিত রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচন কমিশন সংরক্ষিত আসনগুলোর আসন বণ্টন করেছে। কিন্তু ইমরান খানের দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগ দিলেও তাদেরকে সংরক্ষিত আসন দেওয়া হয়নি। তা ঝুলিয়ে রেখেছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু কেন, সে প্রশ্নের কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভিকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। ইমরান খানের প্রতি তার আনুগত্য আছে। এসব কারণে তিনি অধিবেশন আহ্বানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তা সত্ত্বেও পাকিস্তানের পার্লামেন্ট জাতীয় পরিষদের সচিবালয় আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় নতুন মেয়াদের উদ্বোধনী অধিবেশন আহ্বান করেছে।
সোমবার সচিবালয় থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সংবিধানের ৯১ ধারার অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ২১তম দিবসের মধ্যে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ ধারা অনুযায়ী ২১তম দিনে অধিবেশন আহ্বান করতে পারেন প্রেসিডেন্ট আলভি। কিন্তু তিনি তা করেননি। এ অবস্থায় জাতীয় পরিষদের সচিবালয় বলেছে, নির্বাচনের ২১তম দিনে অধিবেশন আহ্বান করা নিয়ে প্রেসিডেন্ট ও স্পিকারের নোটিফিকেশন অত্যাবশ্যক নয়।
সোমবার সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জিও নিউজ বলেছে, আসন্ন সাংবিধানিক সংকট ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষিতে পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষের উদ্বোধনী অধিবেশন আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি আহ্বানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিদায়ী স্পিকার রাজা পারভেজ আশরাফ। এর আগে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বানের সামারি প্রত্যাখ্যান করেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। এরপরই সচিবালয় থেকে অধিবেশন আহ্বান করা হয়। এই অধিবেশনেই নির্বাচিত এমপিরা শপথবাক্য পাঠ করবেন। প্রেসিডেন্ট আলভি মনে করেন, এখনও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংরক্ষিত আসনগুলো বণ্টন করা হয়নি। এর ফলে পার্লামেন্ট অসম্পূর্ণ। এ জন্য অধিবেশন আহ্বান করা যাবে না।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংরক্ষিত আসন বণ্টন করেছে। কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সুন্নি ইত্তেহাত কাউন্সিল (এসআইসি) দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর তাদেরকে সংরক্ষিত আসন দেয়নি নির্বাচন কমিশন। উল্টো তারা বলেছে, এসআইসির সংরক্ষিত আসন কমিশনের কাছে মুলতবি অবস্থায় আছে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দাবি করেছে নওয়াজ শরীফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএলএন) নেতৃত্বাধীন জোট। এই জোটে আরেকটি বড় দল হলো আসিফ আলি জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। দলগুলোর নেতারা বলেছেন, সংবিধানের অধীনে নির্বাচনের ২১ দিনের মধ্যে পার্লামেন্টের অধিবেশন আহ্বান করতে হবে।
সূত্র বলেছে, জাতীয় পরিষদের স্পিকারের নেতৃত্বে এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পরিষদের সচিবালয়ের কর্মকর্তারা ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র বলেছে, সংবিধানের ৯১(২) ধারার অধীনে অধিবেশন আহ্বানের সিদ্ধান্ত নেন স্পিকার। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা স্পিকারকে বলেন, প্রেসিডেন্ট আলভি দাবি প্রত্যাখ্যান করলেও জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বানে সাংবিধানিক কোনো বাধা নেই। তারা বলেন, নির্বাচনের ২১ দিনের মধ্যে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বানে আইনগতভাবে বাধ্য প্রেসিডেন্ট। এটাই সংবিধানের ডেডলাইন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আইন ও পার্লামেন্ট বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে শলাপরামর্শ করেছে জাতীয় পরিষদের সচিবালয়। পিপিপির সিনেটর শেরি রেহমান বলেন, জাতীয় পরিষদ আহ্বানে কোনো শর্ত দেওয়ার মতো অবস্থানে নেই রাষ্ট্রের প্রধান।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) শেরি রেহমান বলেন, সংবিধানের অধীনে যেকোনো পরিস্থিতিতে যত দ্রুত সম্ভব অধিবেশন আহ্বানে বাধ্য প্রেসিডেন্ট। কোনোভাবে সেই সময়সীমা ২১ দিন পাড় হতে পারবে না। এর অর্থ নতুন পার্লামেন্টের অধিবেশন আহ্বানে ২১ দিন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ক্ষমতা আছে প্রেসিডেন্টের।