পোশাকে আরবি লেখা থাকায় পাকিস্তানে কিশোরীকে পিটিয়ে হত্যার চেষ্টা
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৪:৪৭ পিএম
আরবি হরফ লেখা পোশাক পরায় পাকিস্তানে এক কিশোরীকে ঘিরে ধরে পিটিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে উন্মত্ত জনতা। তবে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় ওই কিশোরী রক্ষা পেয়েছে। রোববার লাহোরের জনাকীর্ণ ইচরা বাজারে এই ঘটনা ঘটে।
বিবিসি জানিয়েছে, পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরে ওই রেস্তোরাঁয় আসা নারীটির পোশাকে আরবি ক্যালিগ্রাফি ছিল। স্থানীয়দের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, সেখানে কুরআনের আয়াত লেখা।
ফলে, অল্প সময়ের মধ্যেই অনেক বিক্ষুব্ধ লোক জড়ো হয়ে যান সেখানে। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি।
লাহোর পুলিশ বিবিসিকে বলেছে, রোববার স্থানীয় সময় ১টা ১০ মিনিটে তারা প্রথম একটি টেলিফোন কল পায়। ওই সময় টেলিফোনে পুলিশকে জানানো হয়, পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরের একটি রেস্তোরাঁয় এক নারীকে ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
সহকারী পুলিশ সুপার সাইয়েদা শেহরবানোর নেতৃত্বে একটি দল ছুটে আসে ঘটনাস্থলে। তারা দৃঢ়তার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দেন।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, শেহরবানো রেস্তোরাঁর প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে ক্রমশ উত্তেজিত হয়ে ওঠা জনতার মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা করছেন। পুলিশের ওপর আস্থা রাখতে বলছেন তাদের।
লাহোর পুলিশের সহকারী সুপারিন্টেনডেন্ট সৈয়দা শেহরবানো বলেন, কেউ আসলে জানত না শার্টে কি লেখা ছিল। পোশাকটিতে ক্যালিগ্রাফি করা আরবি হরফে ‘হালওয়া’ শব্দটি মুদ্রিত ছিল। আরবি ভাষায় ‘হালওয়া’ শব্দের অর্থ মিষ্টি। ‘সুন্দর’ অর্থেও ব্যবহৃত হয় শব্দটি। কিন্তু স্থানীয়রা সেটিকে ভুল করে কুরআনের আয়াত ভেবেছিল।
শেহরবানো বলেন, সবচেয়ে দুঃসাধ্য কাজ ছিলো ওই নারীকে নিরাপদে ওই জায়গা থেকে বের করে আনা।
ভুক্তভোগীকে একটি বোরকার সঙ্গে হিজাবের মতো করে মাথা ও মুখমণ্ডল ঢেকে বের করে নিয়ে আসেন তিনি। এ সময় তাদের বেষ্টন করেছিল পুলিশ সদস্যরা। উত্তেজনামুখর পরিস্থিতিতে একরকম দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তারা।
কট্টরপন্থী দল তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান (টিএলপি) এর সমর্থকরা ভিড়ের মধ্যে ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
لاہور کے ایک علاقے میں پیدا ہونے والی ناخوشگوار صورتحال کے دوران اپنی جان خطرے میں ڈال کر خاتون شہری کو مشتعل ہجوم سے بحفاظت بچا کر لے جانے والی ایس ڈی پی او گلبرگ لاہور اے ایس پی شہربانو نقوی کو پنجاب پولیس کی طرف سے بے مثال جرات اور بہادری کا مظاہرہ کرنے پر قائد اعظم پولیس میڈل… pic.twitter.com/pgibw6Y6lf
— Punjab Police Official (@OfficialDPRPP) February 25, 2024
শেহরবানো জানান, তাকে সমবেত লোকজনের সাথে রীতিমত আলোচনা করতে হয়েছিল।
তিনি বলেন, আমরা তাদের বলি, এই নারীকে আমাদের সঙ্গে করে নিয়ে যাবো, তার কর্মকাণ্ড আইনিভাবে আমলে নেয়া হবে এবং দেশের আইন অনুসারে যদি তিনি কোনো অপরাধ করে থাকেন তবে অবশ্যই তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হবে।
তাকে একটি থানায় যাওয়া হয়। সেখানে বেশ কয়েকজন আলেমের মতামত নেয় হয়। তারা নিশ্চিত করেন যে, পোশাকের লেখাটিতে আরবি ক্যালিগ্রাফিই ছিল, কুরআনের আয়াত নয়।
তখন পুলিশ আলেমদের একটি ভিডিও রেকর্ড করতে বলে। ভিডিওতে তাদের মতামত এবং নারীটি যে নির্দোষ সেটি উল্লেখ করা হয়। অবশ্য ওই নারীও ক্ষমা চেয়েছেন।
নিজেকে একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান দাবি করে তিনি বলেন, আমার তেমন কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। ভুল বোঝাবুঝির কারণে এটা ঘটেছে। তারপরও যা ঘটেছে তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী, এবং নিশ্চিত করে বলছি আর কখনো এমন হবে না।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তিনি কেনাকাটা করতে লাহোরে এসেছিলেন এবং দ্রুতই শহর ছেড়ে চলে গেছেন।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা তাহির মাহমুদ আশরাফি এক্স (টুইটার) পোস্টে লিখেছেন, ওই নারীর নয়, ক্ষমা চাওয়া ছিল ভিড়ের মধ্যে থাকা পুরুষদের।
এ ধরনের ঘটনা প্রতিনিয়ত বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন সাইয়েদা শেহরবানো।
তিনি বলেন, আমি যদি উচু গলায় কথা না বলতাম এবং জনতাকে আস্থায় নিতে না পারতাম যে আমরা একটা কিছু করব, তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারতো... স্রষ্টাকে ধন্যবাদ।
এই সহকারী পুলিশ সুপার ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছেন। পাঞ্জাবের পুলিশ প্রধান তার সাহসিকতার জন্য পুরষ্কৃত করার ঘোষণা দিয়েছেন।