Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

বিক্ষোভ জমাতে ট্রাক্টরেই তাঁবুঘর

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:৩৩ পিএম

বিক্ষোভ জমাতে ট্রাক্টরেই তাঁবুঘর

কাকডাকা ভোরের কুয়াশায় রাজধানী দিল্লির পথে হাজার হাজার যানবাহনের সারি। দীর্ঘ লাইনে পেছনে ফেরার পথ নেই। ‘দিল্লি চলো’ স্লোগানে জড়ো হয়েছেন ভারতের ৩ রাজ্যের কৃষকরা। 

নিজেদের একাধিক দাবি আদায়ে পতাকা নেড়ে, হর্ন বাজিয়ে আওয়াজ তুলছেন তারা। মোদি সরকারের কাছ থেকে অধিকার নিশ্চিত করতে একেবারে আটঘাট বেঁধেই ঘর ছেড়েছেন কৃষকরা। 

৬ মাসের খাবার নিয়ে ছুটছেন দিল্লির পথে। বিক্ষোভ জমাতে তাঁবুঘেরা ট্রাক্টরেই বানিয়েছেন ঘরবাড়ি। তবে ক্ষোভ ও মনোকষ্ট নিয়ে রাজধানীর পথে রওয়ানা হওয়া কৃষকদের দিতে ঢুকতে দিচ্ছে না পুলিশ। 

দিল্লি সীমান্তে ফটকগুলো রীতিমতো দুর্গ বানিয়ে ফেলেছে পুলিশ। প্রথম দিনের পর বুধবার আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনেও কাঁদানে গ্যাসসহ একাধিক হামলার শিকার হয়েছেন কৃষক। খবর এনডিটিভি, এএফপির।

কৃষকদের আন্দোলন এবারই প্রথম নয়। এর আগে ২০২০ সালের আন্দোলনেও সরকারের সহযোগিতা পায়নি তারা। পূর্ব অভিজ্ঞতার জেরে সুচ থেকে হাতুড়ি সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েই বের হয়েছেন কৃষকরা। কিশান মজদুর মোর্চা এবং সম্মলিত কৃষাণ মজদুর মোর্চা (অ-রাজনৈতিক), ১৫০টি ইউনিয়নের একটি ব্যানারে ২৫০টি কৃষক ইউনিয়ন নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে এ আন্দোলন। 

অধিকাংশ কৃষকই ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তর প্রদেশের। সব মিলিয়ে প্রায় ৫,০০০ কৃষক অংশ নিয়েছেন এ প্রতিবাদে। তাই পুলিশরাও এবার বেশ সতর্ক! কড়াকড়ি নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দিয়েছে দিলি­ অভিমুখী প্রতিটি রাস্তা। 

বিশাল বিশাল ভারী কংক্রিটের ব্যারিকেডের সামনে রাখা হয়েছে কাঁটাতারের শক্ত বেড়া। পুলিশদের ছোড়া অবিরাম গুলি থেকে বাঁচতে মাটিতে বসে আছেন কৃষকরা। এর মধ্যেই নতুন করে কৃষক নেতাদের আলোচনায় প্রস্তাব দিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। তার দাবি, কাতারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপত ভারতের সাবেক নৌসেনা কর্মীদের যদি দেশে ফেরানো যায়, তবে আলোচনার মাধ্যমে সব কিছুই সম্ভব। 

মঙ্গলবার একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে অনুরাগ জানান, কৃষক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা দীর্ঘায়িত হচ্ছে, যেহেতু নতুন চাহিদার কথা জানাচ্ছেন তারা। প্রতিবাদীদের প্রতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পরামর্শ, প্রতিবাদ যেন হিংসাত্মক না হয়। কাঁদানে গ্যাস ছোড়া বন্ধ না হলে, কেন্দ্রের সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা করবেন না তারা। 

ভারতীয় কিশান ইউনিয়নের নেতা জগজিৎ সিংহ দালে­ওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তার অভিযোগ, পুলিশ কৃষকদের দিকে লাগাতার কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে চলেছে। তা বন্ধ না হলে কৃষকরা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন না বলেই স্পষ্ট করেছেন জগজিৎ। তবে পুলিশের এমন আচরণে বেশ ক্ষেপেছেন অন্যান্য কৃষকরা। 

পাঞ্জাবের লুধিয়ানার ৬৫ বছর বয়সি কৃষক সন্তোখ সিং বলেন, ‘আমরা শুধু আমাদের নেতাদের কাছ থেকে সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় আছি। তারা একবার বললে আমরা এসব বাঁধা ভেঙে দেব। 

আরও এক কৃষক মোহন সিং বলেন, ‘পুলিশ আমাদের সঙ্গে এমন আচরণ করছে যেন আমরা তার শত্রুদেশ থেকে এসেছি। আমরা শুধু দিল্লি গিয়ে আমাদের অধিকারের কথা বলতে চাই, কিন্তু ইতোমধ্যেই আমাদের মধ্যে ১৫০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।’ ভিড়ের মধ্যে আরও একজন চিৎকার করে বলেন, ‘আমরা যুদ্ধে জয়ী হয়ে দিল্লি যাব।’ 

সেসময়ে আন্দোলনের নেতারা মাইক দিয়ে সবাইকে সংযত থাকার আহ্বান জানান। অন্যদিকে পুলিশও কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েই যাচ্ছে। কৃষকরা কোনো আইন ভঙ্গ করলে তাদের আটকাতে মরিচের গুঁড়া ব্যবহার করা হবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ। 

পুলিশের ঘোষণা দিয়েছেন, ‘কৃষকরা সীমানা পার করে আসার চেষ্টা করলে আমরা তাদের মোকাবিলা করব। দিল্লির পরিস্থিতি যাতে ঠিক থাকে, তাই তাদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হবে।’ 

উল্লেখ্য, কৃষকদের দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো : কৃষিপণ্যের সর্বনিম্ন মূল্য (এমএসপি) নিশ্চিতকরণ, ঋণ মওকুফ, আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সঙ্গে সব মুক্তবাণিজ্য চুক্তি ও অন্যান্য চুক্তি বাতিল, বিদ্যুৎ বোর্ডের বেসরকারীকরণ স্থগিত, কৃষিতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ, করপোরেটাইজেশন নিষিদ্ধ করা এবং কৃষকদের জন্য পেনশন চালু করা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম