সরকার গঠনের পরিকল্পনা, সমর্থকদের যে বার্তা দিল ইমরানের দল
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:২৮ এএম
ছবি: সংগৃহীত
১৬তম সাধারণ নির্বাচনে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ইতোমধ্যে জয় দাবি করেছেন। আর এবার ইমরানের দল সমর্থিত প্রার্থীরা সরকার গঠনের পরিকল্পনা করছেন।
একই সঙ্গে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ না হলে সমর্থকদের বিক্ষোভে নামারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খবর রয়টার্স।
রোববার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের কারাবন্দি বিরোধীদলীয় নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল সমর্থিত প্রার্থীরা সরকার গঠনের পরিকল্পনা করছেন বলে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর একজন সিনিয়র সহকারী শনিবার জানিয়েছেন। এ ছাড়া নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ না হলে সমর্থকদের শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: নওয়াজের দলকে দুঃসংবাদ দিল পিপিপি
পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের মোট আসন সংখ্যা ২৬৬টি। এর মাঝে ২৫৬ আসনের ফল ঘোষণা করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, ইমরান খানের দল পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই স্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন।
আরও পড়ুন: জোটে গেলেন নওয়াজ, ইমরান সমর্থিত স্বতন্ত্ররা এখন কী করবেন
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন বলেছে, ফল ঘোষণা করা ২৫৬ আসনের মধ্যে কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দলের সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৯৯ আসনে জয়ী হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।
আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ৭৩ আসনে জয় পেয়েছে। এ ছাড়া প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টিও ৫৩ আসনে জয় পেয়েছে বলে জানানো হয়েছে। বাকিগুলো ছোট কিছু দল জিতেছে।
মূলত ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফকে (পিটিআই) দল হিসাবে বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেওয়া হয়নি। এমনকি তাদের নির্বাচনি প্রতীকও ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। আর তাই ইমরানের দলের প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
রয়টার্স বলছে, ইমরান খান এবং তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ উভয়ই শুক্রবার বিজয় ঘোষণা করেছেন। এই অবস্থায় কে পরবর্তী সরকার গঠন করবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা বেড়েছে, সেটিও আবার এমন একসময়ে যখন দেশটিতে একাধিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দ্রুত নীতিগত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
এমন অবস্থায় ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ইনসাফ (পিটিআই) পার্টির চেয়ারম্যান গহর খান পাকিস্তানের ‘সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে’ তার দলের ম্যান্ডেটকে সম্মান করার আহ্বান জানিয়েছেন। ব্যারিস্টার গহর সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর আইনজীবী হিসেবেও কাজ করেন।
এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, শনিবার রাতের মধ্যে ভোটের পূর্ণাঙ্গ ফল প্রকাশ করা না হলে দলটি রোববার সারা দেশে সরকারি অফিসের বাইরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করবে।
এদিকে ইমরান খানের শত শত সমর্থক পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর পেশোয়ারে দলের দুই নেতার নেতৃত্বে সমাবেশ করেছে। তারা অভিযোগ করেছেন, নির্বাচনে জয়ী হওয়া সত্ত্বেও তাদের পরাজিত ঘোষণা করা হয়েছে।
ইমরান খানের সাবেক প্রাদেশিক মন্ত্রীদের একজন তৈমুর খান ঘাগরা বলেছেন, ‘আমরা কখনই আশা করিনি, আমাদের সঙ্গে এমনটি ঘটবে।’
এ সময় বিক্ষোভকারীরা ভোট জালিয়াতির বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।
রয়টার্স বলছে, রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ফাঁস ও দুর্নীতি থেকে এবং ‘বেআইনি বিয়ের’ অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ইমরান খানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এবং কারাবাস সত্ত্বেও বিশ্বকাপজয়ী সাবেক এই তারকা ক্রিকেটারের লাখ লাখ সমর্থক তাকে ভোট দিতে এসেছিল। যদিও কারাগারে থাকাকালীন ইমরান কোনো সরকারের অংশ হতে পারবেন না।
মূলত পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে মোট আসন ৩৩৬। এর মধ্যে ২৬৬ আসনে সরাসরি ভোট হয় (বৃহস্পতিবার ভোট হয়েছে ২৬৫ আসনে)। আর ৭০ আসন সংরক্ষিত। এর মধ্যে ৬০ আসন নারীদের ও ১০ আসন অমুসলিম প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত।
আর পাকিস্তানের নির্বাচনি আইন অনুযায়ী, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সংরক্ষিত আসন বরাদ্দ পেতে পারে না। মূলত ৭০ আসন দলীয় শক্তি অনুযায়ী বণ্টন করা হয়। এর মধ্যে ২০ আসন পেতে পারে নওয়াজ শরিফের দল।
ইমরান খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং মিডিয়া উপদেষ্টা জুলফি বুখারি রয়টার্সকে বলেছেন, চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পরের দিনই ঘোষণা করা হবে যে, কোন দলীয় ব্যানারে তারা স্বতন্ত্রদের যোগ দিতে বলবে। মূলত পাকিস্তানে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নিজেরাই সরকার গঠন করতে পারে না; এবং তাদের কোনো একটি দলে যোগ দিতে হবে।