Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

সেনাপিঞ্জরে বন্দি পাকিস্তানের মুক্তি মিলবে কবে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:৫৫ পিএম

সেনাপিঞ্জরে বন্দি পাকিস্তানের মুক্তি মিলবে কবে

কথিত আছে, বিশ্বের সব দেশেরই সেনাবাহিনী আছে। তবে পৃথিবীতে সেনাবাহিনীর একটি দেশ আছে। আর সেই দেশটি হলো পাকিস্তান। ১৯৪৭ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকে গত ৭৭ বছর ধরে পর্দার আড়াল থেকে পাকিস্তানের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করছে সেনাবাহিনী। এর মধ্যে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে সরাসরি পাকিস্তানকে শাসনও করেছে তারা। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী কয়েক দশক ধরে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করেছে, সেই কথা ২০২২ সালের নভেম্বরে তৎকালীন সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া স্বীকার করেছিলেন। 

সেসময় বিদায়ি ভাষণে ‘সেনাবাহিনী পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকবে’- এমন কথাও দিয়েছিলেন তিনি। তবে সেনাপিঞ্জরে বন্দি পাকিস্তানের মুক্তি এখনো মিলেনি। মাত্র ১৪ মাস পরই বাজওয়ার দেওয়া আশ্বাস হাওয়ায় মিলে গেছে। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হওয়া পাকিস্তানের এবারের সাধারণ নির্বাচনই তার প্রমাণ। পুরোপুরি সেনাছায়ায় এদিন সম্পন্ন হয়েছে ভোটগ্রহণ। আলজাজিরা।

এমনকি ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরও নির্বাচনের ফলাফল পাওয়া যায়নি। ভোটের দিনে বন্ধ ছিল পাকিস্তানের মুঠোফোন সেবা। এবারের নির্বাচনে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ দলের কোনো লেভেল প্লেয়িং প্রতিদ্বন্দ্বীও ছিল না।

নির্বাচনের আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণাসহ তার দলীয় প্রতীক ‘ব্যাট’ বাতিল করে দিয়েছিল দেশটির নির্বচন কমিশন (ইসিপি)। পিটিআইয়ের সদস্যদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশ নিতে হয়েছে।

পাকিস্তানের ইতিহাসে কোনো প্রধানমন্ত্রীই পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। অথচ চারজন সামরিক স্বৈরশাসকের মধ্যে তিনজনই নয় বছরেরও বেশি সময় ধরে শাসন করতে পেরেছিলেন। পাকিস্তানের সামরিক সম্পর্কে লাহোর-ভিত্তিক সাংবাদিক এবং সম্পাদক বদর আলম বলেন, ‘সেনাবাহিনীর বিশ্বাস, তারা পাকিস্তানের অস্তিত্বের কেন্দ্রবিন্দু এবং দেশের অ-সামরিক ক্ষেত্রগুলোসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে সবচেয়ে প্রভাবশালী হিসাবে রয়ে গেছে।’

পাকিস্তানের একজন সাবেক ফেডারেল মন্ত্রী আসাদ উমর বলেন, পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর সেনাবাহিনীর আধিপত্য বিস্তার স্বাধীনতার মাত্র এক বছর পর থেকে শুরু হয়েছিল। ১৯৪৮ সালে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কারণে সেনাবাহিনীর আধিপত্য জন্ম নেয়। আগে আসাদ উমর আগে পিটিআই-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের মাত্র এক দশক পর তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল আইয়ুব খান একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ করলে দেশে প্রথমবারের মতো সামরিক আইন জারি করা হয়। এরপর থেকে সামরিক বাহিনী ধারাবাহিকভাবে অন্য যেকোনো সরকারি বিভাগের চেয়ে বেশি বাজেটের সংস্থান পেয়েছে।

পাকিস্তানের দুবারের সাবেক অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল বলেন, ‘১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন ক্ষমতা গ্রহণের মাধ্যমে সামরিক আইন জারি করার পর পাকিস্তানে তাদের (সামরিক বাহিনীর) প্রবেশ স্বাভাবিক হয়ে যায়।’

পাকিস্তানের আরেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বলেন, ‘সামরিক বাহিনী একমাত্র প্রতিষ্ঠান যা পাকিস্তান ব্রিটিশ ভারতের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছে তার চেইন অব কমান্ড, লজিস্টিকস এবং এমনকি গ্যারিসন এবং যুদ্ধাস্ত্র সম্পূর্ণরূপে অক্ষত।’ মূলত ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের ১৯৪৮, ১৯৬৫ , ১৯৭১ এবং ১৯৯৯ সালের একাধিক যুদ্ধ সেনাবাহিনীর কেন্দ্রীয়তাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল। ভারতের হুমকি থেকে বাঁচতে নিজেদের বাহিনীকে আরও প্রসারিত ও শক্তিশালী করার জন্য ধারাবাহিতভাবে রাজ্য থেকে বড় তহবিলও পেয়েছে।

লাহোর ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক ফয়েজ বলেন, ‘একটি হাইব্রিড শাসন ব্যবস্থার সুন্দর উদাহরণ হলো পাকিস্তান। 

এখানে রাজনৈতিক শ্রেণিও বিভক্ত। বেসামরিক সরকারগুলোও জনগণের কাছে খুব একটা পৌঁছাতে পারেনি।’ পাকিস্তানের পরিস্থিতি অনেকটা ‘ডিম আগে নাকি মুরগি আগে পরিস্থিতি’র মতো বলা যায় বলে উল্লেখ করেন তিনি। অন্যদিকে আন্ডার দ্য গান : পলিটিক্যাল পার্টিস অ্যান্ড ভায়োলেন্স ইন পাকিস্তান বইয়ের লেখক নিলুফার সিদ্দিকী যুক্তি দেন, রাজনৈতিক দলগুলো ত্রুটিপূর্ণ হলেও তাদের ব্যর্থতার কারণ ‘ঘনঘন সামরিক হস্তক্ষেপ’।

আরও পড়ুন:

>>আমরা হানাহানি চাই না: নওয়াজ শরিফ

>>ইমরানপন্থিরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে কে হবেন প্রধানমন্ত্রী?

>>পাকিস্তানে এগিয়ে ইমরানপন্থি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

>>নির্বাচনের ফল নিয়ে যা বললেন মরিয়ম নওয়াজ

>>কারাগারে বসে চমক দেখালেন ইমরান খান

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম