সাইফার কী, যে কেলেঙ্কারিতে ফাঁসলেন ইমরান খান
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:৪৭ পিএম
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তার সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশিকে সাইফার মামলায় ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার দেশটির বহুল আলোচিত রাষ্ট্রীয় গোপন নথি ফাঁস বা সাইফার মামলায় বিশেষ এক আদালত এ কারাদণ্ড ঘোষণা করেছেন।
দেশটিতে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে পিটিআইয়ের প্রধানের বিরুদ্ধে নতুন করে সাজা ঘোষণায় আবারও আলোচনায় এসেছে সাইফার মামলা। এ সাইফার মামলা কী এবং কেন ইমরান খানের বিরুদ্ধে এ মামলায় ১০ বছরের সাজা দেওয়া হলো? এ নিয়ে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ বিস্তারিত এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
আরও পড়ুন: তোশাখানা মামলা: ইমরান-বুশরা বিবির ১৪ বছরের কারাদণ্ড
সাইফার কেলেঙ্কারি কী?
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে করা সাইফার মামলা মূলত গোপন এক কূটনৈতিক নথি বা তারবার্তার সঙ্গে সম্পর্কিত। ওয়াশিংটনে নিযুক্ত পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত মাজিদ ইসলামাবাদে ইমরান খানের সরকারের কাছে একটি গোপন নথি পাঠিয়েছিলেন। আর সেই নথির বিষয়বস্তু প্রকাশ্যে এনেছিলেন পিটিআইয়ের এ প্রতিষ্ঠাতা।
নথিতে ইমরান খানকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির প্রমাণ আছে বলে দাবি করে পিটিআই। ইমরান খান রাষ্ট্রীয় গোপনীয় এই নথি নিজের কাছে রেখেছিলেন এবং এর বিষয়ব্স্তু জনসম্মুখে তুলে ধরেছিলেন।
গত কয়েক মাসের মধ্যে দ্বিতীয় কোনো মামলায় পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতাকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা ঘোষণা করা হলো। এর আগে দুর্নীতির এক মামলায় ইমরান খানের বিরুদ্ধে তিন বছরের কারাদণ্ডের সাজা দেন দেশটির একটি আদালত। দুর্নীতির মামলার সাজা চ্যালেঞ্জ করায় তার কারাদণ্ডের মেয়াদ স্থগিত করা হলেও এ মামলার কারণে ইতোমধ্যে আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: তোষাখানা মামলা কী
মঙ্গলবারের এই রায় রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বিশেষ আদালতের বিচারক আবুল হাসনাত জুলকারনাইন পিটিআইয়ের উভয় নেতার উপস্থিতিতে ঘোষণা করেন। পাকিস্তানের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট-২০২৩ এর আওতায় বিশেষ আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত বছর এ আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে বিচারক জুলকারনাইন আদিয়ালা কারাগারে মামলাটির শুনানি করছেন।
সাইফার মামলার বিষয়বস্তু কী?
পাকিস্তানে এই বিতর্কের শুরু হয় ২০২২ সালের ২৭ মার্চ; ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার মাত্র এক মাস আগে। এক জনসমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার সময় দলীয় কর্মী-সমর্থকদের সামনে একটি চিঠি প্রদর্শন করেন। এ সময় তিনি দাবি করেন, একটি দেশের কাছ থেকে আসা সাইফার এটি। পিটিআইয়ের সরকারকে উৎখাত করার জন্য ইমরান খানের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করছে সেই দেশটি; যার প্রমাণ চিঠিতে আছে।
তিনি চিঠির বিষয়বস্তু খোলামেলাভাবে প্রকাশ করেননি বা এটি কোন দেশ থেকে এসেছে তা প্রকাশ করেননি। যদিও তার বক্তৃতায় চিঠির বিষয়বস্তুর ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়। তবে কয়েক দিন পর তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার দায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেন। তিনি বলেন, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু তাকে অপসারণ করতে চেয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: ইমরান খানের ১০ বছরের কারাদণ্ড
সাইফারটি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাজিদের সঙ্গে ডোনাল্ড লুর বৈঠক সম্পর্কিত। পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, ‘তিনি সাইফারের বিষয়বস্তু পড়েছেন। এতে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে পাকিস্তানের সবকিছু ক্ষমা করা হবে বলে উল্লেখ আছে।
পরে ওই বছরের ৩১ মার্চ পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে স্পষ্ট হস্তক্ষেপের অভিযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘শক্তিশালী প্রতিবাদ’ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়।
এপ্রিলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এনএসসির বৈঠক ডাকেন। বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির সদস্যরা চিঠিতে বিদেশি ষড়যন্ত্রের কোনো প্রমাণ পাননি বলে সিদ্ধান্তে পৌঁছান।
এই ঘটনায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তৎকালীন ফেডারেল মন্ত্রী আসাদ উমর এবং তৎকালীন মুখ্যসচিব আজমের দুটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়। সেই অডিও দেশটিতে ব্যাপক ঝড় তোলে এবং সাধারণ জনগণের অনেকে হতবাক হয়েছিলেন। অডিওতে মার্কিন সাইফারকে কীভাবে ব্যবহার করে সুবিধা আদায় করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করতে শোনা যায় তাদের।