একটি গোলাপি জাম্পার পরে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকেন ইয়ানা লিয়াখ (২৬)। আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা তিনি। স্বামী সেনাবাহিনীর সদস্য হয়ে ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধ করছে। লিয়াখের শহরে অনবরতই চলে রুশ বাহিনীর বোমা হামলা। একটু নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে কয়েক সপ্তাহ আগেই চলে এসেছেন প্রসূতি ওয়ার্ডে।
ইউক্রেনের পূর্ব দোনেৎস্ক অঞ্চলের পোকরভস্ক শহরে একটি হাসপাতালে অবস্থান করছেন তিনি। ব্যথিত হয়ে বলেন, ‘আমি মানসিক চাপের কারণে এখানে এসেছি’। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে লিয়াখের মতো এমন অনেক নারীই এখন অকাল প্রসবের আতঙ্কে সময় পাড় করছে। খবর এএফপির।
বোমা পড়ার ঝুঁকির কারণে ভীষণ আতঙ্কে ছিলেন গর্ভবতী লিয়াখ। হঠাৎ হঠাৎ বোমার শব্দে গর্ভবস্থায়ই ‘পঞ্চমতলা থেকে প্রথমতলা পর্যন্ত দৌড়াতেন’ তিনি।
লিয়াখ বলেন, ‘এ কারণেই আমি এখানে এসেছি। কারণ আমার অকাল প্রসবের হুমকি ছিল।’ ওয়ার্ডের অন্য একটি বিছানায়, আট মাসের গর্ভবতী কাটিয়া ব্রেন্ডিউচকোভাও (২০) একই শঙ্কায় আছেন। তিনি বলেন, ‘আমারও এখন সমস্যা হচ্ছে। অকাল প্রসবের সম্ভাবনা আছে।’
রাশিয়ার হামলার পর থেকেই ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন ইউক্রেনের গর্ভবর্তী নারীরা। মানসিক চাপ ও ভয়ে অনেকেই অকালে জন্ম দিচ্ছে বাচ্চা। এ সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। সারাবেলায় হামলার ভয়, স্বামী ও সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করার কারণে অনেক নারীই গর্ভকালীন নানা ঝুঁকির মধ্যে সময় পার করছেন। নানান অপুষ্টি ও অসুখে বেড়ে উঠছে অসময়ে জন্ম নেওয়া সেসব নবজাতকরা।
প্রসূতি বিভাগের প্রধান লিউবভ ড্যাটসিক বলেন, ২০২৩ সালে প্রসবের প্রায় ২০ শতাংশ শিশু নির্ধারিত সময়ের আগেই জন্ম নিয়েছিল। যা যুদ্ধের আগে ১০ শতাংশ ছিল।
মাতৃত্ব ইউনিটের প্রধান ইভান সিগানক বলেন, ‘অকাল প্রসব হয় দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপের কারণে। আমাদের রোগীরা এক ধরনের ধূসর অঞ্চলে রয়েছে এবং পুরো দোনেৎস্ক অঞ্চলটি একটি যুদ্ধ অঞ্চল; ফলে অকাল প্রসবের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যখন আমাদের সন্তান থাকে, আমরা চাই তাদের একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ হোক। কিন্তু আজ তারা জন্মগ্রহণ করেছে যুদ্ধের সময়। তারা যুদ্ধের শিশু।’