সালেহ আরুরিকে হত্যার পরিণতি কেমন হতে পারে
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০৬:৩৪ পিএম
লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় দাহিয়া এলাকার একটি ভবনে ড্রোন হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। ড্রোন থেকে পর পর তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়।
মঙ্গলবার এ হামলায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের রাজনৈতিক শাখার উপপ্রধান সালেহ আল আরুরি ও কাসাম ব্রিগেডসের দুই কমান্ডারসহ অন্তত সাতজন নিহত হন।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের গত ৭ অক্টোবরের হামলার পর ইসরাইল-ঘোষিত গুপ্তহত্যা মিশনের প্রথম শিকার হলেন সালেহ আল আরুরি।
হামাসের রাজনৈতিক শাখার উপপ্রধান আরুরিকে গত ৭ অক্টোবরের ইসরাইলবিরোধী আল আকসা তুফান অভিযানের ‘প্রধান স্থপতি’ বলে অভিহিত করা হয়।
ওই গুপ্তহত্যার পর পরই ইসমাইল হানিয়া বলেন, নিহত আরুরি ও তার সহকর্মীদের তাজা রক্ত গাজা উপত্যকা ও পশ্চিমতীরের হাজার হাজার নিহতের রক্তের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। এই রক্ত বৃথা যাবে না।
সালেহ আল আরুরি (৫৭) ছিলেন ফিলিস্তিনের গাজাভিত্তিক প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাসের পলিটব্যুরোর উপপ্রধান। তিনি ছিলেন সশস্ত্র গোষ্ঠীটির সামরিক শাখা আল-কাসেম ব্রিগেডসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।
সালেহ আল আরুরির জন্ম ১৯৬৬ সালে, ফিলিস্তিনের রামাল্লাহর কাছাকাছি আরুরা গ্রামে। তিনি ইসলামি শরিয়া বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ১৯৮৭ সালে তিনি হামাসে যোগ দেন।
আরুরি ছিলেন একজন মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দি, যিনি ইহুদিবাদী ইসরাইলের কারাগারে ১৫ বছর কাটিয়েছেন। মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই তিনি লেবাননে নির্বাসিত জীবনযাপন করছিলেন।
আরুরি ২০১১ সালে ইসরাইলি সেনা গিলাত শালিতের মুক্তির বিনিময়ে বহু ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্ত করার ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন।
সম্প্রতি আরুরি হামাসের অন্যতম মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করে আসছিলেন। গত মাসে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে বলেছিলেন, হামাস গাজা যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগে জিম্মি বিনিময় চুক্তি নিয়ে কোনো আলোচনা করবে না।
নভেম্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, তিনি ইসরাইলের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদকে এই নির্দেশ দিয়েছেন যে হামাসের সব নেতা, তারা যে যেখানেই থাকুন না কেন, তাদের হত্যা করতে হবে।
গত ডিসেম্বরের গোড়ার দিকে ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেটের প্রধানের একটি রেকর্ডিং ফাঁস হয়।
এতে তিনি ইসরাইলি পার্লামেন্টের সদস্যদের বলেন, গাজা, পশ্চিম তীর, লেবানন, তুরস্ক, কাতার—সর্বত্র হামাস নেতাদের হত্যা করা হবে।
৭ অক্টোবর হামাসের হামলার বিষয়ে আগে জানতে না পারার মতো অত্যন্ত গুরুতর গোয়েন্দা ব্যর্থতার জেরে ইসরাইলের বর্তমান সরকার তীব্র সমালোচনা ও প্রচণ্ড চাপের মধ্যে আছে। নেতানিয়াহুর নেওয়া গুপ্তহত্যার মিশন তার সরকারের প্রতি জনসমর্থন জোরদার করতে পারে।
তবে এ মিশনে উদ্বেগও আছে। কেননা, এই ধরনের কৌশল ইসরাইলের জন্য বুমেরাং হতে পারে।
ইসরাইলের আগের গুপ্তহত্যার নিশানা থাকা কেউ কেউ গার্ডিয়ানকে বলেছেন, তারা নিবৃত্ত হননি, বরং তারা আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েছেন।
অন্যরা বলছেন, এই ধরনের প্রচেষ্টার মাধ্যমে ব্যক্তি বা সংগঠনের যেকোনো ক্ষতিই সাময়িক।
বিশ্লেষকেরাও বলেছেন, গুপ্তহত্যার পরিণতি প্রায়ই খুব অপ্রত্যাশিত বা অনিশ্চিত হয়ে থাকে। একজন নেতার মৃত্যু একটি গোষ্ঠীকে তার কৌশল পরিবর্তনে বাধ্য করতে পারে। এমনকি সহিংসতা ত্যাগ করতেও বাধ্য করতে পারে। কিন্তু একইভাবে অন্য কারও উত্থান ঘটাতে পারে, যিনি হয়তো আরও অনমনীয়।