রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে। যুদ্ধ শুরুর পরপরই দুই দেশের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ভাগ হয়ে গেছে বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ সরাসরি ইউক্রেনকে সমর্থন করছে। অন্যদিকে এই যুদ্ধে নিরপেক্ষ অবস্থানে আছে ভারত ও চীনের মতো দেশগুলো। ২০২৩ সালে এসে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ অনেক ক্ষেত্রে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা বাড়িয়েছে। প্রায় দুই বছর ধরে বিশ্ব শাসনের গর্ভে বড় হতে থাকা এ ‘তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের ফোড়া’কে সঙ্গী করেই শুরু হলো নতুন বছর ২০২৪। বিশ্বরাজনীতিসহ বিভিন্ন দেশের আন্তঃরাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে এই বছর।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের চিফ রিস্ক অফিসারস আউটলুক-২০২৩ এ বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্রমাগত অস্থিরতা সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই প্রধান উদ্বেগের বিষয়। ‘ইউরোপে চলমান যুদ্ধ ও মার্কিন-চীন অব্যাহত অর্থনৈতিক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে তা আশ্চর্যজনক’ বলে উল্লেখ করেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। আর এই উদ্বেগ মূলত তৈরি হয়েছে উচ্চ ব্যবসায়িক খরচ, বাণিজ্য বিধিনিষেধ, বাজারের অস্থিরতা ও বিভিন্ন ‘নীতিতে তীক্ষ্ণ পরিবর্তনের’ কারণে।
পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নির্বাচনি বছর হবে ২০২৪। নতুন বছরে বিশ্বজুড়ে ৭৮টি দেশে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু করে বছরের শেষ পর্যন্ত চলবে নির্বাচন। ব্রাজিল ও তুরস্কসহ কিছু দেশে সাধারণ নির্বাচন না হলেও পৌরসভা নির্বাচনের মতো স্থানীয় কিছু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৭ মার্চ। এবারের নির্বাচনেও রাশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনই জয়ী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। মে মাসে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র ভারতের সাধারণ নির্বাচন। আফ্রিকার সবচেয়ে শিল্পোন্নত দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাচনও হবে একই মাসে। এবারের ভোটে দেশটির আমূল পরিবর্তন ঘটতে পারে সেখানে।
নতুন বছরের মার্চেই শেষ হবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পাঁচ বছরের মেয়াদ। যদিও দেশটিতে সামরিক আইনের অধীনে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। তবুও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে কিয়েভ। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নজর কাড়বে মেক্সিকোও। দুই নারী প্রার্থী সেখানে শীর্ষ পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
বছরের শেষের দিকে পুরো বিশ্বের চোখ থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে চলবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও ২০২৪ সালে সাধারণ নির্বাচনের কথা জানিয়েছেন। তবে নির্বাচনি তারিখ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
২০২৪ সালে নির্বাচন করা অন্য আফ্রিকান দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- আলজেরিয়া, বতসোয়ানা, চাদ, কোমোরোস, ঘানা, মৌরিতানিয়া, মরিশাস, মোজাম্বিক, নামিবিয়া, রুয়ান্ডা, সেনেগাল, সোমালিল্যান্ড, দক্ষিণ সুদান, তিউনিসিয়া এবং টোগো। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ক্রোয়েশিয়া এবং ফিনল্যান্ড। এছাড়াও রয়েছে পশ্চিম এশিয়ার দেশ ইরানও। কিছু নির্বাচন উন্মুক্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু হলেও কিছু দেশে নির্বাচন হবে নিছক আনুষ্ঠানিকতা। তবে আসন্ন বছরের প্রতিযোগিতা গণতন্ত্রকে নতুন রূপ দিতে পারে।
বিশ্বব্যাপী নির্বাচনের এই সুপারসাইকেল চলমান ভূ-রাজনৈতিক জটিলতাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে নতুন কৌশল গ্রহণ করতে হবে বিভিন্ন দেশকে।
২০২৪ সালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মহাসাগরগুলোর নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাবে। নতুন যুগে টিকে থাকতে বিশ্বের বিভিন্ন কোম্পানিগুলোকে তাদের ব্যবসার মডেল, কৌশল, সাপ্লাই চেইন ও স্থায়ীত্বের পরিকল্পনাগুলোকে সামঞ্জস্য করতে হবে। ভূ-রাজনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা ইওয়াই জিওস্ট্র্যাটেজিক বিজনেস গ্রুপ তাদের ২০২৪ আউটলুক প্রকাশ করেছে। ২০২৪ সালে ভূরাজনীতি ‘অত্যন্ত অস্থির’ হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
২০২৪ সালে এককেন্দ্রিক শাসনের বাইরে এসে বহুমুখী শাসনের দ্বারস্ত হবে বিশ্ব। বিশ্বশাসনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। আন্তর্জাতিক এজেন্ডাগুলোতে আরও বেশি প্রভাব ফেলবে ভারত, সৌদি আরব, তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলের মতো দেশগুলো।