কেমন হবে এরদোগানের ২০২৪ সালের পররাষ্ট্রনীতি
সজীব হোসেন
প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ০৬:২২ পিএম
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান। ছবি: স্কাই নিউজ
বিশ্বের নানা সংকট আর অনিশ্চয়তার সময় এক সম্ভাবনার নাম যেন তুরস্ক। দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংঘাতময় মুহূর্তে শান্তির বার্তা দিয়ে নায়কের ভূমিকায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা, প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পে পদক্ষেপ, ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা এবং ইসরাইল-ফিলিস্তিনি সংঘাত বন্ধ করতে মধ্যস্ততাকারীর ভূমিকায় অবিরাম কাজ করে গেছে তুরস্ক।
এ অব্যাহত ধারা ২০২৪ সালেও বজায় রাখবে আঙ্কারা। নতুন বছরে প্রতিবেশী দেশগুলোতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ও বিশ্বজুড়ে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে তুরস্ক।
ইতোমধ্যে বিশ্বে হিংস্র রূপ নিয়েছে মেরুকরণের রাজনীতি। বলা চলে, ইউক্রেনে পরোক্ষ যুদ্ধে লিপ্ত বিশ্বের দুই পরাশক্তি রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র।
অন্যদিকে হামাস-ইসরাইল সংঘাত ইস্যুতে সমগ্র বিশ্বের মুসলিমদের ঘৃণার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে ইসরাইলকে সহায়কাকারী সবচেয়ে বড় দেশ যুক্তরাষ্ট্র।
এমন সময় মুসলিম অধ্যুষিত অন্যতম বৃহৎ দেশ ও রাশিয়াঘেঁষা তুরস্কের জন্য দেশীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখে পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন বেশ কঠিন।
এদিকে আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচন। এ দুটি নির্বাচনের ফলাফলও পশ্চিমা বিশ্বের ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণ করবে।
ডেইলি সাবাহর প্রতিবেদন অনুসারে চলুন জেনে নেই নতুন বছরে তুরস্কের পররাষ্ট্রনীতি কেমন হতে পারে-
ইউক্রেন যুদ্ধ
ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে শুরু থেকেই অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেছে তুরস্ক। নতুন বছরেও তুর্কি কূটনীতির একটি প্রধান লক্ষ্য হবে এটি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ বছর আঙ্কারায় সফর করার কথা রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এ সফর ইউক্রেন ইস্যু, জ্বালানি, সিরিয়া এবং অন্যান্য আঞ্চলিক ইস্যুতে ইতিবাচক সংলাপের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করতে পারে।
হামাস-ইসরাইল সংঘাত
হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে চলা সংঘাতের সমাধান করতে চায় তুরস্ক। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের গণহত্যার বিরুদ্ধে কথা বলবে তুরস্ক।
যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করতে ভূমিকা রাখবে দেশটি। সেই সঙ্গে ফিলিস্তিন-ইসরাইল ইস্যুতে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানকে বাস্তবে পরিণত করার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার চেষ্টা করবে তুরস্ক।
এফ-১৬ যুদ্ধবিমান আমদানি
ন্যাটোর সদস্য পদ পেতে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের পথ সহজ করে দিলে তুরস্ককে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাওয়ার ক্ষেত্রেও বাধা অপসারণের আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আঙ্কারা আশা করছে, জো বাইডেন প্রশাসন ২০২৪ সালের শুরুর দিকে তুর্কিয়ার কাছে একযোগে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান বিক্রির অনুমোদন দিতে কংগ্রেসকে অনুরোধ করবে।
যদি এ ব্যাপারে তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্র একটি চুক্তিতে পৌঁছতে পারে তবে দুই দেশের সম্পর্কে ইতিবাচক হাওয়া বইবে।
সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান
২০২৪ সালে ইরাক ও সিরিয়ায় আরও কার্যকর ও বিস্তৃত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালাবে তুরস্ক। সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) এবং উত্তর ইরাকের কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছে তুরস্ক।
প্রসঙ্গত, ৩৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে পিকেকে তুরস্কের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তুরস্ক, আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন পিকেকে-কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। মহিলা ও শিশুসহ ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয় এ সংগঠনকে।