Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

ফিরে দেখা ২০২৩

ঘুরে দাঁড়াল শ্রীলংকা

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:১৪ পিএম

ঘুরে দাঁড়াল শ্রীলংকা

শ্রীলংকার প্রেসিডেন্টের বাসভবনে বিক্ষোভকারীদের হানা। ফাইল ছবি

হাঁটিতে শেখে না কেহ না খেয়ে আছাড়- কবি কালি প্রসন্ন ঘোষের অমৃত এ বচনটি আরও একবার খাঁটি হয়ে উঠল দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকায়। কী লংকা কাণ্ডটাই না ঘটে গিয়েছিল পর্যটক প্রিয় সুন্দর এ ভূখণ্ডে! দেনার দায়ে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল পুরো রাষ্ট্র। 

২০২২ সালের কথা- টানা কয়েক মাসের অপ্রতিরোধ্য জনরোষের স্রোতে ভেসে গিয়েছিল দ্বীপের দণ্ডমুণ্ডের হর্তাকর্তা রাজাপাকসে পরিবার। শুধু লংকাবাসীই নয়, গোটা বিশ্বই একরকম নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল, দৈন্যদশার অতল সাগরে হারিয়ে যাবে ছোট্ট এই লংকাপুরী! 

হয়তো আর জেগে উঠবে না কোনদিন! কিন্তু তাবৎ বিশ্বের সে ‘ব্রহ্মজ্ঞান’কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াল শ্রীলংকা! এএফপি, বিবিসি, সিএনএন।

অর্থনৈতিক মন্দা দশায় নাজেহাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল দেশটির সাধারণ মানুষের জীবন। দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল সরকার। দেখা দিয়েছিল খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানি সংকট। ঘরে ঘরে চলছিল বিদ্যুৎ ঘাটতি। চরম মুদ্রাস্ফীতিতে পথে বসে যায় সাধারণ মানুষ। তবে ধীরে ধীরে এ পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে শ্রীলংকা। মাত্র দেড় বছরের ব্যবধানে দেশটি দেউলিয়া হওয়া থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছে। দীর্ঘ এ যাত্রায় সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটাই হয়েছে ২০২৩ সালে। বিবিসি।

২০২২ সালে চার হাজার ৬০০ কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণ প্রদান করতে না পারায় বেশ বিপদে পড়ে যায় শ্রীলংকা। রিজার্ভ চলে যায় তলানিতে। তবে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে থাকা দেশটির পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্থিতিশীল। এমনকি এখন ঋণও পরিশোধ করছে দেশটি। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের ঋণের ৭৫ শতাংশ ফেরত দিয়েছে শ্রীলংকা। পাশাপাশি অন্যান্য দেশ ও সংস্থার ঋণও এখন একটু একটু করে পরিশোধ করে দিচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তিতে ১০ কোটি ডলার ফেরত দিয়েছে। 

এর আগে ১৭ আগস্ট প্রথম কিস্তিতে ফেরত দিয়েছিল পাঁচ কোটি ডলার। বাকি পাঁচ কোটি ডলারও চলতি মাসে ফেরত আসার বিষয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা। বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে কারেন্সি সোয়াপ চুক্তির আওতায় ২০ কোটি বা ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছিল শ্রীলংকা।

গত এক বছরে দেশটিতে সংকটকালীন অবস্থা থেকে অনেকটাই মুক্তি মিলেছে। যেখানে গত বছরের সেপ্টেম্বরে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬৯.৮ শতাংশ, জুলাইয়ে তা কমে হয়েছে ৬.৩ শতাংশ এবং আগস্টে তা আরও কমে যায় ৪ শতাংশে। শ্রীলংকর কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে এ মূল্যস্ফীতি আরও কমে আসবে। তাদের তথ্যানুযায়ী, জুলাইয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তিন কোটি ৮০ লাখ ডলার বেড়ে হয়েছে ৩৭৬ কোটি ২০ লাখ ডলার।

ঋণের বোঝা থেকে মুক্তি পেতে শ্রীলংকা বেশকিছু পন্থা অবলম্বন করেছে। দেশটির পর্যটন খাত এক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। পর্যটন খাতে সুদিন ফেরাতে আয় বেড়েছে গত বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশের বেশি। রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ৭৬ শতাংশ। তবে এই এক বছরে সবচেয়ে বড় অগ্রগতি হয়েছে শ্রীলংকার শিল্প উৎপাদনের ক্ষেত্রে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ। কৃষি খাতও ভালো করতে শুরু করেছে শ্রীলংকা। বিশেষ করে চা ও রাবার রপ্তানি বেড়েছে। মার্চে দেশটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ২৯০ কোটি ডলার বেইল আউট ঋণ পেয়েছে। এ মাসে কলম্বোতে আবার আসছে আইএমএফ টিম। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ঋণের পরবর্তী কিস্তি ছাড় করবে। 

আইএমএফ বলছে, ‘টেকসই উন্নয়নের সম্ভাবনা আমরা দেখতে পাচ্ছি।’ শ্রীলংকার বিপর্যস্ত পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক প্রিয়াঙ্গা দুনুসিংহে। তিনি বলেন, ‘সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু নীতি পরিস্থিতির উন্নতিতে ভূমিকা রেখেছে। পাশপাশি রেমিট্যান্স ও পর্যটনের মতো কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে আরও অনেক দূর যেতে হবে।’ সরকার ব্যয় কমিয়ে রাজস্ব বাড়িয়েছে এবং সংস্কার কার্যক্রম জোরদার করে করজাল বিস্তৃত করেছে। তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন ঋণদাতা দেশ এবং আইএমএফের মতো সংস্থার সঙ্গে সরকার আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে রপ্তানি বাড়তে শুরু করেছে। রেমিট্যান্স অনেক গুণ বেড়েছে। আবার পর্যটনের মতো খাত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। পাশাপাশি গত বছর বিপুল পরিমাণ দক্ষ ও আধা দক্ষ শ্রমিক বিদেশে গেছেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম