গাজায় নতুন বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা ইসরাইলের
শাবনুর নাহার
প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:২০ পিএম
বিধ্বস্ত গাজার চারদিকে শুধু ধ্বংসের স্তূপ। ধ্বসে পড়া ইট-পাথরের নিচে কত শত লাশ পড়ে আছে তা অজানা। ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহতের রক্তের দাগে ভিজে আছে মাটি। এত এত হত্যাযজ্ঞের পর সেই মাটিতেই আবার নিজের স্বপ্ন পূরণের নীলনকশা আঁকছে ইসরাইল।
নতুন বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা এগোচ্ছে পুরোদমে। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের চলমান গণহত্যামূলক যুদ্ধের মধ্যেই এমন ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইলে রাষ্ট্রীয় রিয়েল এস্টেট কোম্পানি হ্যারে জাহাভ।
সোমবার আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গাজার উপকূলীয় অঞ্চলে ‘সৈকত বাড়ি’ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। এ পরিকল্পনার অংশ হিসাবে কোম্পানির বিজ্ঞাপনে স্লোগান দেওয়া হয়েছে-‘সৈকতে বাড়ি স্বপ্ন নয়’। নীরবে নয় বরং বিশ্বকে দেখিয়েই পরিকল্পনাগুলো করছে। বরাবরের মতো এই ভূখণ্ড দখল পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছে না কেউই। মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে বিশ্ব।
অথচ হামলার শুরু থেকেই গাজা পুনঃদখলের কোনো ইচ্ছা নেই বলে বড় গলায় ঢাক পেটাচ্ছে ইসরাইল। হামাসকে নিশ্চিহ্ন করাই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য।
জাতিসংঘে ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান ১৫ অক্টোবর সিএনএনকে বলেন, ‘গাজা দখল অথবা সেখানে থাকার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই। হামাস আমাদের হুমকি। এজন্য হামাসকে নিশ্চিহ্ন করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’
মুখে মুখে গাজা দখলের ইচ্ছে নেই বললেও এটাই যে তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য এবার তারই প্রমাণ দিল ইসরাইল। ইংল্যান্ডের কর্মী সারাহ উইলকিনসন মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেছেন, ‘একটি ইসরাইলি রিয়েল এস্টেট ফার্ম ইতোমধ্যেই গণহত্যাকে অর্থায়ন করছে। ইসরাইলের বোমা হামলায় সৃষ্ট গাজার সমতল ভূমিতে বসতি নির্মাণের নকশা তৈরি করছে।’
গত সপ্তাহে সেটলার গ্রুপগুলোর একটি জোটের সমাবেশে ইসরাইলি রাজনৈতিক ও সামরিক নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ‘হ্যারে জাহাভ’র প্রস্তাবটি এসেছে। সমাবেশটির নাম ছিল-প্র্যাকটিক্যাল প্রিপারেশন ফর গাজা সেটেলমেন্ট কনফারেন্স। আলজাজিরা।
ইসরাইলি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক মিসগাভ ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড জায়োনিস্ট স্ট্র্যাটেজি জানিয়েছে, বর্তমান সময়টি সমগ্র গাজা উপত্যকা খালি করার অনন্য এবং বিরল সুযোগ। ইসরাইলি সরকার বসতি স্থাপনকারী সংস্থাগুলোকে তহবিল দিয়ে থাকে।
নাম গোপন রাখা অন্য একটি কোম্পানি বলেছে, আমরা হ্যারে জাহাভের জন্য দক্ষিণ গাজা উপত্যকার ‘গুশ কাতিফ’ অঞ্চলে মাঠ প্রস্তুত করার কাজ করছি। ইসরাইলের এ পদক্ষেপের নিন্দা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বলছেন, গাজাবাসীকে মিসরের সিনাই উপদ্বীপে জোরপূর্বক বিতাড়িত করার জন্য একটি পরিকল্পনার খসড়াও তৈরি করেছেন ইসরাইলের গোয়েন্দামন্ত্রী গিলা গামলিয়েল।
গাজার ধ্বংসাবশেষে বসতি স্থাপনের এ পরিকল্পনা ‘নাকবা’র বেদনাদায়ক স্মৃতিকে মনে করিয়ে দেয়। ১৯৪৮ সালে আধুনিক ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় ইহুদিবাদী জঙ্গিরা ৫০০টিরও বেশি ফিলিস্তিনি শহর ও গ্রাম মাটিতে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়েছিল ৭ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ।