গাজার মানবিক অঞ্চলও মানুষের অনুপযোগী
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:২৩ পিএম
গাজায় ৭ দিনের যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছিল গত ২৪ নভেম্বর। এই যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পরপরই দক্ষিণ গাজায়ও আক্রমণ শুরু করেছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চাপের মুখে বেসামরিক হত্যা কিছুটা কমানোর কৌশল হিসাবে একটি নির্দিষ্ট ম্যাপ মেনে গাজার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ফিলিস্তিনিদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে তারা।
দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসি শহরের একটি নির্দিষ্ট স্থানকে ‘মানবিক অঞ্চল’ হিসাবে ঘোষণা করে সেখানে তাদের আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে ইসরাইল। কিন্তু বিধ্বস্ত গাজার মানবিক অঞ্চলও এখন মানুষের বসবাসের অনুপযোগী। বিমানবন্দরের চেয়েও একটি ছোট এলাকায় থাকছে ১৮ লাখ মানুষ। আল-মাওয়াসি শহর আয়তনে লন্ডনের ১২.১৪ বর্গকিলোমিটারের হিথ্রো বিমানবন্দরের প্রায় কাছাকাছি, যা প্রায় ১ কিলোমিটার (০.৬ মাইল) প্রশস্ত ও ১৪ কিলোমিটার (৮.৭ মাইল) দীর্ঘ। আর এই অঞ্চলের মাত্র ৬.৫ বর্গকিলোমিটার (২.৫ বর্গ মাইল) জনশূন্য, বালুকাময় একটি এলাকাকে ‘নিরাপদ স্থান’ হিসাবে ঘোষণা করেছে ইসরাইলি বাহিনী। বিসিসি, আলজাজিরা।
কিন্তু ফিলিস্তিনিদের জন্য ইসরাইলের ঘোষণা করা মানবিক অঞ্চল প্রকৃতপক্ষেই মানুষের বসবাস উপযোগী কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত বছর লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর দিয়ে প্রায় ৬ কোটি ১০ লাখ মানুষ যাতায়াত করেছে। এই সংখ্যা গড়ে প্রতিদিনে দাঁড়ায় ১ লাখ ৬৭ হাজার জনে। আর এই হিসাবে আল-মাওয়াসির ‘নিরাপদ’ অংশে জনসংখ্যার ঘনত্ব হিথ্রোর চেয়ে ২০ গুণের বেশি। বিশেষজ্ঞরাও ইসরাইলের ঘোষণা করা নিরাপদ স্থানগুলোকে ফিলিস্তিনি জনসংখ্যা ধারণে অক্ষম বলে মনে করছেন।
রামাল্লা-ভিত্তিক আইন বিশেষজ্ঞ বুশরা খালিদি এ বিষয়ে বলেন, ‘এই স্থানগুলোতে জনাকীর্ণ অবস্থার কারণে কলেরা ও গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিসের মতো রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।’
উত্তর গাজা থেকে পালিয়ে প্রথমে খান ইউনুসে আশ্রয় নিয়েছিলেন রিম আবদ রাবু। বর্তমানে আল-মাওয়াসির ‘মানবিক’ অঞ্চলের একটি তাঁবুতে আরও চার পরিবারের সঙ্গে থাকছেন তিনি।
গত কয়েক সপ্তাহ তিনি এখানে মাটিতে ঘুমিয়ে থেকেছেন। রিম বলেন, ‘আল-মাওয়াসি একটি পরিত্যক্ত জায়গা। এটি মানুষের বসবাস উপযোগী নয়। একদিনের জন্য পানি পেলে পরের ১০ দিনের জন্য পাওয়া যায় না। এমনকি বাথরুমের পানির ক্ষেত্রেও তাই ঘটে। আর বিদ্যুৎ প্রায় পাওয়া যায় না বললেই চলে।’
বোমাবর্ষণে না মরলেও আল-মাওয়াসিতে আশ্রয় নেওয়া মানুষের মৃত্যু হবে অনাহারে। বর্তমানে এখানের সব মানুষ ক্ষুধার্ত আর তৃষ্ণার্ত। আলজাজিরার শনিবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত দুদিন ধরে না খেয়ে আছে আল-মাওয়াসিতে আশ্রয় নেওয়া বাসিন্দারা। নতুন তাঁবু স্থাপনের জায়গাও প্রায় ফুরিয়ে এসেছে।
আল-মাওয়াসির জমির মালিকরা ছোট ছোট অংশে ভাগ করে উদ্বাস্তুদের কাছে হয় ভাড়া দিচ্ছেন না-হয় বিক্রি করছেন। এমনকি তাঁবুসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে বাধ্য হচ্ছেন আল-মাওয়াসিতে আশ্রয় নেওয়া বাসিন্দারা। মোনা আল-আসতাল নামের এক ফিলিস্তিনি এই কথা জানিয়েছেন। ‘মানবিক’ অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েও তিনি নিরাপদ বোধ করছেন না বলেও উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, এখানে আসার পরও গোলাগুলির শব্দে তিনি প্রায় সারা রাত জেগে থাকেন।
এছাড়া ‘মানবিক অঞ্চলে’ পানি, বিদ্যুৎ অথবা অন্যান্য মৌলিক সরবরাহের অভাবের কথাও বর্ণনা করেছেন মোনা। একটি ছোট জায়গায় অতিরিক্ত মানুষ একসঙ্গে থাকায় উকুন, চিকেন পক্স ও অন্ত্রের সংক্রমণসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকির কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। এছাড়া এই অঞ্চলেও আবহাওয়াও অত্যন্ত ঠান্ডা। বৃষ্টি শুরু হলেই বন্যা হওয়ার উচ্চঝুঁকিতে আছে আল-মাওয়াসি।