যে কারণে আল-শিফা হাসপাতাল ইসরাইলের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:০২ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় আহত হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে আল-শিফা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। সেখানেই হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। জ্বালানি সংকটের কারণে গত ৮ নভেম্বর গাজার প্রধান এ হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার গ্রেফতার হয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক।
আল-শিফা হাসপাতাল গাজা উপত্যকার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল। ফিলিস্তিনিদের কাছে এটি ‘নিরাময় ঘর’। আর ইসরাইলের ধারণা— এটি হামাসের মূল আস্তানা। ৭ অক্টোবর ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত শুরুর পর থেকে হাসপাতালটি অনেক বার হামলার শিকার হয়েছে।
আল-শিফা কী, কেন এটিকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে?
‘দার আল-শিফা’-এর বাংলা অর্থ হলো— ‘নিরাময়ের ঘর’। এটি গাজা উপত্যকার সবচেয়ে বড় চিকিৎসাকেন্দ্র। এখানে তিনটি বিশেষায়িত বিভাগ আছে। বিভাগগুলো হলো— শল্যচিকিৎসা (সার্জিক্যাল), সাধারণ চিকিৎসা (ইন্টারনাল মেডিসিন) এবং অবসটেট্রিকস ও গাইনোকলজি (স্ত্রীরোগ)।
গাজার উত্তরাঞ্চলীয় এলাকা রেমালে হাসপাতালটির অবস্থান। মূলত সেখানে একসময় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ব্যারাক ছিল। ১৯৪৬ সালে এটিকে হাসপাতালে পরিণত করা হয়। ১৯৮০-এর দশকে মিশরের শাসনাধীন এবং ইসরাইলি দখলদারি চলার সময় এটিকে বিস্তৃত করা হয়।
জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা প্রয়োজন, এমন মানুষের কাছে হাসপাতালটি যেন প্রাণসঞ্চারকারী। ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের (এমএসএফ) সম্প্রতি এক প্রতিবেদন অনুসারে, হাসপাতালটির ধারণক্ষমতা ৭০০ হলেও সেখানে চিকিৎসকরা প্রায় ৫ হাজার মানুষকে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। এ ছাড়া ইসরাইলি হামলার কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়া হাজারও মানুষ হাসপাতাল প্রাঙ্গণ এবং এর করিডরে আশ্রয় নেন।
ফিলিস্তিনের উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের বিশেষ ত্রাণ সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) পরিচালিত আবু আসসি স্কুলে গত সপ্তাহে বোমা হামলা হয়। হামলার পর হাসপাতালটি হতাহতদের দিয়ে ভরে যায়। ইসরাইলি হামলায় হতাহত বহুসংখক ফিলিস্তিনিকে ওখানে সেবা দেওয়া হচ্ছিল।
আল-শিফা হাসপাতালের শল্যচিকিৎসা বিভাগের প্রধান মারওয়ান আবুসাদা এক বিবৃতিতে বলেন, স্বাভাবিক দিনগুলোতে হাসপাতালে ২১০ রোগী ভর্তি হতে আসেন।
হাসপাতালটিতে কর্মীর সংখ্যাও কমে গেছে। গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বিমান হামলায় হাসপাতালটির ১৫০ চিকিৎসাকর্মী নিহত হয়েছেন।
কেন ইসরাইল বারবার হামলা চালায়?
আল-শিফা হাসপাতালটি ইসরাইলি বাহিনীর হামলার প্রধান লক্ষ্যবস্তু। ইসরাইলি বাহিনীর দাবি, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সদর দপ্তরের ওপরে হাসপাতালটির অবস্থান। ২০০৭ সাল থেকে গাজার শাসনক্ষমতায় আছে হামাস।
গত মাসে ইসরাইলি সেনাবাহিনী একটি ভিডিও প্রকাশ করে। এটি ছিল স্যাটেলাইট চিত্র এবং অ্যানিমেটেড গ্রাফিকসের সংমিশ্রণ। ভিডিওতে দাবি করা হয়, হাসপাতালটির নিচের অংশ হামাস ব্যবহার করছে বলে তাদের কাছে প্রমাণ আছে। তারা আরও দাবি করেছে, সেখানে হামাসের সুড়ঙ্গ, বৈঠককেন্দ্রসহ আরও বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা আছে।
হামাস এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, সেখানে ৪০ হাজারের বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
হামাস ও আল-শিফা হাসপাতালের মধ্যে যোগসূত্র থাকার ব্যাপারে এবারই প্রথম দাবি করা হয়নি। ২০১৪ সালে গাজায় ইসরাইলের স্থল অভিযানের পর মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অভিযোগ করেছিল, হাসপাতালটির পরিত্যক্ত এলাকাগুলোতে রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর নৃশংসতা চালাচ্ছে হামাস। মানবাধিকার সংগঠনটি আরও অভিযোগ করেছিল, গাজায় যুদ্ধাপরাধ করেছে ইসরাইল।
এর আগে ২০১৪ সালে গাজায় ইসরাইলি অভিযানের সময়ও হাসপাতালটি হামলার শিকার হয়েছিল। তখন হাসপাতালটিতে বিস্ফোরণে ১০ শিশু নিহত হয়।
সূত্র: আলজাজিরা