হামাসের অস্ত্রভান্ডারের অস্তিত্ব মেলেনি
ভুল তথ্যে আল-শিফায় সেনা অভিযান
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ১০:২২ পিএম
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের বৃহত্তম চিকিৎসাকেন্দ্র আল-শিফা হাসপাতালে এখন আর পানি ও অক্সিজেন নেই। পানির অভাবে সেখানকার মুমূর্ষু রোগীরা তৃষ্ণায় কাতরাচ্ছে। এসব রোগীর শান্তিতে মৃত্যু নিশ্চিত করতে অসহায় ডাক্তাররা বাধ্য হয়ে দিচ্ছেন ‘বেদনানাশক’। এ পরিস্থিতিতেও ইসরাইলি সৈন্যরা হাসপাতালের ভেতরে অবস্থান করছে। হামাসের খোঁজে সময়ে সময়ে চালাচ্ছে তল্লাশি। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফা তল্লাশির পরও সেখানে হামাসের সন্ধান পায়নি ইসরাইল। অথচ এই মিথ্যা অজুহাতেই তারা সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মদদে তাণ্ডব চালিয়েছে। খবর আল জাজিরা, বিবিসির।
ইসরাইলের একাধিক হামলায় আল-শিফা হাসপাতালে এখন আর চিকিৎসা ব্যবস্থা বলে কিছু অবশিষ্ট নেই। পানের উপযোগী কোনো পানি ও অক্সিজেন নেই এবং রোগীরা তৃষ্ণায় চিৎকার করছেন বলে হাসপাতালের পরিচালক জানিয়েছেন। ইসরাইলি ট্যাংক হাসপাতাল ঘিরে আছে এবং ওপরে ড্রোন চক্কর দিচ্ছে। বৃহস্পতিবারও হাসপাতালের ভেতরে হামাসের সদস্যদের খোঁজে দ্বিতীয় দিনের মতো তল্লাশি চালিয়েছে ইসরাইলি সৈন্যরা।
আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক মুহাম্মদ আবু সালমিয়া জানিয়েছেন, আল-শিফার অবস্থা ‘ভয়াবহ’। এখানে এখনো ৬৫০ জন রোগী, ৫০০ চিকিৎসা কর্মকর্তা এবং পাঁচ হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, নবজাত শিশুদের জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসার প্রয়োজন। কিন্তু কোনো চিকিৎসা তারা প্রয়োজনীয় সামগ্রী না থাকায় দিতে পারছেন না। নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে আবু সালমিয়া বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগীদের আমরা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার জন্য ছেড়ে দিই। আসলে আমরা অসহায়। আমাদের করার কিছুই নেই। তাদের যা প্রয়োজন সেই অস্ত্রোপচার আমরা করতে পারছি না। শেষমেশ রোগী যাতে একটু শান্তিতে মরতে পারে, সেজন্য তাকে ‘বেদনানাশক’ দিই।
তিনি আরও বলেন, ইনকিউবিটরে অক্সিজেন না থাকায় অনেক নবজাত শিশুকে আমরা বাঁচাতে পারছি না। এর আগে ইসরাইলি বাহিনী বলেছিল তারা হাসপাতালে ইনকিউবেটর দেবে। কিন্তু সেটা ছিল তাদের ডাহা মিথ্যাচার।
হাসপাতালের পরিচালক জানান, ইসরাইলি সেনারা হাসপাতালের প্রধান পানির সংযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘অভিযান এখনো চলছে। কেউ এক ভবন থেকে আরেক ভবনে যেতে পারছেন না। আমরা আমাদের সহকর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারছি না।’ হাসপাতালের ভেতরে আটকেপড়া এক সাংবাদিক বিবিসিকে ফোনে জানিয়েছেন, ‘ইসরাইলি সৈন্যদের সব জায়গায় দেখা যাচ্ছে এবং তারা সব দিক থেকে গুলি করছে’।
এদিকে ইসরাইলি সামরিক অবরোধের কারণে আল-শিফা হাসপাতালে থাকা ৭ হাজারেরও বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষ, রোগী এবং চিকিৎসাকর্মী ‘পানি ও খাবারের অভাবে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে’ বলে জানিয়েছে গাজা সরকারের মিডিয়া অফিস। টেলিগ্রামে এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, ‘আল-শিফা হাসপাতালে শিশুদের জন্য কোনো খাবার, পানি বা দুধ নেই। এ ছাড়া হাসপাতালে বিদ্যুৎ না থাকায় অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যু হতে পারে, কারণ এসব শিশু এখন আর ইনকিউবেটর সুবিধা পাচ্ছে না।’
গাজার বৃহত্তম আল-শিফা হাসপাতাল কয়েকদিন ধরে ঘেরাও করে রাখার পর বুধবার ইসরাইলি সেনাবাহিনী সেখানে অভিযান চালায়। সেখানে হামাসের ঘাঁটি রয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরাইল। ইসরাইলের এই দাবিকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্রও জানিয়েছে, তাদের কাছেও আল-শিফা হাসপাতালের নিচে সুড়ঙ্গে হামাসের একটি ‘কমান্ড-অ্যান্ড-কন্ট্রোল সেন্টার’ থাকার তথ্য রয়েছে।
ইসরাইল তাদের এ দাবি প্রতিষ্ঠিত করতে মরিয়া হয়ে বৃহস্পতিবারও বহু সেনা নিয়ে অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু কিছুই মেলেনি। এর আগে আল রানটিসি শিশু হাসপাতালে মার্কিন টেলিভিশন সাংবাদিকদের নিয়ে সামরিক মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি স্বয়ং গুটিকয়েক কালাশনিকভ আর মোটরসাইকেল দেখিয়ে সেগুলো বিদ্রোহীদের বলে তাদের দাবি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছিলেন। আল শিফা হাসপাতালেও সেই একই ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করেছেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল জনাথান কনরিকাস। সেখানে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের প্রমাণ হিসাবে তিনি ম্যাগজিন ছাড়া ছয়টি একে অ্যাসল্ট রাইফেল, একটি ল্যাপটপ আর দুই ক্যান ধুলা ঝাড়ার স্প্রে দেখিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান রাখেন এমন যে কেউই জানেন সেখানে প্রায় সর্বত্রই কালাশনিকভের দেখা মেলে। সেখানে এটা বৈধ এবং খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। আর হাসপাতালের নিরাপত্তার জন্য সেখানে এসব গুটিকয়েক রাখা মোটেও অপরাধের মধ্যে পড়ে না।
তবে ইসরাইলের দাবি অস্বীকার করেছে হামাস ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে আল-শিফা হাসপাতালে ইসরাইলি অভিযানের নিন্দা জানিয়ে একে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ বলে উল্লেখ করেছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। এদিকে ইসরাইলের এ মিথ্যা দাবিতে আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটর।