Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

গাজার আল-শিফা হাসপাতালের চারপাশ ঘিরে ইসরাইলের স্নাইপার সেনা, ট্যাঙ্ক

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:২৭ পিএম

গাজার আল-শিফা হাসপাতালের চারপাশ ঘিরে ইসরাইলের স্নাইপার সেনা, ট্যাঙ্ক

গাজায় বর্তমানে কী ঘটছে তা ভাষায় বর্ণনা করার মতো শব্দও হারিয়ে গেছে। ক্রমাগত কানে আসছে গুলি আর বিস্ফোরণের শব্দ। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলের সেনাবাহিনী। গাজার আল-শিফা হাসপাতালের চারপাশ ঘিরে রেখেছে ইসরাইলের স্নাইপার সেনা, ট্যাঙ্ক। হাসপাতালের ভেতরেও জায়গা থেকে নড়লেই চালানো হচ্ছে গুলি। নিবিড় পরিচর্যা বিভাগকেও টার্গেট করে হামলা চালানো হচ্ছে।
 
হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাসপাতালের মূল অক্সিজেন লাইন। ছাড় দেওয়া হচ্ছে না আইসিইউতে থাকা মৃত্যুর পথযাত্রীদেরও। হাসপাতালের মেঝে থেকে শুরু করে দেওয়াল সব জায়গায় শুধু রক্ত আর রক্ত। গুলির ভয়ে সেগুলোও পরিষ্কার করা যাচ্ছে না। হাসপাতালের বাইরেও বের হতে পারছে না কেউ। কিছু পরিবার পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। তাদের ওপরও চালানো হয়েছে হামলা। হাসপাতালের বাইরে এখনো পড়ে আছে তাদের লাশ। তবুও লাশ উদ্ধারে কেউ এগিয়ে যেতে পারছেন না। গাজার সবচেয়ে বড় চিকিৎসাকেন্দ্র আল-শিফা হাসপাতালের অবরুদ্ধ অবস্থা নিয়ে যুগান্তরকে লিখলেন আল-শিফা হাসপাতালের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ আবু সেলমেয়া ও গাজার হামাস সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ডা. আশরাফ আল কুদরা

গত তিনদিন ধরেই আল-শিফা হাসপাতালে হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। তবে শনিবার রাত থেকেই একেবারে ঘিরে রেখেছে আল-শিফা। কিছুক্ষণ পরপরই হামলা চালাচ্ছে। এই বর্ণনাগুলো যখন আপনাকে দিচ্ছি তার কয়েক মিনিট আগেও ড্রোন থেকে গুলি চালিয়েছে হাসপাতালের ভেতরে। তারও খানিক আগে (ঘণ্টাখানিক) হাসপাতালের অস্ত্রোপচারের সম্প্রসারিত ভবনের পঞ্চম তলায়ও হামলা চালিয়েছে। নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটেও আঘাত করেছে ইসরাইলের আর্টিলারি বাহিনীর মর্টার শেল। হয়তো কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক মিনিটের মধ্যেই মৃত্যুপুরীতে পরিণত হবে আল-শিফা। কাল নতুন আরেকটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি বা সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য বেঁচে থাকব কি-না জানি না (ডা. মোহাম্মদ আবু সেলমেয়া)! নতুন কোনো রোগী বা আহত কাউকে চিকিৎসার সৌভাগ্য হবে কি-না তা-ও জানি না!

বিশ্ব থেকে এখন পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন আল-শিফা হাসপাতাল। কোনো পানি নেই, খাবার নেই, বিদ্যুৎ নেই অথবা ইন্টারনেট নেই। সেনাবাহিনী হাসপাতাল ঘিরে রাখায় বাইরে থেকে কোনো খাবারও সরবরাহ করা যাচ্ছে না। বিদ্যুতের অভাবে আইসিইউতে থাকা ৪ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। স্তূপ করে রাখা হয়েছে প্রায় ১০০ লাশ। হাসপাতালের বাগানে তাদের দাফনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে হামলার ভয়ে দাফনের কাজেও হাত দিতে পারছেন না ভেতরে থাকা সদস্যরা।

আল-শিফা হাসপাতালে থাকা রোগীরা মুহূর্তের মধ্যে মারা যাচ্ছেন। হামলায় নিহত হচ্ছেন ইনকিউবেটরে থাকা শিশুসহ অন্য আহতরা। নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুকে সাহায্য করতে ইনকিউবেটরে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিলেন মেডিকেল ক্রুর একজন সদস্য। সেই সময় তাকেও গুলি করে হত্যা করেছে ইসরাইলের সেনাবাহিনী (ডা. আশরাফ আল কুদরা)। 

হাসপাতাল থেকে বাইরেও বের হতে পারছেন না কেউ। আল-শিফা হাসপাতালে আশ্রয় নেওয়া কিছু বাস্তুচ্যুত পালানোর চেষ্টা করলে হাসপাতালের গেটের কাছে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। এ সময় নিহত হয়েছেন কয়েক ডজন মানুষ।  আইসিইউতে থাকা অন্য রোগীদেরও মৃত্যু হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্পেশাল বেবি কেয়ার ইউনিটে থাকা এক (এসসিবিইউ) নবজাতকও রয়েছে এই তালিকায়।

ইসরাইলের হামলায় কৃত্রিম কিডনি ইউনিটে আগুন লেগেছে। পানি না থাকায় বালু দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্সগুলোকেও হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল থেকে কোনো আহতদের হাসপাতালে নিয়ে আসা যাচ্ছে না। হাসপাতালের সামনের গেটগুলোও আক্রমণ করে ধ্বংস করা হচ্ছে।  
হাসপাতালের গেটসহ বিভিন্ন আঙিনায়ও আশ্রয় নিয়েছিলেন রোগীসহ অন্যান্য বাস্ত্যুচ্যুত ফিলিস্তিনি। এছাড়াও উত্তর গাজার ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের আশপাশেও হামলা অব্যাহত রয়েছে। হাসপাতালের কাছাকাছি বিভিন্ন আবাসিক ভবন লক্ষ্য করে কয়েক ডজন বিমান হামলা চালানো হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম