গাজায় এক ফোঁটা পানি সংগ্রহ করাও অগ্নিপরীক্ষা
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:৪০ পিএম
বেঁচে থাকতে কোনো মৌলিক চাহিদার সরবরাহ ছাড়াই প্রতিদিন লড়াই করছেন গাজাবাসী। এক মগ পানির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তারা। অনেক সময় এক ফোঁটা পানি সংগ্রহ করাও ‘প্রতিদিনের জন্য একটি অগ্নিপরীক্ষা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাধ্য হয়ে পান করতে হচ্ছে অনিরাপদ পানি। ছড়িয়ে পড়ছে পেটের বিভিন্ন রোগসহ অন্যান্য অসুখ। গাজার এ পরিস্থিতিতে গোসল করাও হয়ে উঠেছে রীতিমতো একটি বিলাসিতা। গোসল করতে না পেরে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন বাসিন্দারা। এপি।
হামাসের অভিযানের পরপরই ইসরাইল গাজায় পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। পরপর আক্রমণ করছে পয়োনিষ্কাশন, পানি বিশুদ্ধকরণসহ অন্যান্য পানি সরবরাহের সুবিধাগুলোতে।
গাজার একজন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি ওসামা আল-বাজ। উত্তর গাজা থেকে তিনি দক্ষিণ গাজায় চলে এসেছিলেন ১৩ অক্টোবর। থাকছেন বেশ কিছু বয়স্ক আর ছয়জন ছোট শিশুর সঙ্গে ২০ জনের একটি দলে। আল-বাজ বলেন, ‘খাবার পানি অথবা কোনো কিছু পরিষ্কারের জন্যও পানি পাওয়া এখানে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামান্য পরিমাণে খাবার পানি খোঁজে পাওয়া এখন প্রতিদিনের অগ্নিপরীক্ষায় পরিণত হয়েছে।’
এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে একটি ‘সম্মিলিত শাস্তি’ হিসাবে অভিহিত করেছেন তিনি।
আল-বাজ আরও বলেন, ‘আমরা পানি সংগ্রহ করার সুযোগ খুব কম পাই। আর একটু সুযোগ পেলেই বালতি অথবা যে কোনো পাত্র নিয়ে ছুটে যাই। পানি পাওয়ার প্রতিটি সুযোগকেই আমাদের কাছে শেষ সুযোগ বলে মনে হয়।’
পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে তারা বয়স্ক, অসুস্থ অথবা শিশুদের অগ্রাধিকার দেন বলে জানান। আর অনিরাপদ পানি খেয়ে অন্যরা ডিহাইড্রেশন থেকে শুরু করে পেটের অসুস্থতা ও ডায়রিয়ার মতো সমস্যায় ভুগছেন বলে জানান। আর বাজের পরিবারের জন্য গোসল করাও এক ধরনের ‘বিলাসিতা’ হয়ে উঠেছে বলে উলেখ করেন তিনি। কারণ, তাদের শৌচাগার পরিষ্কার করার মতোই পর্যাপ্ত পানি তাদের কাছে নেই।
গাজা সিটি থেকে প্রথমে দক্ষিণের আল-মাগাজি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন উইসাম। তিনি বলেন, ‘পানির অভাবে শৌচাগারে যাওয়াও একটি কঠিন কাজ ছিল।’ যতটুকু পানি পাওয়া যেত ততটুকু সবাই যতটা সম্ভব খুব কম পরিমাণে ব্যবহার করতেন। এমনকি যতটা সম্ভব তারা শৌচাগারে যাওয়া এড়ানোর চেষ্টা করতেন বলেও জানান। কম পরিমাণ পানি ব্যবহার করে সেখানে শুধু শিশুদের গোসল করানো হতো বলে উল্লেখ করেন তিনি।
উইসাম পরবর্তী সময়ে আশ্রয় নিয়েছেন উত্তর গাজার আল-কুদস হাসপাতালে। সেখানেও পরিষ্কার পানি খোঁজে পাওয়া প্রায় দুঃসাধ্য। হাসপাতালটিতে নেই কোনো স্যানিটেশন সুবিধা। শত শত মানুষ ব্যবহার করছেন শুধু একটি সাধারণ বাথরুম। হাসপাতালটি এখন রোগের প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল হতে পারে বলে মনে করেন উইসাম।
গাজা থেকে স্থানীয় ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক মোহাম্মদ আল-হাজ্জার বলেন, এখানে মানুষ পানি পান করছেন, তা গোসল অথবা থালা-বাসন পরিষ্কার করা অথবা অজু করার জন্যও কখনো কখনো উপযুক্ত নয়।
আল-হাজ্জার বলেন, ‘এই পানি শরীরের যে কোনো অংশে ব্যবহার করার সঙ্গে সঙ্গে আমার ত্বকে প্রদাহ দেখা দেয়। মাথা থেকে শুরু করে হাতে-পায়ে সবখানেই চুলকানি শুরু হয়।’ হাজ্জার পরিবারের সবাই একই সমস্যায় ভুগছেন বলে জানান তিনি। বলেন, আমার স্ত্রীর জ্বর ও শরীরে হলুদ রঙের ছোপ ছোপ দাগ দেখা দিতে শুরু করেছে।’ অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার কোনো উপায় নেই তাদের। যতটা সম্ভব নিজেরাই চিকিৎসা করছেন আল-হাজ্জারের পরিবার।