Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

‘আগুনের গোলায়’ পরিণত গাজায় নিহত ৩৭৭

স্থল অভিযানে অন্ধকার গাজা, বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:৪৯ পিএম

স্থল অভিযানে অন্ধকার গাজা, বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বিস্তৃত পরিসরে নজিরবিহীন হামলা শুরু করেছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। অব্যাহত হামলার ২২তম দিনে শুক্রবার রাত থেকে বিমান হামলা জোরদারের পাশাপাশি স্থল হামলাও জোরদার করেছে। এ পরিস্থিতিতে পুরোপুরি বিধ্বস্ত গাজার টেলিফোন ও ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা। অন্ধকার গাজা এখন সারা পৃথিবীর সঙ্গে পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় গাজার বিভিন্ন স্থানে হামাসের সঙ্গে ইসরাইলি সেনাদের মধ্যে লড়াই চলছে বলে জানা গেছে। এছাড়া হামাসের পক্ষ থেকেও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ইসরাইলের বাহিনীকে মোকাবিলা করতে তারা পুরোপুরি প্রস্তুত। খবর আলজাজিরা, রয়টার্স, এপি, আনাদুলু, মিডল ইস্ট মনিটর, স্কাই নিউজের। 

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় শুক্রবার রাতে ১৫০টি স্থাপনা লক্ষ্য করে নজিরবিহীন বোমা হামলা শুরুর পর সেখানে ইসরাইলের সেনারা ঢুকে পড়েছে। এসব সেনা ট্যাংক এবং অন্যান্য সাঁজোয়া যান নিয়ে গাজার ভেতর হামলা শুরু করেছে। ওই সময় ইসরাইলি বাহিনীকে প্রতিহত করতে তাদের সঙ্গে লড়াইয়ে লিপ্ত হয় হামাসের সদস্যরাও। শুক্রবার সন্ধ্যায় এক ব্রিফিংয়ে আইডিএফ মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, কিছুদিন ধরে চালানো হামলার পাশাপাশি আজ রাতে স্থলবাহিনী বিস্তৃত পরিসরে তাদের অভিযান শুরু করছে। তিনি জানান, ইসরাইলি বিমানবাহিনী হামাসের তৈরি করা টানেলগুলোর ওপর ও অন্যান্য অবকাঠামোতে ব্যাপক বোমাবর্ষণ করেছে। শনিবার হ্যাগারি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘পদাতিক, সাঁজোয়া, প্রকৌশল এবং আর্টিলারি বাহিনী এ সামরিক অভিযানে অংশ নিচ্ছে। একই সঙ্গে ইসরাইলি বিমান থেকে ভারী গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে।’ তিনি জানান, ইসরাইলি সেনাবাহিনী এখনো লড়াইয়ের মাঠে আছে এবং যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। যৌথ সেনা ও গোয়েন্দা অভিযানে হামাসের নৌ ও বিমানবাহিনীর কমান্ডাররা নিহত হয়েছেন। হ্যাগারি বলেন, ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের নির্মূল করে যুদ্ধে ব্যাপক অগ্রগতি লাভ করেছে সেনাবাহিনী। এখন শত্র“রা দুর্বল হয়ে গেছে। এটা সেনাবাহিনীর লড়াইকে সহজ করে তুলেছে। তিনি গাজার বেসামরিক বাসিন্দাদের দক্ষিণে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য আবারও আহ্বান জানিয়েছেন। এক্স এ দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এ ভয়াবহ সহিংসতা শেষ হওয়ার পর উত্তর গাজার বাসিন্দারা আবার তাদের বাড়িঘরে ফিরে আসতে পারবেন। 

সেনাবাহিনী বলেছে, শুক্রবার রাতে প্রায় ১০০ জেটবিমান শত শত লক্ষ্যবস্তু শত শত বোমাবর্ষণের মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়েছে। ইসরাইলের বিমানবাহিনী বলছে, এ অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত এফ-১৬এস, এফ-১৫সি ঈগলস এবং এফ-১৫ই স্টাইক ঈগল বিমানের মাধ্যমে হামলা চালানো হচ্ছে। 

গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, গাজার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায়ও ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী ও হামাসের সদস্যদের মধ্যে লড়াই হচ্ছিল। ওই সময় হামাসের মেশিনগান ও ইসরাইলের ট্যাংক হামলার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। সেখানে ইসরাইলের বিমানও যুগপৎভাবে হামলা চালাচ্ছিল।

শুক্রবার রাতে ইসরাইলি বাহিনীর অব্যাহত বোমা হামলায় গাজার কয়েকটি এলাকার সব বাড়িঘর একেবারে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে বলে জানিয়েছে উদ্ধারকারী সংস্থা গাজা সিভিল ডিফেন্স। সংস্থার মুখপাত্র বলেছেন, ‘রাতব্যাপী চালানো হামলায় কয়েকশ ভবন এবং বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং কয়েক হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই তীব্র বোমা হামলা গাজার চিত্র পালটে দিয়েছে।’ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বেশিরভাগ হামলা হয়েছে গাজার উত্তর দিকের জাবালিয়ায় অবস্থিত আল-শিফা ও ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের আশপাশে। বোমা হামলায় গাজার বিভিন্ন সড়কে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে।

গাজায় অবরোধের নতুন মাত্রা হিসাবে শুক্রবার ইসরাইলের বিমান হামলায় অন্ধকারে নিমজ্জিত গাজায় ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্কসহ সব ধরনের যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে গাজার সঙ্গে এখন সারা বিশ্বের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফিলিস্তিনি টেলিযোগাযোগ সংস্থা জাওয়াল বলেছে, তাদের মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গাজার বৃহত্তম টেলিযোগাযোগ সেবাদানকারী প্যাল্টেল জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় সব ইন্টারনেট পরিষেবা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এর মাধ্যমে বহির্বিশ্বের সঙ্গে গাজার যোগাযোগের সর্বশেষ উপায়ও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইন্টারনেট ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকার কারণে প্রয়োজনে ফিলিস্তিনিরা এখন অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে পারছেন না। 

ইসরাইলের হামলার কবলে পড়া ব্যক্তিরা উদ্ধারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারছেন না। তথ্য পাঠাতে পারছেন না সংবাদমাধ্যমকর্মীরা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং ত্রাণ সংস্থার পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিধ্বস্ত হওয়ায় তারা গাজায় কারও সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারছেন না। ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি বলেছে, গাজায় আমরা কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। আমাদের মাঠকর্মীদের সঙ্গে পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, ইন্টারনেট বন্ধ করা মানে হলো, নৃশংসতাকে আড়াল করা। গাজায় ত্রাণ সরবরাহকারী বিভিন্ন সংস্থা এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছে একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা। রেড ক্রিসেন্ট, এমএসএফসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা বলছে, গাজায় কর্মরত কর্মীদের সঙ্গে তারা কোনো যোগাযোগ করতে পারছে না। 

শুক্রবার রাতে ইসরাইলের বিমান হামলায় হতাহতের ব্যাপারে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল কুদরা জানিয়েছেন, ইসরাইলের এযাবৎকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান হামলা গাজাকে ‘আগুনের গোলায়’ পরিণত করেছে। এতে ৩৭৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ হামলা গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে একেবারে গুঁড়িয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ নিয়ে মোট নিহতের সংখ্যা ৩৫০০-এর বেশি শিশুসহ ৭,৭০৩ জনে উন্নীত হয়েছে।

এদিকে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ ওয়ার্ক এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজি (আনরোয়া) জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় গাজায় নিহত হয়েছেন ১৪ জন জাতিসংঘ কর্মী। এ নিয়ে গত তিন সপ্তাহে গাজায় জাতিসংঘের নিহত কর্মকর্তা ও কর্মীদের মোট সংখ্যা পৌঁছেছে ৫৩ জনে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ইসরাইলি বিমানবাহিনীর গত ২১ দিনের বোমাবর্ষণে গাজায় ঘরবাড়ি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন অন্তত ১৪ লাখ ফিলিস্তিনি এবং তাদের মধ্যে প্রায় ৬ লাখ ৪০ হাজার গাজার ১৫০টি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। 

এদিকে আইডিএফ গাজায় স্থল অভিযান শুরু করলে তাদের সর্বশক্তি দিয়ে মোকাবিলা করতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস। শুক্রবার হামাসের রাজনৈতিক শাখার জ্যেষ্ঠ সদস্য ইজ্জত আল রিশাক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে এ তথ্য জানিয়েছেন।

শুক্রবার আইডিএফের মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারির গাজায় স্থল অভিযানের ব্যাপ্তি বাড়ানোর ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে টেলিগ্রামে পোস্ট দেন ইজ্জত আল রিশাক। হামাসের অবস্থান স্পষ্ট করে তিনি বলেন, ‘যদি নেতানিয়াহু আজ রাতে গাজায় প্রবেশের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে আমরা বলব- আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তিনি এবং তার সব সৈন্যকে গাজা ভূখণ্ড গিলে খাবে।’ হামাসের সামরিক শাখা আল কাসেম ব্রিগেডের টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া এক পোস্টে আরও বলা হয়েছে, ইসরাইলের গোলাবর্ষণের জবাবে শত শত রকেট ছুড়েছে হামাস যোদ্ধারা। শুক্রবার রাতে হামাসের সশস্ত্র শাখা আল কাসেম ব্রিগেড জানিয়েছে, গাজার উত্তরাঞ্চলীয় শহর বেইত হানোনুন ও মধ্যাঞ্চলীয় আল বুরেইজে তাদের যোদ্ধারা ইসরাইলি সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম