আল-কাসসাম ব্রিগেডে কারা? যাদের ভয়ে ঘুম হারাম ইসরাইলের
মো. নাদির হোসেন সবুজ
প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৩, ০২:৫৫ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে গড়ে তোলা একটি সংগঠনের নাম ‘আল-কাসসাম’ ব্রিগেড। ১৯৯০ সালের আগে হামাসের সামরিক শাখা সবার কাছে অপরিচিত ছিল। সে বছরই এ সামরিক শাখার কার্যক্রমে ঘুম হারাম হয়ে যায় ইসরাইলের। তাদের ভয়াবহ হামলায় অনেক ক্ষতি হয়।
ফিলিস্তিনের শহর ইয়াবাদে ১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ সেনাদের গুলিতে নিহত হন সিরিয়ান মুক্তি আন্দোলনের নেতা ‘এজ্জেদিন আল-কাসসামের’। তার নাম অনুসারে এ সামরিক শাখার নাম দেওয়া হয় ‘আল-কাসসাম’ ব্রিগেড। আল-কাসসাম ব্রিগেডের আগে এবং হামাস প্রতিষ্ঠার অনেক আগে থেকেই ভিন্ন নামে চলে আসছিল, যার মধ্যে রয়েছে— ‘ফিলিস্তিন মুজাহেদিন’ এবং ‘মাজদের’ মতো গ্রুপ।
‘আল-কাসসাম ব্রিগেড’ ১ জানুয়ারি ১৯৯২ সালে তাদের প্রথম অপারেশনের ঘোষণা দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। এ ব্রিগেডের একটি অংশ দরনসশান নামের একজন ইসরাইলি রাবাইকে (ইসরাইলি ধর্মযাজক) হত্যা করে। এক ঘোষণার মাধ্যমে হামাস আল-কাসসাম ব্রিগেডকে তাদের মিলিটারি শাখা হিসেবে ঘোষণা করে। শুরুতে সীমিতসংখ্যক সেনা নিয়ে শুরু করা এ ব্রিগেড এখন গাজার একটা বড় অংশজুড়ে আছে।
নিজেদের ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এক বুলেটিনে তারা জানান, কেবল গাজাতেই তাদের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। এটি একটি সত্যিকারের সেনাদল, যেটিতে সেনাদের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে কোম্পানি, ব্যাটালিয়ন এবং ব্রিগেড।
বুলেটিনে আরও জানানো হয়, নর্দার্ন গাজা ব্রিগেড, গাজা ব্রিগেড, সেন্ট্রাল গাজা ব্রিগেড এবং সাউদার্ন গাজা ব্রিগেড নামে আল-কাসসামের চারটি ব্রিগেড আছে,যার মূল সেনা সংখ্যা অন্তত ৫০-৬০ হাজার।
একটি পিস্তল নিয়ে শুরু হয় এ সামরিক শাখা। এর পর অস্ত্রাগারে যোগ হয় একটি রাইফেল এবং এর পরে নিজেদের তৈরি মেশিন গান। ধীরে ধীরে ‘হোয়াজ’-এর মতো বিস্ফোরক যন্ত্র, আত্মঘাতী হামলার জন্য বেল্ট এবং দূর থেকে হামলার জন্য বিস্ফোরক যন্ত্র যোগ হয়।
২০০১ সালের ২৬ অক্টোবর আল-কাসসাম ব্রিগেড স্থানীয়ভাবে তৈরি রকেট দিয়ে ইসরাইলে হামলা চালায়। এ রকেটের নাম ছিল ‘কাসসাম-১’। এ ঘটনা উল্লেখ করে টাইমস ম্যাগাজিন ‘একটি পুরনো রকেট যেটি মধ্যপ্রাচ্যকে বদলে দিতে পারে’ নামে শিরোনাম করে। ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যবহার করা হয় ‘কাসসাম-২’। এর মধ্যে ২০১২ সালের এক যুদ্ধে তারা এম-৭৫ ব্যবহার করে। এ সময় যুদ্ধে তারা ইসরাইলের হাইফা শহরকে লক্ষ্য করে আর-১৬৯ রকেট ব্যবহার করে।
আরও পড়ুন: ইসরাইলি হামলায় নিহতের আগে যে বার্তা দিয়ে গেছেন ফিলিস্তিনি কবি
বিশ্বের অন্যান্য দেশের সেনাবাহিনীর মতো আল-কাসসাম ব্রিগেডের ইঞ্জিনিয়ারিং, এরিয়াল, আর্টিলারি এবং আত্মঘাতী স্কোয়াড রয়েছে। ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসন মোকাবিলার জন্য আল-কাসসাম বিভিন্ন প্রযুক্তিগত উন্নতি সাধন করেছে। আল-কাসসামের মিলিটারি শাখা ‘আল-বাত্তার’, ‘আল-ইয়াসিন’ নামের কামান বিধ্বংসী গোলা তৈরি করে, যেটি ইসরাইলের সবচেয়ে শক্তিশালী মেরকাভা কামান ধ্বংস করতে সক্ষম।
এ ছাড়া তারা ইসরাইলের কিছু সেনাকে আটক করতে সক্ষম হয়, যার মধ্যে একজন ছিল গিলাত শালিত। ২০০৫ সালে কর্তব্য পালনরত অবস্থায় তারা তাকে আটক করে। ২০১১ সালে ১০৫০ জন বন্দি ফিলিস্তিনির বিনিময়ে তাকে মুক্তি দেয়। এই ব্রিগেড ২০০৮ ও ২০১২ সালে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের হামলার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ইসরাইলের অনেক ক্ষতি করে।
এবারের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ইসরাইলের অভ্যন্তরে দেড় হাজারের বেশি রকেট ছুড়েছে হামাসের আল কাসসাম ব্রিগেড।
আল-কাসসাম ব্রিগেডের বর্তমান প্রধানের নাম মোহাম্মদ-আল-দেইফ। ইসরাইল একাধিকবার তাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। তার নেতৃত্বেই আরও শক্তিশালী হয়ে ইসরাইলের ঘুম হারাম করে দিচ্ছে আল-কাসসাম ব্রিগেড।